ধর্ষণের মামলা থেকে নিস্তার পেতে প্রথমে বিয়ে করে ধর্ষণকারী। তারপর শুরু হয় পণের জন্য নির্যাতন। শেষে স্বামী পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। তাদের খপ্পর থেকে কোনও মতে পালান তরুণী। এখন সুবিচারের জন্য উত্তরপ্রদেশের গ্রাম থেকে বারবার ছুটে আসছেন মুর্শিদাবাদে। শনিবার কান্দি মহকুমা আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বছর তেইশের ওই তরুণী অভিযোগ করেন, তাঁর উপর নির্যাতনে অভিযুক্তদের ধরতে গড়িমসি করছে পুলিশ।
ভরতপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণী তাঁর স্বামী-সহ মোট আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। স্বামী পলাতক, বাকিরা আদালত থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন।
ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের মাসুন্দি এলাকার শের খান। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের অম্বেডকরনগরের সমারিয়া গ্রামের ওই তরুণী ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে গুড়গাঁও গিয়েছিলেন দিদির বাড়ি। তখন তিনি এম এ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। শের খানও তখন ওই তরুণীর দিদির বাড়ির সামনের মহল্লায় থাকত। কাজ করত একটি চামড়ার কারখানায়। অভিযোগ, বাড়িতে একা পেয়ে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে শের খান। তরুণীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাকে ধরে ফেলে। নিজেকে রাজ সাক্সেনা পরিচয় দিয়ে শের খান ওই তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সে কথা রাখেনি। পরে তার সহকর্মীদের কাছ থেকে ওই তরুণী শের খানের আসল পরিচয় জানতে পারেন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুর্শিদাবাদে এসে ওই যুবকের বিরুদ্ধে ভরতপুর থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
বেগতিক দেখে শের খান বহরমপুর আদালতে বিয়ে করলে ধর্ষণের মামলা তুলে নেন ওই তরুণী। কিন্তু এর পরেই ১০ লক্ষ টাকা পণ চেয়ে বসে শের খান ও তার পরিবারের লোকজন। ওই তরুণী বলেন, “বাবা সামান্য মুদির দোকান চালান। এত টাকা দিতে পারব না বলায় বাড়তে থাকে অত্যাচারের মাত্রা। আমাকে যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হত।”
ওই তরুণী বলেন, “বাবার বাড়িতে রেখে আসার নাম করে শের খান হাওড়া থেকে ট্রেনে ওঠে। তারপর সে উধাও হয়ে যায়। ট্রেনে চার যুবক আমাকে জানায় শের খান আমাকে তাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তাদের নজর এড়িয়ে ট্রেন থেকে নেমে রেল পুলিশকে সব জানাই। তাঁরাই আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।”
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে কান্দি মহকুমা আদালতে শের খান-সহ মোট আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ওই তরুণী। আদালত পুলিশকে ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয়। তবে শের খানকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবক ভিন রাজ্যে কাজ করে। সম্প্রতি বাড়িতে এসেছিল, তবে পুলিশ পৌঁছনোর আগেই সে চম্পট দেয়। তার হদিশ দিতে পারছেন না বাড়ির লোকেরা।
মাসুন্দি গ্রামের বাসিন্দারাও ওই তরুণীর দুর্ভোগের বিষয়টি জানেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, “বিয়ের পরে পণের জন্য চরম অশান্তি হত ওই পরিবারে। একবার পাড়ার লোক মেয়েটিকে মারের হাত থেকেও বাঁচায়। এখন মাঝেমাঝেই মেয়েটি গ্রামে আসে, মামলার বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে। ওর উপর সত্যিই খুব অবিচার হয়েছে।” বিচারের আশায় এখনও অবধি ছ’বার কান্দিতে এসেছেন ওই তরুণী। সঙ্গী তাঁর কাকা। প্রতিবারই কান্দিতে একটি লজ ভাড়া করে থাকেন তিনি। আর কত বার উত্তরপ্রদেশের গ্রাম থেকে আসতে হবে তাঁকে? কান্দির এসডিপিও সন্দীপ সেন বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।” কান্দির আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে এ দিন ওই তরুণী অবশ্য বলেন, “শের খানের কঠোর শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।” |