চার মাসের জন্য লক্ষ সিভিক পুলিশ নিয়োগ
ভোটের আগে চার মাসের জন্য লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান। তার পিছনে রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে বেরোবে দু’শো কোটি টাকার বেশি। কিন্তু তাতে আখেরে লাভ কী হবে, সেই প্রশ্ন উঠে পড়েছে সরকারেরই অন্দরে।
সামনে লোকসভা ভোট। তার আগে দৈনিক পারিশ্রমিক ভিত্তিতে চার মাসের জন্য ১ লক্ষ ৩০ হাজার সিভিক পুলিশ নিয়োগ করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, যার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২২১ কোটি টাকা। নিয়োগের ফাইল মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে। নবান্ন-সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র দফতর সব জেলার এসপি-কে নির্দেশ দিয়েছে, চলতি মাসেই নতুনদের নিয়োগ করে কাজে লাগাতে হবে, এবং মাসে অন্তত কুড়ি দিন কাজ দিতেই হবে।
অর্থাৎ, ভোটের সময়কাল (মে মাস) পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষের জন্য উপার্জনের বন্দোবস্ত। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনেরই একাংশে। তাদের বক্তব্য, এত খরচ করে চার মাসের জন্য সিভিক পুলিশ নিয়ে পুলিশবাহিনীর আদতে লাভ হবে না।
কেন? এই মহলের যুক্তি: টাকার অভাবে যেখানে বেশ ক’টি নতুন থানা তৈরির প্রস্তাব কার্যকর করা যাচ্ছে না, পুলিশে স্থায়ী নিয়োগ কার্যত স্তব্ধ, এবং বহু থানা পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে, সেখানে কিছু প্রশিক্ষণহীন লোকজনকে দৈনিক পারিশ্রমিক দিতে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দের অর্থ নেই। উৎসব-পার্বনে যানশাসন বা বিশেষ ক্ষেত্রে ভিড় সামলানো ছাড়া ওঁদের দিয়ে পুলিশবাহিনীর দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা হবে না বলে এই মহলের দাবি। এক জেলার এসপি-র কথায়, “অস্থায়ী সিভিক পুলিশ হিসেবে এখন যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের ট্র্যাফিক ছাড়া অন্য কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ন্যূনতম পুলিশ ট্রেনিং না-থাকায় রোজকার আইন-শৃঙ্খলার কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ওঁদের অধিকাংশ কার্যত দিনভর থানাতেই বসে থাকছেন।”
এমতাবস্থায় বিনা তালিমের আরও লক্ষাধিক সিভিক পুলিশ নিয়োগের যৌক্তিকতা কী, প্রশাসনের অনেকে তা বুঝতে পারছেন না। নতুন লোকজনকে অন্য কোনও কাজে লাগানো যাবে, এমন ইঙ্গিতও নেই। বরং স্বরাষ্ট্রের বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, নতুনদেরও ব্যবহার করা হবে শুধু উৎসবের সময়ে ও যানশাসনে।
স্বরাষ্ট্র-সূত্রের খবর: অর্থ দফতর বছরখানেক আগে পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি কমিশনারেটে ৫১০০ সিভিক পুলিশ নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছিল। তখনই প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে এক জন করে, মোট ৩৩৫১ জন ভিলেজ পুলিশ নিয়োগ করেছিলেন জেলার । পাহাড়েও ছ’শো সিভিক পুলিশ নেওয়া হয়। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এক জন সিভিক পুলিশকে ১৪১ টাকা ৮৫ পয়সা দৈনিক পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। ভিলেজ পুলিশপিছু দৈনিক বরাদ্দ ২৪০ টাকা। সব মিলিয়ে তাঁদের পিছনে রাজ্যের বার্ষিক ব্যয় বছরে ৫৮ কোটি টাকা।
এ বার এক ধাক্কায় বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াল ২২১ কোটি টাকা, তা-ও চার মাসের জন্য। প্রশাসনের একাংশের দাবি, মূলত লোকসভা ভোটের জন্য এ ভাবে একলপ্তে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ছেলেকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই তাদের কাজের মেয়াদ বেঁধে দেওয়া হয়েছে স্রেফ চার মাস!
বস্তুত যোগ্য কর্মী ও পরিকাঠামোর অভাবে পুলিশের হাল বেহাল। রাজ্য পুলিশ-সূত্রের খবর: থানায় থানায় বকেয়া তদন্তের পাহাড়। তদন্তের মূল দায়িত্ব যাঁদের, সেই এসআই-এর সংখ্যা কমতে কমতে এমন জায়গায় এসেছে যে, এক-এক জনের ঘাড়ে গড়ে ৫০-৬০টি মামলার ভার! মাস ছয়েক আগে অর্থ দফতর চারশো এসআই নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে বটে, কিন্তু প্রশিক্ষণ সেরে তাঁদের থানায় মোতায়েন করতে আরও কম করে এক বছর। এই এক বছরে অন্তত দেড়শো জন অবসর নেবেন।
ফলে সমস্যা বাড়বে বলেই মত পুলিশ-কর্তাদের অনেকে। ওঁদের হিসেবে, বর্তমানে এসআইয়ের সংখ্যাই অনুমোদিত পদের চেয়ে ১৬০০ কম। মহিলা এসআইয়ের অবস্থা আরও করুণ। রাজ্যে ৯২ জন মহিলা তদন্তকারী অফিসার। নয়া দশটি মহিলা থানার প্রস্তাব বহু দিন ফাইলবন্দি স্বরাষ্ট্র দফতরে। এক স্বরাষ্ট্র-কর্তা বলেন, “এসআইদের উপরে মামলার চাপ কমাতে ২০১০-এ প্রশাসনিক নির্দেশবলে এএসআই-কেও তদন্তের ক্ষমতা দিয়েছিল বাম সরকার। কিন্তু অধিকাংশ ওসি এএসআইদের দায়িত্ব দিতে চাইছেন না।”
অর্থাভাবে কিছু থানা ভাগের প্রস্তাবও আটকে। প্রশাসনের এক কর্তার মন্তব্য, “সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল, ২০১৪-র মধ্যে ৬৯টি নতুন থানা হবে। গত অর্থবর্ষে দশটার বেশি করা যায়নি।” নবান্নের খবর, রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডি সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র দফতরে ৩২টি থানার তালিকা পাঠিয়েছেন। পুরনো থানা ভেঙে নতুন করে সেগুলো তৈরি হওয়ার কথা। অথচ দেখা যাচ্ছে, এক-একটায় ১৯-২০ জনের বেশি লোক দেওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং সেই প্রস্তাবও আপাতত বিশ বাঁও জলে। এ হেন পরিস্থিতিতে চার মাসের জন্য এক টাকা খরচ করে অস্থায়ী নিয়োগের পরিবর্তে সরকার পুলিশে স্থায়ী শূন্য পদ পূরণের পথে হাঁটলে অন্তত নিচুতলায় অনেকটা সমস্যার সমাধান হতো বলে পুলিশ-কর্তাদের একাংশ আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। সরকারের কী বক্তব্য?
স্বরাষ্ট্র-কর্তারা বিষয়টিকে এ ভাবে দেখতে নারাজ। তাঁদের দাবি: বিভিন্ন শূন্য পদে স্থায়ী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কাজটা সময়সাপেক্ষ। এর সঙ্গে অস্থায়ী সিভিক পুলিশ নিয়োগের কোনও সম্পর্ক নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.