ওই দশ মিনিটের ঘোর কাটছেই না তিন কন্যার
রাষ্ট্রপতি মঞ্চ ছেড়ে চলে গিয়েছেন আধঘণ্টা আগে। তখনও ঘোর কাটেনি ওদের। মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজনকেই বান্ধবীরা এসে জড়িয়ে ধরছে। বন্ধুরা গিয়ে তিনজনকে অভিনন্দন যাচ্ছে। কেউ জানতে চাইছে, রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল কোনও কথা বলেছেন? কেউ জানতে চায়, রাষ্ট্রপতির পাশে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ঠিক কেমন অনুভূতি হচ্ছিল? কিন্তু, অনুষ্কা, শ্রেয়শ্রী ও মৌমিতা ভাল করে কথাই বলতে পারছিল না। তিনজনই স্কুল ছাত্রী। একেবারেই সাধারণ পরিবারের পড়ুয়া। পড়াশোনা ও কথাবার্তা, উপস্থাপনায় বেশ ভাল বলে ওদের বাছাই করেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের ২১০০ ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে এমনকী প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির সম্পাদক ছাড়া ওই তিন ছাত্রীই চাঁচলের সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের ১২৫ বছর পূর্তি উৎসবের মঞ্চে ওঠার সুযোগ পেয়েছিল। ‘থালি-গার্ল’ হিসেবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলেই তাদের ওই থালিগার্ল হিসেবে মনোনয়নের কথা বলা হয়েছিল। তার পর থেকে উত্তেজনা আর আনন্দে কার্যত সারা রাত ঘুমোতে পারেনি ওরা। ওই তিন পড়ুয়ারও প্রাথমিক একটা ভীতি ছিল। সাবলীলভাবে নিজেদের কর্তব্য উতরে দিয়ে দিনের শেষে তারাই বন্ধু, প্রতিবেশী, পরিবারের লোকজন সহ স্কুল কর্তৃপক্ষের চোখের মণি। সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসরারুল হক বলেন, “মেধাবী ও তার পাশাপাশি চটপটে হওয়ায় উৎসব কমিটির তরফে ওই তিন পড়ুয়াকে থালি গার্ল হিসেবে মনোনীত করার সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়। ওরা সেই দায়িত্ব ভালোভাবেই উতরে দিয়েছে।”
(বাঁ দিক থেকে) মৌমিতা, শ্রেয়শ্রী ও অনুষ্কা। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন ছাত্রীর মধ্যে অনুষ্কা মজুমদার একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। শ্রেয়শ্রী থোকদার দ্বাদশ শ্রেণির কলা বিভাগ ও মৌমিতা থোকদার দ্বাদশের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগটিই কো-এড। এর আগে তিনজনই চাঁচল রাণী দাক্ষায়নি স্কুলে পড়াশুনা করত। স্কুলের ১২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আসবেন জেনে অন্যদের সঙ্গে আনন্দে মেতেছিল ওরাও। কিন্তু স্বপ্নেও ভাবেনি যে মঞ্চে একেবারে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের কাছাকাছি বেশ কিছুটা সময় কাটাতে পারবে তারা। অনুষ্কা ও মৌমিতার বাবা স্কুল শিক্ষক। শ্রেয়শ্রীর বাবা হিরিণপ্রসাদ পোদ্দারের চাঁচলে ব্যাটারি ও ইনভার্টার বিক্রির দোকান রয়েছে। প্রত্যেকের মা সাধারণ গৃহবধূ। এরকম সাধারণ পরিবারের তিন মেয়ে এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপালের কাছাকাছি থাকার সুযোগ পাওয়ায় খুশিতে ডগমগ করছেন তারাও।
বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে চাঁচলে অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছান রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপাল। সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী, উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম বেনজির নুর সহ চাঁচলের বিধায়ক আসিফ মেহবুব। রাষ্ট্রপতি-সহ অন্যদের বরণের পালা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই একে একে থালা হাতে মঞ্চে ঢুকল ওরা তিন জন। থালায় সিদ্ধেশ্বরী দেবীর স্মারক, শিবরাম রচনাবলী, উত্তরীয়, স্মারক। সেখান থেকে তা তুলে রাষ্ট্রপতি-সহ একে একে প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। দু’দফায় প্রায় মিনিট দশেক মঞ্চে থাকতে হয়েছিল ওই তিন পড়ুয়াকে। অনুষ্ঠানের পর অনুষ্কা, মৌমিতা ও শ্রেয়শ্রী প্রায় সমস্বরেই উত্তেজিত। তিনজনে একই সুরে বলল, “কাল বিকেলে যখন জানতে পারলাম, তখন থেকে উত্তেজনায় সারারাত ঘুমাতে পারিনি। খুব ভালো লাগছে। কখনও এমন সুযোগ হবে ভাবিনি।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.