রমরমিয়ে চলছে চোলাই ঠেক, উদাসীন প্রশাসন
ঠেকেও শিক্ষা হয় না। সম্প্রতি তারাপীঠে বিষ মদ খেয়ে মৃত্যু হয়েছে আট জনের। সেই ঘটনা থেকেও শিক্ষা নেয়নি মুর্শিদাবাদের প্রশাসন।
দক্ষিণবঙ্গের এই জেলার আনাচে কানাচে চলছে চোলাইয়ের ঠেক। উত্তরে ফরাক্কা থেকে লালগোলা, দক্ষিণে বেলডাঙা থেকে বহরমপুর, জলঙ্গি, ডোমকল সর্বত্রই চোলাই মদের কারবারিদের রমরমা। জেলার খোদ আবগারি দফতরের সুপারিনটেনডেন্ট দেবাশিস বিশ্বাসও মানছেন চোলাইয়ের অস্তিত্বের কথা। তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘জেলার অন্তত ৭২টি জায়গায় চোলাই মদের কারবার চলে। সেই সব জায়গাতে হানা দেওয়া হয়েছে একাধিক বার। তবু সব ভাটি বন্ধ হয়নি।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর ফরাক্কা স্টেশনে ঢোকার মুখে দুই জায়গায় সকাল-সন্ধ্যায় চোলাই মদ বিক্রি হচ্ছে। অর্জুনপুরে কান্তর মোড়, এমনকী অর্জুনপুর হাইস্কুলের পাশে চোলাই মদের ঘাঁটি চলছে বহুদিন। ভবানীপুর থেকে হাজারপুর যেতে জাতীয় সড়কের পাশেই অবৈধ মদ বিক্রির কারবার তো বহুদিনের। দীর্ঘদিনের মদবিরোধী আন্দোলন ধুলিয়ানকে চোলাই মুক্ত করতে পারেনি। ঝাড়খণ্ড থেকে ভাসাই-পাইকর হয়ে দৈনিক কয়েক হাজার বোতল চোলাই ঢোকে সমশেরগঞ্জে। অন্তর্দীপা, সাহেবনগর, দোগাছি প্রভৃতি জায়গায় চা-পান দোকানে দেদার চোলাই বিকোচ্ছে। স্থানীয় নবীন সঙ্ঘের সম্পাদক মৈমুর আলি বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের পাকুড় থেকে মদ ঢুকছে গ্রামগুলিতে। ঝাড়খণ্ড থেকে আসা বিষ মদ খেয়েই তারাপীঠে আট জনের প্রাণ গিয়েছে। এখানেও যে এমনটা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? আমাদের ক্লাব এলাকায় মদ বিক্রি রুখতে উদ্যোগী হয়েছে। তবে গা জোয়ারি করলে অশান্তির হতে পারার আশঙ্কায় আমরা পুলিশের শরনাপন্ন হচ্ছি। পুলিশ তেমন সক্রিয় না হওয়ায় বন্ধ বিক্রিতে লাগাম পড়ানো যাচ্ছে না।” একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা জাহেদি হাসান বলেন, “গ্রামাঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের কাজ করতে সমস্যায় পড়তে হয়। পুলিশি নজরদারির পাশাপাশি এলাকায় মদ বিরোধী সচেতনতাও প্রয়োজন।”
ধুলিয়ান শহরে আবগারি দফতরের অফিস রয়েছে। দফতরের আধিকারিকদের নাকের ডগায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় রমরমিয়ে চলছে চোলাইয়ের কারবার। বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের কর্তা বাদশার আলি বলেন, “সর্বত্র চোলাইয়ের ঠেকে ছেয়ে গেছে। দরিদ্র বিড়ি শ্রমিকরা চোলাইয়ের নেশার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।” বহুদিন আগে রঘুনাথগঞ্জের গদাইপুর গ্রামে ঝাড়খণ্ড থেকে নকল বিদেশি মদ খেয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়। দু’জন দৃষ্টিশক্তি হারান। সে মদ ওই গ্রামে গিয়েছিল সুতির আহিরণ থেকে। একই বিষমদে সুতির মহেশাইলেও মৃত্যু হয় তিন জনের। সব এলাকাতেই মদবিরোধী সচেতনতা কিছুটা হলেও বেড়েছে।
জেলার আবগারি কর্তা দেবাশিসবাবুর অবশ্য সাফাই, ‘‘মুর্শিদাবাদ বড় জেলা। তাই অল্প-বিস্তর চোলাইয়ের ঠেক তো থাকবেই। তবে আবগারি দফতর কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে নেই। চলতি বছরে বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে ১৬৭ জনেরও বেশি চোলাই কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বহু মদ আটক করা হয়েছে। জেলায় ৩টি রেঞ্জ অফিস চলছে। সর্বত্রই একজন করে ডেপুটি কালেক্টর ও ৫ জন করে ওসি রয়েছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় হানা দেওয়া হচ্ছে। তবে বিষ মদের আশঙ্কা নেই।’’
জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘জেলায় মদ তৈরির ভাটি সেভাবে নেই। তবুও সব থানাকে এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ মদের ঠেকের বিরুদ্ধে পুলিশকে দ্রুত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.