তার আসার আভাস মিলেছিল দিন সাতেক আগেই। কিন্তু নানান বাধায় তখন মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল শৈত্যপ্রবাহ। সেই সঙ্গে ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস।
এ বার কিন্তু কোনও আগাম সতর্কতার অবকাশ না-দিয়েই দক্ষিণবঙ্গে হাজির হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ! তবে একটি মাত্র জেলায়। এবং আপাতত মাত্র এক দিনের জন্যই তার যা কিছু জারিজুরি বলে মনে করছে আবহাওয়া দফতর। কারণ, চলতি মরসুমে শীতের পাথরচাপা কপালে আবার পাথর চাপতে চলেছে! সেই পাথর হতে পারে ঘূর্ণাবর্ত। হতে পারে কাশ্মীরের নতুন পশ্চিমী ঝঞ্ঝাও।
তার আগে, বৃহস্পতিবার অবশ্য বীরভূমের শ্রীনিকেতন দাপিয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। এ দিন সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে যায় ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি কম। শীতকালে সর্বনিম্ন বা রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি নীচে নামলে আবহবিজ্ঞানের পরিভাষায় সেটাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। শ্রীনিকেতনে শৈত্যপ্রবাহ খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, গত বছর একই দিনে (৯ জানুয়ারি) শ্রীনিকেতনে তাপমাত্রা নেমেছিল পাঁচ ডিগ্রিতে!
এ বারের ছবিটা অবশ্য গোড়া থেকেই আলাদা। চলতি মরসুমে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে এই প্রথম শৈত্যপ্রবাহ এল বীরভূমে। কিন্তু তার আয়ু অত্যন্ত কম। আজ, শুক্রবার থেকেই সেখানে ফের তাপমাত্রা বাড়বে বলে আবহবিদদের পূর্বাভাস। কয়েক দিনের মধ্যে ফের স্বাভাবিকে পৌঁছে যেতে পারে তা। যদিও শ্রীনিকেতনে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম থাকাই দস্তুর। |
কিন্তু এ বার বাংলায় শীতের ভাগ্যে প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়ম বিশেষ খাটছে না। ক্ষণিকের শৈত্যপ্রবাহের পরে শ্রীনিকেতনে ফের তাপমাত্রা তো বাড়ছেই। কলকাতা, এমনকী উত্তরবঙ্গেও পারদ ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। গত রবিবার উত্তর ভারত থেকে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দাপটে রাজ্য জুড়ে শীত থমকে গিয়েছিল। মঙ্গলবার থেকে সেই ঝঞ্ঝার প্রভাব কাটায় উত্তর ও দক্ষিণ, রাজ্যের দু’প্রান্তেই পারদ নামতে থাকে। কিন্তু তা অতি অল্প সময়ের জন্য। শীত-প্রত্যাশীদের আশ মেটানোর আশ্বাস নেই তাতে।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, এ দিন মহানগরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৩ ডিগ্রিতে (স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি কম) নামলেও তা ফের বাড়বে। এতটাই যে, চলতি সপ্তাহের শেষে তা ১৩-১৪ ডিগ্রির কাছে পৌঁছে যেতে পারে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, কৃষ্ণনগরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নীচে পৌঁছেছে। এর মধ্যে রাতের তাপমাত্রা সব থেকে নীচে নেমেছে কৃষ্ণনগরে। সেখানে এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬.৫ ডিগ্রি। কিন্তু সবই ক্ষণিকের জন্য। কলকাতার মতো উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতেও এ দিন রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে ছিল। সেখানেও পারদ চড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ভরা পৌষেও শীতের এমন দুর্দশা কেন? অল্প সময়ের জন্য মাথাচাড়া দিলেও বারবার তাকে যে কোণঠাসা হয়ে পড়তে হচ্ছে, তার কারণ কী?
মরসুমের শুরু থেকে ঘূর্ণাবর্ত, উচ্চচাপ, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা নাস্তানাবুদ করে চলেছে ঠান্ডাকে। ফের ঘূর্ণাবর্ত, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার বিপদই দেখছেন আবহবিজ্ঞানীরা। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, রাজস্থানের কাছে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। সেটি পূর্ব ভারতের দিকে সরে আসছে। এর ফলে বিহার-ঝাড়খণ্ড-উত্তরপ্রদেশে বৃষ্টি হতে পারে। তার ফলে আবার জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়বে। রাজ্যে বাধা পাবে উত্তুরে হাওয়া। বাঁকুড়া, বীরভূমের মতো পশ্চিমের জেলার আকাশেও মেঘের দেখা মিলতে পারে। সব মিলিয়ে বাংলায় শীতের ভাগ্যেই মেঘের ঘটা!
একা ঘূর্ণাবর্তে শেষ হচ্ছে না শীতের দুর্ভোগ। দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রের খবর, আজ, শুক্রবারেই কাশ্মীরে আরও একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আছড়ে পড়বে। পরে সেটি পূর্ব ভারতের দিকে বয়ে এলে আরও শক্ত বাধার মুখে পড়তে পারে শীত।
আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝিই মকরসংক্রান্তি। মকরসংক্রান্তি বা সাগরমেলার সময় রাজ্যে কনকনে উত্তুরে হাওয়ার দাপটই পরিচিত ছবি। কিন্তু এ বার সেটা হবে কি না, নিশ্চিত নন আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, শীতের এমন নিস্তেজ মেজাজ কোনও কোনও বছর দেখা যেতেই পারে। এটা বড় ধরনের অস্বাভাবিকতা নয়। যদিও এ বছর যে-ভাবে পরপর বাধায় শীত মুখ থুবড়ে পড়ছে, তাতে জলবায়ু বদলেরই ইঙ্গিত মিলছে বলে মনে করছেন আবহবিদদের একটি অংশ।
|