বিমানের ভিড়ে ঠাঁই নেই কলকাতার আকাশে
যানজট আকাশ-পথেও!
কারণ, হঠাৎ হঠাৎ দখল হয়ে যায় কলকাতার আকাশের বিরাট এলাকা। যে একচিলতে জায়গা পড়ে থাকে, সেখান দিয়ে তড়িঘড়ি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করে এক ঝাঁক বিমান। প্রতি দিন কলকাতার উপর দিয়ে উড়ে যায় গড়ে ৯০০টি বিমান। এর মধ্যে বিদেশি বিমান ৭০০-র কাছাকাছি। গভীর রাতে এবং সকালে এক সঙ্গে
অনেকগুলি বিদেশি বিমান এসে পড়ে কলকাতার মাথার উপরে। প্রধানত অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে এই সমস্ত বিমান উড়ে যায় পশ্চিমে। আবার ইউরোপ বা মধ্য এশিয়া থেকে বিমান কলকাতার আকাশ পেরিয়ে উড়ে যায় পূর্বে। নিজেদের পছন্দ মতো উচ্চতায় দ্রুত উড়ে যেতে চায় সকলেই। কিন্তু এক সঙ্গে সবাইকে ছাড়া সম্ভব নয়। তাতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সেটা এড়াতে গিয়েই হয় যানজট।
কেবল পাইলট নন, কলকাতা বিমানবন্দরের ‘এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল’ (এটিসি)-তে বসা অফিসারেরাও এই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন সপ্তাহে অন্তত একটি দিন। একই সময়ে ৪০ থেকে ৪৫টি বিমান এসে ভিড় করে বোতলের গলার মতো সরু হয়ে যাওয়া আকাশ-পরিসরে। ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতায় অপেক্ষা করতে থাকে তারা, সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার জন্য।
কিন্তু কেন এই সমস্যা? বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ওই সময়ে ওড়িশার চাঁদিপুরে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কাজ চলে। আগে থেকে নোটিসও দেওয়া থাকে তার জন্য। ওই কাজ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তার জেরেই দীর্ঘ সময় আকাশের বিরাট এলাকা কার্যত প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দখলে চলে যায়। সেই এলাকা এড়িয়ে চলতে হয়।
এমনিতে কলকাতা থেকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন পর্যন্ত আকাশ কলকাতা এটিসি-র অধীনে। এটিসি-র এক অফিসার অবশ্য জানিয়েছেন, কলকাতা থেকে কলম্বো পর্যন্ত এলাকা দিয়েই প্রধানত বিমানগুলি উড়ে যায়। ওই এলাকাটা প্রায় ২০০০ কিলোমিটার। কিন্তু ইদানীং সপ্তাহে গড়ে এক দিন করে চাঁদিপুরে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কাজ চলছে। সমুদ্রতীর থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় সমুদ্রের দিকে। তখন কোনও বিমান সেই এলাকায় ঢুকে পড়লে তার ফল মারাত্মক হতে পারে। তাই নোটাম (নোটিস টু এয়ারমেন) জারি করে পরীক্ষার দিন বন্ধ করে দেওয়া হয় চাঁদিপুর থেকে দক্ষিণের আকাশ। এর ফলে যে আকাশ ছিল দু’হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত, তা ছোট হয়ে আসে কমবেশি ২০০ কিলোমিটারে।
বিমানবন্দরের এক অফিসার আরও বলেন, “কলকাতা ও চাঁদিপুরের ওই আকাশসীমার মধ্যেই পড়ে কলাইকুণ্ডার বায়ুসেনা ঘাঁটি। সেখানে নিয়মিত যুদ্ধ-বিমানের মহড়া চলে। তাই কোনও যাত্রী-বিমানকে ওই এলাকায় ২৬ হাজার ফুটের নীচে নামতে দেওয়া হয় না। বিদেশি এই বিমানগুলিকে তাই ২৬ হাজার থেকে ৪৫ হাজার ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় যাতায়াত করতে হয়।”
যে দিন আকাশ ছোট হয়ে আসে, সে দিন কলকাতার আকাশে ঢোকার পর থেকেই বিদেশি বিমানের পাইলট কন্ট্রোলারের উপরে চাপ দিতে শুরু করেন। কন্ট্রোলারের উপরে এই চাপ কমাতে এটিসি-র ওয়াচ সুপারভাইজিং অফিসার (ডব্লিউএসও)-র টেবিলে সম্প্রতি বসানো হয়েছে একটি স্যাটেলাইট ফোন। যার মাধ্যমে পাইলটেরা সরাসরি সেই ডব্লিউএসও-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন। চাপ কমছে কন্ট্রোলারের উপর থেকে।
কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার্স গিল্ডের সভাপতি কে কে কবিরের কথায়, “হাজার সমস্যার মধ্যেও আমরা প্রতিটি বিমানকে তার পছন্দের উচ্চতায় তুলে দেওয়ার চেষ্টা করি। অসম্ভব চাপ থাকে অফিসারদের উপরে। কারণ, হাজার হাজার বিমানযাত্রীর জীবনের ঝুঁকির প্রশ্ন এর সঙ্গে জড়িয়ে।”
তবে ওই পরিস্থিতিতে কলকাতার এটিসি অফিসারেরা সুষ্ঠু ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে যাচ্ছেন বলে প্রশংসা করেছেন ফিনল্যান্ডের এক পাইলট। তিনিও এক দিন ওই বোতলের গলায় গিয়ে আটকে গিয়েছিলেন। অপেক্ষা করতে গিয়ে কমে যায় বিমানের জ্বালানি। অনেকটা পথ পেরোতে হবে। স্যাটেলাইট ফোনে সরাসরি কথা বলেন কলকাতা এটিসি-র অফিসারের সঙ্গে। পাইলটের অনুরোধ মেনে পছন্দের উচ্চতায় বিমান উঠিয়ে সময় মতো পার করে দেন এটিসি অফিসার।
চাপের মুখে কাজ করতে থাকা এটিসি অফিসারদের উদ্বুদ্ধ করতে ওই ভিনদেশি পাইলটের প্রশংসা-বাক্য নোটিস-বোর্ডে ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.