একটু দূর থেকেই কানে এল ভিতরে বেশ হইচই চলছে। বাইরে যে নিরাপত্তারক্ষী দাঁড়িয়ে, তিনিও মিটিমিটি হাসছিলেন সে দিকে তাকিয়ে। কাচের দরজার এ পার থেকে দেখা ও মৃদু আওয়াজে শোনা গেল, পিতা-পুত্রের সরস মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্য এবং অট্টহাস্যয় রীতিমতো সরগরম ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের টিভি কমেন্ট্রি বক্স। মাঠে তখন ৪০ বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই রঞ্জির কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রমশ হারের দিকে ঝুঁকলে কী হবে, টিভির বক্সে রীতিমতো উৎসবের মেজাজ।
লাঞ্চে যখন বেরিয়ে এলেন পিতা-পুত্র ধারাভাষ্যকার-- সুনীল ও রোহন গাওস্কর, তখনও তাঁরা তেমনই মেজাজে। কিংবদন্তি ভারতীয় ওপেনার বললেন, “রোহনের সঙ্গে কমেন্ট্রি করার এটাই তো সুবিধা। আমি ওর পিছনে লাগতে পারি। পাল্টা ও কিন্তু আমার পিছনে লাগতে পারবে না। যতই হোক বাবা তো। অন্যদের সঙ্গে কমেন্ট্রি করার এই এক সমস্যা। কারও সঙ্গে খুনসুটি করতে গেলে সে-ও আমার পিছনে পড়ে যেতে পারে।” পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রোহন হাসতে হাসতে বললেন, “ড্যাড এখন পর্যন্ত আমাকে খুব অস্বস্তিতে ফেলার মতো পিছনে লাগেনি। ম্যাচ শুরুর আগেই বলে দিয়েছি, বাইরে যা করার করো। কমেন্ট্রি বক্সে বসে কিন্তু আমার ইজ্জতের দফা রফা কোরো না, প্লিজ।” |
ওয়াংখেড়েতে ধারাভাষ্যকার পিতা-পুত্র। শনিবার। ছবি: রাজীব ঘোষ। |
তবু ধারাভাষ্যকার হিসেবে ‘পার্টনারশিপ’-এর শুরুতেই ছেলেকে ‘চিমটি’ কেটে বলে বসেন, “রোহন, তুমি কিন্তু কখনও মুম্বইয়ের রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলে না।” বক্সের বাইরে বেরিয়ে এসে অবশ্য এর জন্য ‘সরি’ বলে নেন সানি। তাঁর বক্তব্য, “ও আমাকে যদি পাল্টা বলত, ইডেন গার্ডেন্সে তোমার চেয়ে বেশি রান আমি করেছি, তা হলে আমার কিছু বলার থাকত না। কিন্তু রোহন তা বলেনি। ও শুধু ভদ্র বাবার ভদ্র ছেলেই নয়, ওবিডিয়েন্ট স্টুডেন্টও।”
কমেন্ট্রি করতে করতে ভাল ছাত্রটি কী শিখলেন? “অনেক কিছু”, বলছিলেন রোহন, “শুধু কমেন্ট্রি করতে করতে কেন, যখনই দেখা হয়, একসঙ্গে বসি, তখনই শিখি। সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা হল, বক্সে সবসময় কাম অ্যান্ড কুল থাকো, অলওয়েজ রিল্যাক্সড। কখনও উত্তেজনা বা চাপ অনুভব কোরো না। সে যতই উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত হোক না কেন।” ছেলের ‘শিক্ষা’র দায়িত্ব নেওয়া সিনিয়র গাওস্কর বললেন, “রিচি বেনো আমাকে যে ভাবে কমেন্ট্রি করা শিখিয়েছিলেন, তেমন ভাবেই রোহনকে শেখানোর চেষ্টা করি। আমি তো ওর কমেন্ট্রি খুব একটা শুনিনি। আগে ওর সম্পর্কে অন্যদের কাছে শুনেছিলাম, ভালই করছে। এখানে দেখছি, সত্যিই তাই। ও আরও উন্নতি করতে পারবে বলেই মনে হয় আমার।” তবে এটাই প্রথম নয়, বাবার সঙ্গে এর আগেও কমেন্ট্রি বক্সে বসেছেন রোহন। বললেন, “রাঁচিতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ করেছি একসঙ্গে। বেশ ভাল অভিজ্ঞতা। তবে বাবা বলে নয়, সুনীল গাওস্কর পাশে বসে কমেন্ট্রি করছে বলেই ব্যাপারটা স্পেশাল।”
কথাগুলো বলতে বলতেই খবর এল ইডেনে বাংলা ২৬৭-তে অল আউট। বাংলার প্রাক্তন ব্যাটসম্যান বললেন, “আমার মন বলছে বাংলাই জিতবে। জানি না উইকেটের কী অবস্থা। উইকেট যদি একেবারে পাটা না হয়ে যায়, তা হলে বাংলার যা বোলিং, তাতে জেতা উচিত।” |