এতটা জলীয় বাষ্পের ঘনঘটা হতে পারে, অনুমান করতে পারেনি হাওয়া অফিসও!
উত্তর ভারত থেকে বয়ে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে মেঘ তো জমলই। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ভরা পৌষে ঝরল বৃষ্টিও! এর মূলে আছে জলীয় বাষ্পের বাড়াবাড়ি। মেঘের প্রভাবেই সোমবার কলকাতায় দিনের তাপমাত্রা নেমে যায় স্বাভাবিকের নীচে। কিন্তু দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়াটা শীতের দাপট বাড়ার অনুকূল নয় বলেই আবহবিদেরা জানান। জব্বর শীত পড়তে পারে রাতের অর্থাৎ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমলেই।
কিন্তু এ বার শীতের পায়ে পায়ে কাঁটা। কখনও ঘূর্ণিঝড় তো কখনও ঘূর্ণাবর্ত। কখনও উচ্চচাপ বলয় তো কখনও পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। পরের পর বাগড়ায় নিজমূর্তি দেখানোর সুযোগই পেয়ে উঠছে না শীত। জব্বর শীত পেতে হলে এ বারের পশ্চিমী ঝঞ্ঝার বিদায় পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
তার আগে এ দিন জলীয় বাষ্পের জেরে মেঘ-বৃষ্টি এবং কুয়াশায় নাকাল হতে হয় মানুষকে। গাঢ় কুয়াশার প্রভাব পড়েছে বিমান চলাচলেও। ঘন কুয়াশা তৈরির জন্য পরিবেশবিদেরা মাত্রাতিরিক্ত দূষণকেও দায়ী করছেন। তাঁদের মতে, জলীয় বাষ্পের সঙ্গে ধূলিকণা মিশে যাওয়ায় কুয়াশা সহজে কাটছে না। কমছে দৃশ্যমানতাও।
কুয়াশার জন্যই কলকাতা বিমানবন্দরে সকালে দৃশ্যমানতা ৮০০ মিটারে নেমে আসে। তবে এর ফলে বিমান ওঠানামায় সমস্যা হয়নি। কিন্তু বিমানবন্দর সূত্রের খবর, আন্দামান ও উত্তর-পূর্ব ভারতে কুয়াশার জন্য কলকাতা থেকে এ দিন ওই সব রুটের কয়েকটি বিমান বাতিল করতে হয়েছে। কলকাতা থেকে ইন্ডিগোর আগরতলার বিমান বাতিল হয়। গো এয়ার এবং জেটলাইট সংস্থা যথাক্রমে তাদের বাগডোগরা ও পোর্ট ব্লেয়ারের উড়ান বাতিল করে। কুয়াশার জন্য দিল্লি, গুয়াহাটি থেকে কয়েকটি বিমান দেরিতে পৌঁছয় কলকাতায়। তাই এখান থেকে ফের ওই শহরগুলিতে যেতেও দেরি হয়েছে বিমানের। খারাপ আবহাওয়ার জন্য সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমান রবিবার রাতে দিল্লিতে নামতে না-পেরে কলকাতায় চলে এসেছিল। সেটিও এ দিন দিল্লি উড়ে গিয়েছে।
এ দিন বাস ধর্মঘটের জন্য শহরতলির বহু মানুষই সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। গাড়ির সমস্যা তো ছিলই। সেই সঙ্গে তাঁদের নাজেহাল করেছে কুয়াশাও। আকাশ মেঘলা থাকায় রোদের দেখা মেলেনি। স্যাঁতসেঁতে ঠান্ডায় দিনের বেলাতেও ফুলহাতা সোয়েটার-জ্যাকেট না-চাপিয়ে বেরোনোর উপায় ছিল না। এ দিন কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে দু’ডিগ্রি কম। আবহবিজ্ঞানের পরিভাষায়, শীতকালে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নেমে গেলে তাকে শীতল দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এ দিন ঠান্ডার সঙ্গে হাজির হয়েছিল বৃষ্টিও। বেলা ১২টা নাগাদ কাঁকুড়গাছির বাড়ি থেকে ধর্মতলার অফিসে যাচ্ছিলেন রতন দাশগুপ্ত। বললেন, “হঠাৎই কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ল গায়ে!” বৃষ্টি হয়েছে বীরভূম, বাঁকুড়ার মতো পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতেও। এ দিন বিকেল পর্যন্ত এক মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া দফতর।
সন্ধ্যা গড়ানোর পরে কিন্তু তাপমাত্রা সে-ভাবে নামেনি। এর জন্য মেঘলা আকাশকেই দায়ী করছেন আবহবিদেরা। কনকনে শীত পড়তে গেলে সর্বনিম্ন বা রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কিছুটা নীচে নামতে হয়। কিন্তু এ দিন কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের এক ডিগ্রি বেশি। মেঘ-বৃষ্টি আর কুয়াশার ত্রিমুখী আক্রমণে ভরা পৌষেও শীত রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
তা হলে এ বার কনকনে শীত আর পড়বে কবে? হাওয়া অফিস আশ্বাস দিচ্ছে, পশ্চিমী ঝঞ্ঝাটি বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছে। সেটি পুরোপুরি বিদায় নিলেই রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞানী গণেশকুমার দাস বলেন, “বুধবার থেকে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নামতে পারে।” |