রাষ্ট্রপতিকে পেয়ে পথও পেল চাঁচল
স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা ছিল বেহাল। বৃষ্টি হলে প্রতি পদে বিপদের শঙ্কা নিয়ে পথ চলতে হতো পড়ুয়াদের। পঞ্চায়েত-প্রশাসনের নানা স্তরে আবেদন করেও কাজ হয়নি। অবশেষে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সফরের সৌজন্যে সেই রাস্তা পাকা হল। স্কুল লাগোয়া আরও দু’টি রাস্তারও ভোল পাল্টাল প্রায় রাতারাতি। সে দুটি রাস্তাও কংক্রিটের হল। একে রাষ্ট্রপতির আগমন, উপরন্তু স্কুলে যাতায়াতের প্রায় ২০০ মিটার পথ-সহ ৩টি রাস্তা কংক্রিটের হওয়ায় পড়ুয়া ও অভিভাবকদের খুশি যেন উপচে পড়ল শুক্রবার দুপুরে। সাক্ষী রইল শতাব্দীপ্রাচীন মালদহের চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী ইন্সটিটিউশন।
এ দিন ওই স্কুলের ১২৫ বছর পূর্তি উৎসবের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে রাষ্ট্রপতি নিজের শিক্ষক জীবনের প্রসঙ্গ বারেবারে টেনে আনেন। তিনি বলেন, “আমি নিজে একজন শিক্ষক ছিলাম। শিক্ষকতা দিয়েই আমি জীবন শুরু করেছিলাম। আকস্মিকভাবে রাজনীতিতে না এলে শিক্ষাক্ষেত্রেই থাকতাম। শিক্ষক হিসাবে থাকতাম। আমি কলেজে পড়াতাম। আজও আমার সেই ফেলে আসা দিনগুলি মনে পড়ে। কিছুদিন আগে সেই কলেজে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, যে যদি রাজনীতিতে না আসতাম, কলেজেই যদি শিক্ষক থাকতাম, তবে কত ভাল হতো।” প্রণববাবুকে কাছ থেকে দেখে, তাঁর কথায় আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েন উপস্থিত সকলেই।
চাঁচলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী।
রয়েছেন সাংসদ মৌসম বেনজির নূরও। শুক্রবার মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
এ দিন নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৩৫ মিনিট পরে দুপুর ১ টা ৪৫ মিনিটে রাজ্যপাল কে আর নারায়ণনের সঙ্গে হেলিকপ্টারে চাঁচলে পৌঁছন প্রণববাবু। স্বাগত জানাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে হেলিপ্যাডে হাজির ছিলেন রাজ্যের পযর্টনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। এ দিন প্রণববাবু মালদহে কাটানো তাঁর অতীত জীবনের রাজনীতির কথা স্মৃতিচারণ করে বলেন, “মালদহে আমি অনেকবার এসেছি। মালদহের রাজনীতির সঙ্গে আমি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলাম। জেলার প্রতিটি রাজনৈতিক ক্ষেত্র আমার চেনা। ১৯৭৭ সালে মালদহ লোকসভা কেন্দ্রের আমি প্রার্থী ছিলাম। নিবার্চনে অবশ্য আমি পরাজিত হয়েছিলাম।”
সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি জানান, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ,উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা এই চারটি একসঙ্গে সমন্বয় ঘটাতে পারলে তবেই দেশে আরও এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, “নরওয়ে একটি খুব ছোট দেশ। সেখানে কয়েক লক্ষ মানুষের বাস। সেই দেশে যে সবচেয়ে গরিব মানুষের বার্ষিক আর্থিক উপার্জন ভারতীয় টাকায় এক কোটি টাকা। কেন নরওয়ে পেরেছে? পড়াশোনা, আবিষ্কার, গবেষণা এই তিনটি হাতিয়ার দিয়ে নরওয়ে পেরেছে। আমরা কেন পারব না? আমাদেরও এই তিনটি বিষয়ের উপরে জোর দিতে হবে।”
চাঁচলে রাষ্ট্রপতির আসার ফলে প্রশাসনিক সক্রিয়তায় পড়ুয়া তথা বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের ‘পথের দাবি’ খানিক মিটেছে। রাষ্ট্রপতির আসার আগে কলিগ্রাম গার্লস হাইস্কুলের পাশে কলিগ্রাম হাইস্কুল মাঠে তৈরি করা হয়েছিল হেলিপ্যাড। হেলিপ্যাড থেকে রাজ্য সড়কে ওঠার রাস্তাটি কংক্রিটের করা হয়। ইট বিছানো ওই ১০০ মিটার রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল হয়ে পড়েছিল। ওই রাস্তা দিয়েই গার্লস স্কুলের ছাত্রী-সহ শিক্ষিকারা যাতায়াত করতেন।
চাঁচল-আশাপুর রাজ্য সড়ক থেকে সিদ্ধেশ্বরী স্কুলগামী রাস্তাটিও দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল হয়ে পড়েছিল। ৩০০ মিটার ওই রাস্তা থেকে পিচের চাদর উধাও হওয়ার পর তাতে কোনওক্রমে ইটের টুকরো গুঁজে দেওয়া হয়েছিল। বৃষ্টি হলেই তাতে জল জমে পরিস্থিতি দুর্বিষহ হয়ে উঠত। স্কুলের পড়ুয়ারাই নয়, ওই পথ দিয়েই যেতে হয় কলেজ সহ মহকুমাশাসকের দফতরেও। ওই রাস্তাটিও কংক্রিটের তৈরি করা হয়েছে। ওই রাস্তা দিয়েই অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছয় রাষ্ট্রপতির কনভয়। কংক্রিট করা হয় সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের পিছনে ভারতীনগর দিয়ে আদালত যাওয়ার রাস্তাটিও।
চাঁচল কলেজের হস্টেল মাঠে হেলিপ্যাড হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে মাঠে যাওয়ার জন্য ১০০ মিটার রাস্তাটিও কংক্রিট দিয়ে তৈরি করে প্রশাসন। যদিও ওই মাঠে শেষপর্য়ন্ত হেলিপ্যাড করা হয়নি। ওই রাস্তাতে ইট বিছানো থাকলেও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় তা বেহাল হয়ে পড়েছিল। এ ছাড়াও হেলিপ্যাড থেকে চাঁচলে আসার দু’কিলোমিটার রাজ্য সড়কও তড়িঘড়ি করে সংস্কার করে পূর্ত দফতর।
এ দিন সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে স্মারক ও স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র প্রয়াত বিশিষ্ট সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর লেখা বই তুলে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি এ দিন শিবরাম চক্রবর্তী আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করেন। রাজ্যের পযর্টন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “এক সময়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কার্যক্ষেত্র ছিল মালদহ। এই প্রথম কোনও রাষ্ট্রপতি মালদহে এলেন।” আড়াইটে নাগাদ রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারে কলকাতা রওনা হন।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.