দু’বছরের আগেই গণধর্ষণের সাজা ঘোষণা হল। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী এক কিশোরীকে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করার অভিযোগে কিশোরীর প্রতিবেশী এক বৃদ্ধ ও তাঁর সহকর্মী দুই যুবককে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল রায়গঞ্জের ফাস্ট ট্র্যাক-২ আদালত। পাশাপাশি, সাজাপ্রাপ্তদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গণধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছিল। শুক্রবার রায়গঞ্জ জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী শেখর পাল জানান, গত মঙ্গলবার সাজাপ্রাপ্তদের দোষী সাব্যস্ত করার পর বুধবার বিচারক বিভূতি খেসাংয়ের রায় ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু ৬৫ পাতার ওই রায় ঘোষণা করতে বিচারকের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। তাই এ দিন বিচারক চূড়ান্তভাবে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
সাজাপ্রাপ্তদের নাম জ্যোতিষ ভৌমিক, সঞ্জিত সাহা ও অনিল সাহা। ৬৩ বছর বয়সী জ্যোতিষ ভৌমিকের বাড়ি কর্ণজোড়া বারোগন্ডা এলাকায়। ৩৬ ও ৩৩ বছর বয়সী সঞ্জিত ও অনিলের বাড়ি রায়গঞ্জের কাঞ্চনপল্লি ও শক্তিনগর এলাকায়। সাজাপ্রাপ্তেরা পরিবহণ কর্মীর কাজ করতেন। শেখরবাবু জানান, ওই কিশোরীকে সাজাপ্রাপ্তরা পরিকল্পনা করে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করেছে বলে আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। সাজাপ্রাপ্তদের আইনজীবী আশিস সরকারের দাবি, “আমরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়া এলাকার বাসিন্দা ১৩ বছর বয়সী ওই কিশোরীর বাড়িতে জ্যোতিষ ভৌমিকের দীর্ঘদিন যাতায়াত ছিল। ২০১২-র ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জ্যোতিষ ভৌমিক ওই কিশোরীকে রায়গঞ্জ স্টেশনে বেড়াতে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার জন্য কর্ণজোড়াগামী অটো ধরার জন্য সে ওই কিশোরীকে নিয়ে শিলিগুড়ি মোড় এলাকায় যায়। অটো না পেয়ে দু’জনে হেঁটেই ফিরছিল। রাস্তায় জ্যোতিষ ভৌমিক ওই কিশোরীকে বোগ্রাম এলাকার একটি কাঠমিলের পাশে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যায়। মোবাইলে বাকি দু’জনকে ডাকে। তিনজনে কিশোরীকে ধর্ষণ করে ভোরে শিলিগুড়ি মোড়ে ছেড়ে পালিয়ে যায়। ওই কিশোরী তার এক আত্মীয়কে সব জানায়। তা জানার পর পরিবারের লোকজন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ২০১২ সালের ৬ মার্চ পুলিশ জ্যোতিষ ভৌমিককে গ্রেফতার করে। পরে বাকি দু’জন গ্রেফতার হয়। ওই কিশোরী আদালতে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার পাশাপাশি ‘টিআই প্যারেডে’ সঞ্জিত ও অনিলকে সনাক্ত করে।
এ দিন সাজা ঘোষণা হওয়ার পর জ্যোতিষ ভৌমিক বলেন, “ও আমার নাতনির মতো। আমি চক্রান্তের শিকার হয়েছি।” সঞ্জিত ও অনিল বলে, “ধর্ষণের সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। বিনাদোষে আমাদের ফাঁসানো হয়েছে।” ওই কিশোরীর বাবা বলেন, “আমার মেয়ের এতবড় ক্ষতি করেছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়ায় খুশি। সাজা বহাল রাখতে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাব।” |