তখনও আসেননি বেশির ভাগ অতিথি। রেড রোড চত্বরে মাইকে শোনা যাচ্ছিল বাংলা-ইংরেজিতে বিবেকানন্দের বাণী। ধর্মের গণ্ডি ছাপিয়ে দেশের প্রান্তিক মানুষকে উঠে দাঁড়ানোর আহ্বান। একটু বাদে জঙ্গলমহল, পাহাড় বা সুন্দরবনের ছাত্র-যুবরাই হয়ে উঠলেন অনুষ্ঠানে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপনের উপলক্ষে যেন বিনা সুতোর বাঁধনে ধরা পড়ল গোটা পশ্চিমবঙ্গ।
শুক্রবার কলকাতার প্রাণকেন্দ্র রেড রোডের অনুষ্ঠানে রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীবৃন্দ, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধি, বাঙালির সংস্কৃতি জগতের পরিচিত মুখদের সঙ্গে মিশে গেলেন জঙ্গলমহল, পাহাড় বা সুন্দরবনের প্রান্তিক নাগরিকেরাও। ঠিক এক বছর আগে রাজ্যের দূর-দূরান্তের স্কুলপড়ুয়াদের সঙ্গে টিভি-সিনেমার তরুণ তারকাদের নিয়ে এসে সল্টলেক স্টেডিয়ামে বর্ণাঢ্য ভঙ্গিতে সারা বছরের উদ্যাপন শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মেজাজটির সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এ দিন সার্ধশতবর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠানটি সারা হল। |
স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম-সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে রেড রোডে শোভাযাত্রা। মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বেলুড় মঠের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ-সহ অন্য অতিথিরা। শুক্রবার। |
প্রজাতন্ত্র দিবস বা স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ যেখানে হয়, ঠিক সেখানেই অনেকটা একই ভঙ্গিতে বিবেকানন্দ-স্মরণের অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। মঞ্চে আসীন মুখ্যমন্ত্রী, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিবৃন্দ ও বিশিষ্ট অতিথিদের পিছনেই স্বামীজির ছবি। কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন বাহিনীর কুচকাওয়াজের পরে ক্রীড়াজগতের তারকাদের মিছিল, তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের বিবেকানন্দ-স্মারক ট্যাবলো, কলকাতা ও গ্রামবাংলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল, স্কুলপড়ুয়াদের শোভাযাত্রা। এবং এই শোভাযাত্রার ফাঁকেই নাচ-গানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান বলতে এটুকুই। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে কারও কোনও বক্তৃতা নেই। তবে অনুষ্ঠানের বিন্যাসেই ফুটে উঠেছে নিহিত বার্তাটি।
বিবেকানন্দের ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সরকারি অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন শ্রেণির জনগোষ্ঠীই এ দিন এক বন্ধনীতে ধরা পড়েছে। কলকাতার শিল্পীদের নাচে-গানে বিবেকানন্দ-প্রণামের পরেই পুরুলিয়ার ছো নাচে স্বামীজিকে নিয়ে আলেখ্য। জলপাইগুড়ির ডুয়ার্স এলাকার মেচ, দার্জিলিংয়ের তামাং উপজাতি থেকে কালিম্পঙের লেপচাদের লোকনৃত্যেও গমগম করে উঠল রেড রোড। কলকাতায় রামকৃষ্ণ মিশন, সারদা মঠের স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের কুচকাওয়াজের পরে বনবিবির মহিমা তুলে ধরলেন সুন্দরবনের কাকদ্বীপের স্কুলপড়ুয়ারা। |
|
|
কলকাতায় রেড রোডে দার্জিলিং থেকে আসা
লোকশিল্পীদের অনুষ্ঠান। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ আচার্য। |
পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পীদের
অনুষ্ঠান। ছবি: সুদীপ আচার্য। |
|
জঙ্গলমহলের অন্তর্ভুক্ত ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়ার আড়শার একটি স্কুলের ছাত্রেরাও সামিল হলেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।
যুবকদের কাছে আইকন হিসেবে পরিচিত স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশতবর্ষ মমতার কাছে তরুণসমাজের সঙ্গে জনসংযোগের একটি উপলক্ষও হয়ে উঠেছে। ‘বিবেক চেতনা উৎসব’ নামে এমন অনুষ্ঠান গত কয়েক দিন ধরে শুধু কলকাতা নয় জেলাতেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ক’দিন আগেই জঙ্গলমহলে ঝাড়গ্রামে ‘বিবেক চেতনা উৎসবে’ ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে কথা ফেসবুকেও জানিয়েছিলেন তিনি। এ দিনের অনুষ্ঠানের কথাও ফেসবুকে জানিয়েছেন মমতা। রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকায় সাহায্যের ১১৫টি অ্যাম্বুল্যান্স বিলির জন্যও এই দিনটাকেই বেছে নিয়েছিলেন মমতা। ‘জীবনসাথী’ নামের অ্যাম্বুল্যান্সগুলি বিভিন্ন ক্লাব ও সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয় এ দিন। |