পুর-নিরাপত্তারক্ষী কত, যাচাইয়ে এ বার সিএজি
হরের বিভিন্ন স্থানে পুরসভার যে সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী থাকার কথা, তা যে নেই, আগেই মালুম হয়েছিল পুর কমিশনার খলিল আহমেদের। এ বার তা যাচাই করতে নামছে কন্ট্রোলার অফ অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)।
প্রায় চার হাজার নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হয়েছে কলকাতা পুরসভায়। এর জন্য বছরে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা খরচ হয় পুর-প্রশাসনের। কিন্তু ওই সংখ্যক কর্মী সেখানে কাজ করছে কি না, এবং যে টাকা তাঁদের জন্য বরাদ্দ, তা তাঁরা পাচ্ছেন কি না এ সব নিয়ে বিশেষ অডিট শুরু করতে চায় ক্যাগ। সম্প্রতি পুর-প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দিয়েছেন ক্যাগের রেসিডেন্ট অডিট শাখা। ক্যাগ সূত্রের খবর, অনেক ভুয়ো কর্মী নিরাপত্তারক্ষীদের তালিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। সে সব খতিয়ে দেখতেই এই অডিট।
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই নিরাপত্তারক্ষীরা কেউই পুরসভার নিজস্ব কর্মী নন। তিনটি এজেন্সি থেকে পুরসভায় সরবরাহ করা হয়েছে তাঁদের। পুরসভার অন্দরে অভিযোগ, খাতায়-কলমে যত জন নিরাপত্তারক্ষীর জন্য প্রতি মাসে পয়সা গুনতে হচ্ছে, বাস্তবে সেই সংখ্যক কর্মী নেই। আর ওঁদের জন্য যে টাকা পুরসভা দিচ্ছে, তা-ও ওঁরা পাচ্ছেন না। এই সব তথ্য সামনে আসতেই নিরাপত্তারক্ষীর বিষয়ে তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় ক্যাগ।
ক্যাগের চিঠি পেয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে পুর-প্রশাসন। আসলে ওই নিরাপত্তারক্ষীদের অনেকেরই কাজকর্ম নিয়ে পুরসভায় বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এমনকী খোদ পুর কমিশনারও কয়েকটি স্থান পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছেন যে সংখ্যক রক্ষী থাকার কথা, তা নেই। একই ছবি ধরা পড়েছে কয়েকটি পুর-বাজারেও। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে ডেকে সতর্কও করেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। এক পুরকর্তার কথায়, “দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় ডিউটি করছেন অনেকেই। স্বভাবতই মৌরসীপাট্টা বেড়েছে। পুর-প্রশাসন জায়গা পরিবর্তন করাতে চেয়েছিল। তা করা যায়নি।”
কিন্তু কেন?
ওই অফিসার জানান, পুরসভার কাজ ছেড়ে অনেকেই দিনভর দলীয় কাজ করে থাকেন। তাই তাঁদের সরানোর প্রসঙ্গ উঠতেই বাদ সাধে ওই সব রাজনৈতিক দল। সে কারণে ইচ্ছে থাকলেও ওই সিদ্ধান্তে কঠোর হতে সাহস পাননি পুরকর্তারা। একই জায়গায় তাঁদের রাখতে বাধ্য হয়েছে পুর প্রশাসন। পুরসভার অন্দরমহলের খবর, মূলত কাউন্সিলরদের সুপারিশেই নিরাপত্তারক্ষীদের বাছাই করে এজেন্সি। তাই দলের প্রতি একটা আনুগত্য থেকেই যায় ওই কর্মীদের।
কিন্তু এত সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষীর প্রয়োজন আছে কি? পুরসভা সূত্রের খবর, এজেন্সি থেকে নিরাপত্তা রক্ষী নেওয়ার এই ব্যবস্থা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। এবং ক্রমশ বাড়ছে এমন কর্মীর সংখ্যা। এখন ১৪৪টি ওয়ার্ডের জন্য কলকাতা পুরসভার নিজস্ব কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার। এর উপর রয়েছে ১৩ হাজারেরও বেশি ১০০ দিনের ঠিকাকর্মী। এত সংখ্যক কর্মীর পরেও এজেন্সি সরবরাহ করে চার হাজার নিরাপত্তারক্ষী। যার মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগেই রয়েছে প্রায় ৭০০ জন, বাজার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সাড়ে পাঁচশো, পার্ক ও উদ্যানে চারশো এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরে চারশোর উপরে। যদিও বাজার ও সিভিল দফতরের একাধিক অফিসারের অভিযোগ, যত সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী থাকার কথা, প্রায়শই তা থাকে না। এক সময়ে ওই সংখ্যা কমানোর প্রচেষ্টাও নেয় পুর-প্রশাসন। কিন্তু কাউন্সিলরদের চাপে তা-ও করা যায়নি। আর যত বেশি কর্মী ঢোকানো যাবে, ততই লাভ এজেন্সির।
নিরাপত্তারক্ষী সরবরাহ করে কত টাকা কমিশন পায় এজেন্সি? পুরসভার এক অফিসার জানান, সহ-নিরাপত্তা অফিসার, সুপারভাইজার, সশস্ত্র এবং অস্ত্রহীন নিরাপত্তারক্ষী, ঝাড়ুদার মিলিয়ে পাঁচ ধরনের কর্মী সরবরাহ করে এজেন্সি। পুরসভা কর্মীপিছু মাসে যে টাকা দেয়, তার ১০ শতাংশ কমিশন পায় সংস্থা। ওই অফিসার জানান, একজন সহ-নিরাপত্তা অফিসারের বেতন প্রায় ১৪ হাজার ১১৪ টাকা। সেই কর্মীকে সরবরাহ করে ১৪০০ টাকার বেশি কমিশন পায় সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এক জন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীর বেতন প্রায় ১২ হাজার টাকা। কমিশনের পরিমাণ ১২০০ টাকা। আর নিরস্ত্র রক্ষী সরবরাহ করে মেলে এক হাজার টাকা। ক্যাগের বিশেষ অডিটে এ সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখা হবে জানা গিয়েছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.