পড়ার সঙ্গে খেলাও চালান, বার্তা মমতার
ঙ্গলমহলে শান্তি, সুস্থিতির বার্তা দিতে বাঙালির প্রিয় ফুটবলকেই যেন বেছে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে পরিষেবা প্রদান ও বিবেক চেতনা উৎসবে আসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে রাজনীতির কথা ছিল না। উল্টে মঞ্চে উপস্থিত প্রাক্তন ফুটবল তারকা গৌতম সরকার, বিদেশ বসুদের দিকে ফুটবল এগিয়ে দিয়ে তাঁর অনুরোধ, “দেখান না, আপনাদের স্কিল। কতক্ষণ ফুটবল মাটিতে না ফেলে নাচাতে পারেন।” মঞ্চে বিদেশ-গৌতমদের ‘জাদু’ শুরু হতেই ‘জঙ্গলমহল কাপ’-এ যোগ দেওয়া খেলোয়াড়দের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, “ফুটবলের জবাব ফুটবলেই দিতে হবে। তোমরাও এমন করে দেখাও। দেখি কে জেতে?”
ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে জঙ্গলমহল কাপে বিজয়ী দলকে ট্রফি দিচ্ছেন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।
সাদা-কালো ফুটবল আকাশে ছুড়ে তাঁর কথা মানতে দেরি করেনি জঙ্গলমহলের ছাত্র-যৌবন।
তৃণমূল-জমানায় জঙ্গলমহলে উন্নয়নের কাজ যতই হোক, প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে মাওবাদীদের আনাগোনা যে ফের শুরু হয়েছে, প্রশাসনের তা অজানা নয়। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মাওবাদী-প্রসঙ্গ তোলেননি। কিন্তু বারবারই বুঝিয়ে দিয়েছেন, পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলো চালিয়ে গেলে সমাজের মূল স্রোতে থাকার অনেক বেশি সুযোগ মেলে। মাঠে হাজির প্রায় ৩০ হাজারের ভিড়কে বলেছেন, “ফুটবল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান। খেলাধুলো করুন। পড়াশোনাটাও সমান তালে চালান। মানুষ হতে হবে। সরকারি অনেক সুযোগ-সুবিধে আছে।”
ঝাড়গ্রামের মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায়।
জঙ্গলমহলের যুবসমাজকে মূল স্রোতে ধরে রাখতে এবং খেলাধুলোর মাধ্যমে জনসংযোগ বাড়ানোর অঙ্গ হিসেবে গত বছরের মতো এ বারও রাজ্য পুলিশ পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলায় ‘জঙ্গলমহল কাপ’-এর আয়োজন করেছিল। চার জেলার ১,৭৩৪টি ক্লাবের ৩০,৩৩৩ জন প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ফুটবল ছাড়াও তিনটি বিভাগে প্রতিযোগিতা হয় কবাডি, তিরন্দাজি ও ছৌ-নাচ।
এ দিন ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে ‘জঙ্গলমহল কাপ’-এ যোগদানকারীরাই হাজির ছিলেন। প্রতি জেলার ফুটবল, কবাডির ফাইনালে বিজয়ী ও বিজিত দলকে (পুরুষ, মহিলা) পুরস্কৃত করা হয়। প্রতিটি জেলার সেরা পুরুষ ফুটবলারকে মোটরবাইক এবং সেরা মহিলা ফুটবলারকে ‘স্কুটি’ দেওয়া হয়।
ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে বিবেক চেতনা উৎসবে পুরস্কার বিতরণ মুখ্যমন্ত্রীর। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
তিরন্দাজিতে পুরুষ ও মহিলা বিভাগের প্রথম তিন জনকে পুরস্কৃত করা হয়। ছৌ নাচের বিভাগে তিন জনকে সাইকেল দেওয়া হয়। জঙ্গলমহল কাপে যোগদানকারী ক্লাবগুলিকে ২৫ হাজার টাকা করে অর্থ-সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তা ছাড়া, উপস্থিতদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য সরকার জঙ্গলমহলের জনতার জন্য কী-কী করছে। বলেছেন, “জঙ্গলমহলের ১৫ হাজার যুবক-যুবতীকে পুলিশে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। পরে আরও ২৫ হাজার যুবক-যুবতী সিভিক পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। এ ছাড়া, অলচিকি শিক্ষক নিয়োগ, স্বাস্থ্য দফতর-সহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ রয়েছে। সেখানেও অনেককে কাজে লাগানো হবে।”
ঝুমুর শিল্পী ইন্দ্রাণী মাহাতোকে লোকশিল্পীর পরিচয় পত্র তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকালে দফায়-দফায় প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে আলোচনাতেও জঙ্গলমহলে নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপরেই জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এলাকায় ১০০ দিনের কাজে গতি আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তাদের।
শালবনির ঢ্যাঙাশোলে বাড়ি মহিলা ফুটবলার পূজা মুদির। নবম শ্রেণির ছাত্রীটির স্বীকারোক্তি, “ফুটবল খেলে নানা সময় নানা পুরস্কার পাই। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে থেকে স্কুটি পেয়েছি। কিন্তু উনি যে ভাবে খেলার সঙ্গে পড়াশোনা করে জীবনে এগিয়ে যেতে বললেন, সেটা ক’জন বলে?”
একটা সময় গোটা ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়াম জুড়ে আকাশে উঠছে-নামছে অজস্র ফুটবল। ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের দিকে তাকিয়ে মমতা বলেন, “আমি শুরু করলাম। এটা চালিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি খেলোয়াড়কে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে খেলাতে হবে। প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যাতে কেউ হারিয়ে না যায়, ফুরিয়ে না যায়।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.