বাবুদের বাড়িতে বেশি মাইনের কাজ পেতে গেলে আর উবু হয়ে বসে কাপড় কাচলে চলবে না। ভাত-ঝোল গরম করতে বললে আর খরচ করা চলবে না গ্যাস।
পরিচারিকাদের ছাপোষা জীবনে ‘পরিবর্তন’ আনতে অন্তত তেমনটাই মনে করছে রাজ্য সরকার।
আদ্দিকালের ‘কাজের লোক’দের শিখিয়ে-পড়িয়ে আধুনিকা করে নিতে তাই রীতিমতো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে। আছড়ে-আছড়ে কাপড় কাচার বদলে শেখানো হবে ওয়াশিং মেশিন চালানো। টুক করে মাইক্রোওয়েভ আভেনের রিমোট টিপে কী করে লহমায় গরম করে নেওয়া যায় সিঁটিয়ে যাওয়া চচ্চড়ি, তা-ও। যাঁদের জন্য এত আয়োজন, তাঁদের অনেকেই অবশ্য ঠোঁট উল্টে বলছেন, ‘ধুস! ও আবার শিখতে যেতে হয় না কি? সব তো বাড়ির বউদিরাই শিখিয়ে দেয়।’
পরিচারিকাদের জন্য রাজ্য সরকারের এই মঙ্গলচিন্তা সামনে এসেছে বুধবার দুর্গাপুরে। অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য গোপালমাঠে সরকারি সুবিধা (যেমন ভবিষ্যনিধি প্রকল্প, সামাজিক মুক্তি কার্ড, সাইকেল, বিয়ে ও মৃত্যুকালীন সহায়তা ইত্যাদি) বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু তাঁদের এই নতুন উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন।
মন্ত্রীর বক্তব্য: বড়-বড় শহরে হাজার-হাজার পরিচারিকা গৃহস্থালির কাজ করেন। যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ জোটাতে হলে রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, ইনডাকশন হিটার, মাইক্রোওয়েভ আভেন ব্যবহার করতে জানতে হবে। শুধু কি তাই? অনেক বাড়িতেই বুড়োবুড়ি-অসুস্থ মানুষজন একা থাকেন। ছেলেমেয়েরা হয়তো কর্মসূত্রে বাইরে। সে সব বাড়িতে ডাকঘর থেকে স্বল্প সঞ্চয়ের টাকা তুলে আনা বা ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন কাজেও সাহায্য করতে পারেন পরিচারিকারা। সে ক্ষেত্রে তাঁদের উপরে বাড়ির লোকেদের ভরসা বাড়বে। তাঁদের বেতন বাড়ার সুযোগও থাকবে। প্রশিক্ষণের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। শ্রমমন্ত্রী জানান, কর্মসংস্থান কেন্দ্রের মাধ্যমে পরিচারিকাদের নাম নথিভুক্ত করে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তিন দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ওই তিন দিন তাঁর দফতরই দৈনিক একশো টাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করবে। ওই দিনগুলি কাজে না যাওয়ায় যাতে পরিচারিকাদের লোকসান না হয়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। বিষয়টি এলাকায় প্রচার করে নাম নথিভুক্ত করানোর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিক্রিয়া হয়েছে মিশ্র। কেননা ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে কাজ চালানোর মতো লেখাপড়া কত জন পরিচারিকা জানেন, তা নিয়েই বহু জনের সংশয় রয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছেও এই নিয়ে কোনও তথ্য নেই। টাকা-পয়সার ব্যাপারে অচেনা-অজানা কারও উপরে বিশ্বাস রাখা কতটা নিরাপদ, সে ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ কী, সেই প্রশ্নও উঠেছে। দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের নন-কোম্পানি এলাকার সোমনাথ সাধু অবশ্য বলছেন, “আমার ছেলে বিদেশে। বাড়িতে আমি ও আমার স্ত্রী। আমাদের জীবন অনেকাংশেই পরিচারিকা-নির্ভর। ওঁরা প্রশিক্ষণ পেলে আমাদের লাভ।”
বীরভানপুরের উমা দাস দু’টি বাস বদলে রোজ সকালে সিটি সেন্টারে কাজে আসেন। তাঁর আশা, “এমন প্রশিক্ষণে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। দাদা-বউদিদের সঙ্গে বেতন নিয়ে দরাদরি করতে পারব।”
কিন্তু সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা লিলি পাল বলেন, “আমরা এমন কোনও প্রকল্পের কথা জানি না। দীর্ঘদিন যে দাবি-দাওয়া জানিয়ে আসছি, তাতে কান না দিয়ে রাজ্য সরকার এই সব আজেবাজে ব্যাপার নিয়ে মাতামাতি করছে।” |