লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে কোচবিহারে বড় মাপের সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা বামফ্রন্ট। আজ শনিবার কোচবিহারে রাসমেলা মাঠে ওই সভায় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু থাকবেন। শুক্রবার ফ্রন্টের জেলা নেতারা একসঙ্গে রাসমেলা মাঠে গিয়ে মঞ্চ তৈরি থেকে প্রস্তুতির কাজে তদারকি করেন। সভাকে কেন্দ্র করে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছে জেলা পুলিশ। সভায় আসার পথে নানা এলাকায় বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হতে পারেন বলে দলের তরফে আশঙ্কা করা হয়েছে। বামেদের অভিযোগ, ইতিমধ্যে সভায় সমর্থকদের নিয়ে আসার জন্য নেওয়া বেশ কিছু গাড়ির কর্মীদের তৃণমূল সমর্থকরা হুমকি দিয়েছেন।
সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় শুক্রবার বলেন, “নিশিগঞ্জ, সিতাই, তুফানগঞ্জ ছাড়াও শীতলখুচি, সুটকাবাড়ি, ঘুঘুমারি সহ জেলার বেশ কিছু জায়গায় তৃণমূলের লোকেরা সভায় আসতে সমর্থকদের বাধা দিতে পারেন বলে আমরা একটি তালিকা করে পুলিশকে জানিয়েছি। বেশ কিছু গাড়ির কর্মীদের হুমকি দেওয়ার বিষয়টিও পুলিশে জানানো হয়েছে। যাতে গোলমাল না হয়, পুলিশের সেই দায়িত্ব নিতে হবে।” ফরওয়ার্ড ব্লক রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য উদয়ন গুহ বলেন, “রাজ্যে এমন একটি দল ক্ষমতায় যেখানে কর্মীদের ওপর নেত্রীর নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই কখন কী হবে বলা মুশকিল।”
তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এ দিন অবশ্য বামেদের নালিশ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “বাস্তবে সভায় মাঠ ভরানো মুশকিল হবে বুঝেই লজ্জা ঢাকতে অপপ্রচার করা হচ্ছে।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল এ দিন বলেন, “সভা যাতে নির্বিঘ্নে হয়, সে জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হাতে পেলে খতিয়ে দেখা হবে।” |
বামফ্রন্ট সূত্রেই জানা গিয়েছে, এই সমাবেশের জন্য সিপিএমের পক্ষ থেকে ৫০০টি বাস, ছোট গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ট্রাকও। এছাড়া দিনহাটার বিভিন্ন এলাকা থেকে সমর্থকরা ট্রেনে চড়ে কোচবিহারে আসবেন। কোচবিহার সদরের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ভ্যান, ভুটভুটির পাশাপাশি মিছিল করে সমর্থকদের আনার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। ২ টো নাগাদ সভা শুরুর আগে সমর্থকদের কোচবিহার পৌঁছনোর কথা ফলে সাধারণ যাত্রীরা যানবাহনের সমস্যায় ভোগান্তির মুখে পড়তে পারেন, এ আশঙ্কা করছেন।
ফরওয়ার্ড ব্লক কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ অবশ্য বলেছেন, “শনিবার অফিস বন্ধ থাকে। মানুষের ভোগান্তি এড়ানো কথা মাথায় রেখেই ছুটির দিনে আগাম কর্মসূচি মেনে সভা করা হচ্ছে।” সিপিএম জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, আমরা লক্ষাধিক মানুষকে সভায় আনতে চাইছি। সে কথা মাথায় রেখে দলীয় ভাবে পাঁচ শতাধিক বড় বাস নিতে হয়েছে।”
ফ্রন্ট সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলে গিয়েছে। বিধানসভা ভোটে ফব চারটি আসন পেলেও সিপিএম খাতা খুলতে পারেনি। এ বার বামেদের দখলে থাকা কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রটি দখলে রাখতে বাম শিবিরে এবার আগেভাগেই তৎপরতা শুরু হয়েছে। ফরওয়ার্ড ব্লক দীপক রায়কে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যানকে এনে বড় সভা করে কম-সমর্থকদের চাঙা করতে চাইছেন তারা। সেই সঙ্গে বড় জমায়েত করা গেলে ‘তৃণমূল’কেও বার্তা দেওয়া যাবে বলে মনে করছেন ফ্রন্ট নেতারা। |