তৃণমূল দুষ্কৃতীদের দল, তোপ বুদ্ধদেবের, পাল্টা পার্থর
বেশ কিছু দিন ধরেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলে আসছেন, “অপরাধীরা ভাবছে আমাদের সরকার!” লোকসভা ভোটের আগে এ বার আক্রমণের সুর আরও চড়িয়ে শাসক দল তৃণমূলকে ‘আগাপাশতলা সমাজবিরোধীদের দল’ বলে আক্রমণ করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
ধর্মতলায় বুধবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সমাবেশে বুদ্ধবাবু বলেছেন, “তৃণমূল আগাপাশতলা সমাজবিরোধীদের দল! পাড়ায় পাড়ায় যারা সমাজবিরোধী, তারা তৃণমূলের ঝান্ডা ধরেছে!” আগামী দিনে পাড়ায় পাড়ায় তৃণমূলের গুণ্ডা-বাহিনী শেষ কথা বলবে? নাকি ভদ্রলোকদের কথা চলবে সে প্রশ্নও তুলেছেন বুদ্ধবাবু। বিরোধী ভূমিকায় আগে এতটা তীক্ষ্ম ভাষায় কখনও তৃণমূলকে আক্রমণ করেননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। গৌতম দেবের নেতৃত্ব উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম এ দিন যে ‘ধর্মতলা অভিযানে’র ডাক দিয়েছিল, সেই মঞ্চ থেকেই নারী নির্যাতন, সন্ত্রাস, শিল্পায়ন সব ব্যাপারেই তৃণমূল সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
সভায় আক্রমণাত্মক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বুধবার ধর্মতলা চত্বরে। বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
বুদ্ধবাবুর সমালোচনার পাল্টা মুখ খুলেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পরাজয় থেকে বুদ্ধবাবু কোনও শিক্ষাই নেননি মন্তব্য করে পার্থবাবু বলেন, “রাজ্যের জনগণ গুন্ডাদের ৩৪ বছরের সরকারকে সরিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও উন্নয়নের সরকারকে বেছে নিয়েছে।” ভোটে বুদ্ধবাবু নিজেও পরাজিত হয়েছিলেন তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে পার্থবাবু বলেন, “আস্তিন গুটিয়ে তাঁর এই ধরনের অহং-সর্বস্ব কথা বলা রাজ্যের মানুষ পছন্দ করেননি বলেই ভোটে হারতে হয়েছে!”
বুদ্ধবাবু ছাড়াও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, ফরওয়ার্ড ব্লকের অশোক ঘোষ, আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, সিপিএমের তড়িৎ তোপদার এবং গৌতমবাবু এ দিন বক্তৃতা করেন। মূলত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়েই তৃণমূল-সরকারের কড়া সমালোচনা করেন বুদ্ধবাবু। তিনি বলেন, “এক দিকে মহাকরণে উৎসব হচ্ছে। অন্য দিকে পাড়ায় পাড়ায় সমাজবিরোধীরা উৎসব করছে! ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা তুলছে!” বাম আমলেও সমাজবিরোধীরা ছিল, এ কথা কবুল করেও বুদ্ধবাবুর দাবি, “আমরা তাদের চেপে রেখেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। ধানতলা বা বানতলা সব ক্ষেত্রেই অপরাধীদের সাজা হয়েছে।”
মঞ্চে আলাপচারিতায় গৌতম দেব এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
বুধবার ধর্মতলা চত্বরের সভায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
সম্প্রতি প্রতিটি সভাতেই রাজ্যে নারী নির্যাতন নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিঁধছেন বুদ্ধবাবু। তিনি এ দিন বলেন, “স্কুলের বাচ্চা থেকে চাকুরিজীবী মহিলা, কারও নিরাপত্তা নেই। কিছু ঘটলে সরকার প্রথমে বলছে, হয়নি! তার পরে বলছে, চক্রান্ত! মিথ্যে করে সাজিয়েছে! প্রতিবাদ করতে গেলে হয়, ভয় দেখাও। না হয় টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ কর!” মধ্যমগ্রামে নির্যাতিতার মৃতদেহ নিয়ে সিপিএম পথে নামায় প্রশ্ন উঠেছিল, এই ভাবে রাজনীতি করা উচিত কি না? বুদ্ধবাবু এ দিন জবাব দিয়েছেন, “জানি এটা আমাদের কাজ নয়। কিন্তু আমরা রাস্তায় না নামলে কামদুনিতে যেটুকু হচ্ছে, তা-ও হতো না! মধ্যমগ্রামের পরিবারের পাশে না-দাঁড়ালে ওঁদের বিহারে ফেরত পাঠাত!” নারী নির্যাতন নিয়ে পথে নামা প্রসঙ্গে বুদ্ধবাবুর যুক্তি, “আমরা প্রতিবাদ না করলে সরকার কিচ্ছু করবে না!”
তাঁর আমলের শিল্পনীতির পক্ষেও ফের সওয়াল করেছেন বুদ্ধবাবু। ধান-পাট নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না, উন্নয়নের জন্য শিল্প চাই আরও এক বার এ কথা জানিয়ে বুদ্ধবাবু বলেন, “আমরা চার-পাঁচটা ইস্পাত কারখানা এনেছিলাম। এখন সব বন্ধ। সিঙ্গুর হল না। জিন্দলও হবে না। উইপ্রো, ইনফোসিস কিছু হল না!” গৌতমবাবু দাবি করেন, তিনি কম দামে এই দুই তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থাকে জমি দিয়েছিলেন। কিন্তু আড়াই বছরে তৃণমূল সরকার তাদের দিয়ে শিল্প করাতে পারল না। তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থবাবু অবশ্য পাল্টা বলেছেন, “ওদের সরকার যাওয়ার আগে কাগজে জমি দেওয়া হয়েছিল! বাস্তবে হয়নি। আমরা আশাবাদী, ইনফোসিস আসবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.