নিজের নামে ট্রফি, রাজ্য বিমুখ করল নপরাজিতকে
পুলিশ ট্রেনিং কলেজে নিজের নামে একটি ট্রফি চালু করতে চেয়েছিলেন রাজের প্রাক্তন পুলিশ প্রধান (ডিজি) নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। অবসরের পাঁচ দিন আগে, গত সেপ্টেম্বরে এই ইচ্ছার কথা তিনি লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন রাজ্য সরকারের কাছে। কিন্তু দিন দুয়েক আগে কলেজ-কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়ে দিয়েছে, প্রাক্তন পুলিশকর্তার আর্জিটি সরকার রাখতে পারছে না। এর কারণ ব্যাখ্যার পাশাপাশি চিঠিতে নপরাজিতবাবুর উদ্যোগকে সাধুবাদ দেওয়া হয়েছে।
নপরাজিতবাবু অবসর নিয়েছেন গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর। এখন তিনি রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সদস্য। প্রশাসন-সূত্রের খবর: গত ২৫ সেপ্টেম্বর পুলিশ ট্রেনিং কলেজের ডিআইজি-কে চিঠি দিয়ে তিনি লিখেছেন, প্রশিক্ষণের চূড়ান্ত পরীক্ষায় তদন্ত ও আইন বিষয়ে যে ছাত্র সর্বাধিক নম্বর পাবে, তাঁর জন্য তিনি একটি ট্রফি উৎসর্গ করতে চান। ট্রফিটি যে তাঁর নামেই হবে, চিঠিতে সেটাও জানান নপরাজিতবাবু। সেই সঙ্গে ট্রফি কেনার খরচ বাবদ কলেজ-কর্তৃপক্ষের নামে ৩০ হাজার একটি চেক কেটে তিনি জুড়ে দিয়েছিলেন আবেদনপত্রে।
প্রাক্তন ডিজি’র আর্জি সম্পর্কে পুলিশ ট্রেনিং কলেজের কর্তৃপক্ষ একক ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। বরং ট্রেনিং কলেজের ডিআইজি সেটি পাঠিয়ে দেন রাজ্য পুলিশের তৎকালীন ডিজি (প্রশিক্ষণ) দিলীপ মিত্রকে। দিলীপবাবু নিজের মন্তব্য-সহ তা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র-সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে পেশ করেন। দিলীপবাবুর অভিমত ছিল, প্রশিক্ষণের শেষে রাজ্য পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর ও কলকাতা পুলিশের সার্জেন্টদের পুরস্কৃত করার যে রীতি ট্রেনিং কলেজে চালু আছে, সেখানে ডিজি পদমর্যাদার কারও নামাঙ্কিত ট্রফি প্রদানের নজির নেই।
দিলীপবাবুর চিঠি যখন নবান্নে পৌঁছয়, তত দিনে নপরাজিতবাবু চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন। এ ব্যাপারে দিলীপবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি আর ডিজি (প্রশিক্ষণ) নেই। তাই কিছু বলতেও পারব না।” অন্য দিকে নপরাজিতবাবুর বক্তব্য, “মাঝে-মধ্যেই অভিযোগ ওঠে যে, এ রাজ্যে পুলিশি তদন্তের মান নেমে যাচ্ছে। পুলিশ ট্রেনিং কলেজে প্রশিক্ষণ শেষে অন্য সব বিভাগে সেরা ছাত্রের জন্য ট্রফির বন্দোবস্ত থাকলেও তদন্ত ও আইন বিষয়ে কৃতীদের এমন কোনও ইনাম পাওয়ার সুযোগ নেই। তাই ভেবেছিলাম, ওই দুই বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপককে একটা ট্রফি দেওয়া গেলে চাকরির গোড়া থেকেই সাব ইন্সপেক্টরেরা তদন্তে উৎসাহ পাবেন।” তা বলে নিজের নামে ট্রফি?
নপরাজিতবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “এতে দোষ কোথায়? আমি তো নিজেরই বেতন থেকে তিরিশ হাজার টাকার চেক পাঠিয়েছিলাম।” তার পরেও রাজি হওয়া, না-হওয়াটা সম্পূর্ণত কর্তৃপক্ষের মর্জি বলে মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন ডিজি। তাঁর প্রস্তাবে রাজ্য সরকার সহমত হতে পারল না কেন?
স্বরাষ্ট্র দফতরের একাধিক কর্তার ব্যাখ্যা, “নপরাজিতবাবুর মনোভাব নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু কোনও ব্যক্তি নিজের নামে ট্রফি উৎসর্গ করেছেন, এমন নজির অন্তত পুলিশ ট্রেনিং কলেজে নেই। তাই ওঁর প্রস্তাব গ্রহণ করা যাচ্ছে না।” নবান্ন-সূত্রের খবর: সরকারের বক্তব্য যাতে নপরাজিতবাবুকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সে জন্য দু’দিন আগে নতুন ডিজি (প্রশিক্ষণ) অরবিন্দকুমার মালিওয়ালকে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর। চিঠির সঙ্গে ৩০ হাজার টাকার চেকটিও ফেরত দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ-কর্তারা জানিয়েছেন, ট্রেনিং কলেজে বিদায়ী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগে সেরা ছাত্রের হাতে আলাদা আলাদা ট্রফি তুলে দেওয়ার প্রথা চলে আসছে বহু দিন ধরে। যেমন, সামাজিক কাজ ও ভাল ব্যবহারে শীর্ষ স্থানাধিকারীকে ডিআইজি (প্রশিক্ষণ) শিল্ড, কম্পিউটারে আইজি (প্রশিক্ষণ) ট্রফি। কলকাতা পুলিশের সেরা সার্জেন্টকে দেওয়া হয় কমিশনার্স কাপ। এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষায় সর্বোত্তম ফলের জন্য রয়েছে নগেন্দ্রনাথ মুখার্জি ট্রফি। তিনি কে?
রাজ্য পুলিশের আর এক প্রাক্তন ডিজি অরুণপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার বাবা। উনি কুলটি হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক ছিলেন। বছর তিরিশ আগে বাবার নামে ট্রফিটি উৎসর্গ করি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.