ঐতিহাসিক মঞ্চের ঢিল ছোড়া দূরত্বেই আরব সাগর। কিন্তু শনিবার রাতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক পুরস্কারের মঞ্চ ভাসল আবেগের সাগরে। যখন ধোনির হাতে উঠল ১৯৮৩-র বিশ্বকাপ ও কপিলের হাতে ২০১২-য় জেতা কাপ।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অনুষ্ঠান অন্য মাত্রা পেয়ে গেল যখন একই মঞ্চে উঠলেন দুই বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। শুধু তা-ই নয়। একই মঞ্চে দুই বিশ্বকাপও। ধোনি ও কপিলের কাপ বদলের ঐতিহাসিক দৃশ্য যখন চাক্ষুস করছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘হু-জ হু’-রা, তখন বাঁধভাঙা আবেগ তাঁদের চোখেমুখে স্পষ্ট। চিত্র সাংবাদিকদের ফ্ল্যাশের ঝলকানিতে চোখ খুলে রাখাই কঠিন। ইতিহাস ও বর্তমানের এই মিলনমেলা দর্শকের আসনে বসে কে দেখলেন না? সচিন তেন্ডুলকর, সুনীল গাওস্কর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রবি শাস্ত্রী, সৈয়দ কিরমানি, অনিল কুম্বলে, অংশুমান গায়কোয়াড় থেকে শুরু করে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে থাকা আরও বহু নাম। ধোনির সঙ্গে ছিলেন তাঁর বর্তমান সতীর্থরা। রীতিমতো চাঁদের হাট মায়ানগরীর শনিবাসরীয় সন্ধ্যায়। |
সেই স্মরণীয় মুহূর্ত। পাল্টাপাল্টি হচ্ছে বিশ্বকাপ। শনিবার মুম্বইয়ে। ছবি: টুইটার। |
একটু আগেই যে ভারতীয় ক্রিকেটে সারা জীবনের অবদানের জন্য সি কে নাইডু পুরস্কার পেয়েছেন, তা যেন প্রায় ভুলতেই বসেছিলেন কপিল। অনুষ্ঠানের পর ভিড়ে ঠাসা মঞ্চের সামনে অভিনন্দন কুড়োতে কুড়োতে বলছিলেন, “পুরস্কারটা তো বড় ব্যাপারই। কিন্তু সঙ্গে যেটা হল, সেটাই বা কম কী? এমন একটা কাণ্ড ঘটানোর জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ। চিরকাল মনে রাখব দিনটা।” একেবারে সামনের সারিতে বসে বসে ঘটনাটা উপভোগ করলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। একটা হারের জন্য যাঁর এই মঞ্চে ওঠা হল না। “গ্রেট মোমেন্ট, গ্রেট মোমেন্ট”, বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন। কপিলের সঙ্গে বেশ খানিকক্ষণ ধরে কথা বলছিলেন সদ্য প্রাক্তন সচিন তেন্ডুলকর। সচিনকে দেখে কপিলকে বলতে শোনা গেল, “এই পুরস্কার নেওয়ার জন্য তোমার ডাক আসবে খুব তাড়াতাড়িই। ভারতীয় ক্রিকেটে তোমার অ্যাচিভমেন্টই তো সবচেয়ে বেশি।” ‘আমি ফাস্ট বোলার। আমার আরও বেশি খাবার চাই।’ক্রিকেটজীবনের শুরুতে কোচের কাছে কপিল দেবের এই দাবির বহুচর্চিত গল্প যখন বলছিলেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক, তখন জায়ান্ট স্ক্রিনে কপিলের যে মুখের ছবিটা ভেসে ওঠে, তাতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ার অভিব্যক্তিটা স্পষ্ট। পরে স্বীকারও করলেন তা। বললেন, “ওই মুহূর্তে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়াটা কি অস্বাভাবিক?” বোর্ড প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসনের হাত থেকে ২৫ লক্ষ টাকার চেক ও স্মারক নিয়ে কপিল বললেন, “ধোনির দলকে শুভেচ্ছা জানাই। এই সম্মানের জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য বিষেন সিংহ বেদী, সুনীল গাওস্কর, ভেঙ্কটরাঘবন, শ্রীকান্ত, আজহারদেরও। যাদের নেতৃত্বে আমি খেলেছি আর যারা আমার নেতৃত্বে খেলেছে, সবার। ক্রিকেটে স্পিরিট বজায় রাখাটাই আমাদের আসল কাজ। কী ভাবে ক্রিকেটটা খেলি আমরা, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই স্পিরিটটা বজায় রাখতে হবে সবাইকে।”
২০১২-১৩ মরসুমে ৪২ উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেরা ভারতীয় ক্রিকেটারের পলি উমরিগড় ট্রফি পেলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। গত বারের রঞ্জি ট্রফিতে সেরা অলরাউন্ডার অভিষেক নায়ার পেলেন লালা অমরনাথ ট্রফি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুই টেস্টেই সেঞ্চুরি ও ২৮৮ রানের জন্য রোহিত শর্মা পেলেন দিলীপ সরদেশাই পুরস্কার। সেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের পুরস্কার নিয়ে অশ্বিন বলেন, “আমার স্বপ্ন সত্যি হল। এ জন্য আমার সতীর্থদের কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি।”
তখনও অবশ্য কেউ জানেন না ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম চিরস্মরণীয় মুহূর্ত চোখের সামনে দেখা যাবে একটু পরেই। |