ভেল্কি দেখাচ্ছে উত্তুরে হাওয়া! খেল্ দেখানোয় কম যাচ্ছে না পারদও।
এক সপ্তাহ ধরে কলকাতায় পারদের উত্থান-পতন অব্যাহত। ৩ জানুয়ারি মহানগরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল চলতি সময়ের স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরে। পরের দিনই আবার এক ধাক্কায় সে নেমে এসেছিল স্বাভাবিক মাত্রায়। কিন্তু টানা দু’দিনের বেশি পারদের এক জায়গায় থমকে থাকারও নজির নেই এ বার! মঙ্গলবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৩ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের এক ডিগ্রি উপরে। সেখান থেকে বুধবার এক ধাক্কায় পারদ নেমে গিয়েছে ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি কম। আগামী কয়েক দিনেও পারদের লাগাতার উত্থান-পতন চলবে বলে আবহবিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
ভরা পৌষে জব্বর শীতের বদলে হাওয়ার মতি এমন চঞ্চল কেন?
আবহবিদেরা বলছেন, চলতি মরসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া খামখেয়ালি আচরণ করে চলেছে। ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই লাগাতার ঘূর্ণাবর্ত, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা, উচ্চচাপ বলয়ের মুখে পড়তে হয়েছে শীতকে। ওই সব প্রাকৃতিক বাধার মোকাবিলা করতে গিয়ে দাপট দেখাতে পারেনি শীত। একই কারণে তাপমাত্রার একটানা নিম্নগতি বজায় থাকছে না। দিন দুয়েক শীত পড়ল তো এক লাফে ফের পারদ চড়তে শুরু করছে। শীতের পথে আপাতত সর্বশেষ বাধা ছিল গত রবিবার উত্তর ভারত থেকে বয়ে আসা একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। তার যুযুৎসু প্যাঁচে কুপোকাত উত্তুরে হাওয়া যেন থমকে গিয়েছিল। আকাশে মেঘ জমছিল, হচ্ছিল ঘন কুয়াশাও। |
উত্তুরে হাওয়ার এই ভেল্কির মধ্যে জলবায়ু বদলের ইঙ্গিত দেখছেন অনেকে। আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, এই যে ঘনঘন ঘূর্ণাবর্ত, উচ্চচাপ তৈরি হচ্ছে, তার পিছনে জলবায়ুর বদল তো রয়েছেই। ঠিক যে-ভাবে শীতকালেও একের পর এক ঝড়ের মুখে পড়ছে ব্রিটেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরা বলছেন, “পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার চরিত্রে একটা বদল ধরা পড়েছে। শীতেও পরিবর্তন আসছে কি না, সেটাই দেখার।”
জলবায়ুর মর্জি বদলের জেরেই শীতের এই ভেল্কিবাজি কি না, তা নিয়ে বিতর্কও চলছে আবহবিদদের মধ্যে। জলবায়ুর বদল হচ্ছেই, কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর এখনই এটা মেনে নিতে রাজি নয়। তাদের বক্তব্য, প্রতি বছরই শীতের ক্ষেত্রে ফারাক ধরা পড়ে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কিংবা উচ্চচাপের বাধাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। মৌসম ভবনের এক বিজ্ঞানী বলেন, “জলবায়ুর বদল ঘটছে কি না, তা বলতে গেলে বেশ কয়েক বছরের পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। এখনই নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসা যাবে না।”
মকরসংক্রান্তি আসন্ন। সাধারণত, এই সময়েই শীতের দাপট বাড়ে বাংলায়। হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা টেনে এনেছেন গত বছরের প্রসঙ্গ। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি পারদ-পতনে লন্ডনকে ছুঁয়ে ফেলেছিল কলকাতা। বুধবার লন্ডনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬.৫ ডিগ্রি। কলকাতার এ দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সঙ্গে যার ফারাক অনেকটাই।
তবে এ দিন কিছুটা হলেও পারদ-পতন শুরু হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। শ্রীনিকেতনে বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.৪ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি কম। কলকাতা লাগোয়া দমদম এবং মুর্শিদাবাদের বহরমপুরেও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি নীচে নেমে গিয়েছে। একই পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়।
উত্তর ভারত থেকে বয়ে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাব কাটার ফলেই এই পারদ-পতন। এ দিন সকাল থেকেই পরিষ্কার ছিল আকাশ। দেখা মিলেছে রোদেরও। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, শীতের দাপট বাড়তে গেলে আকাশ পরিষ্কার থাকতেই হবে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম হওয়া চাই। এ দিন উপগ্রহ-চিত্রে রাজ্যে তেমন জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি নজরে আসেনি আবহবিদদের।
এমন পরিস্থিতি কত দিন চলবে?
আবহবিজ্ঞানীরা জানান, চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচেই থাকতে পারে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানী গণেশকুমার দাস বলেন, “বৃহস্পতিবার মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রিতে পৌঁছে যেতে পারে।” বীরভূম, বাঁকুড়ার মতো পশ্চিমাঞ্চলের জেলায় তা ন’ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকবে বলে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস।
|