মধ্যমগ্রামে গণধর্ষিতা কিশোরীর পুড়ে মৃত্যু নিয়ে আগেই সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে রাজনৈতিক শিবির। এ বার ওই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে বিষয়টির সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করলেন কিশোরীর বাবা।
ধর্ষণের ঘটনার পর থেকেই কী ভাবে পুলিশ তাঁদের হেনস্থা করেছে, মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, নিরাপত্তা না-পেয়ে কী ভাবে তাঁদের মধ্যমগ্রাম ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে তার বিবরণ দিয়েছেন আবেদনকারী। বিমানবন্দর থানা এলাকায় চলে আসার পরেও যে তাঁরা নিরাপত্তা পাননি, সেই কথাও লেখা হয়েছে নিগৃহীতার বাবার আবেদনে। কিশোরীর মৃত্যুর পরে পুলিশের ভূমিকা কী ছিল, তা হাইকোর্টকে জানিয়েছেন মৃতার বাবা। বিশেষ করে কিশোরীর মৃতদেহ নিয়ে যে-ভাবে টানাহেঁচড়া করা হয়েছে, ডেথ সার্টিফিকেট হস্তগত করতে যে-ভাবে তাঁদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, তার সবিস্তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে আবেদনে। পুরো বিষয়টিতে তিনি যে মর্মাহত, তা-ও জানান মৃতার বাবা।
আবেদনকারীর পক্ষে সোমবার অভিযোগ করা হয়, আগুন লাগানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ খুনের মামলা দায়ের করার পরেও নমুনা সংগ্রহের জন্য ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থলে যাননি। কেননা ফরেন্সিক বিভাগকে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করার প্রস্তাবই দেয়নি পুলিশ। কিশোরীর মৃত্যুর পরে তাদের বাড়িতে লোকজন যে-ভাবে ভিড় জমিয়েছেন, তাতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা তদন্তে গিয়ে এখন আর কী পাবেন, সেই প্রশ্নও তুলেছে কিশোরীর পরিবার। ঘটনার তদন্তভার বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ হাতে নেওয়ার পরে তদন্তের ওই নানান গাফিলতি তদন্তকারীদের কাছেও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
পুলিশের এই ভূমিকার জন্যই তাঁরা সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন বলে মৃতার পরিবারের তরফে এ দিন মন্তব্য করা হয়েছে। আবেদনকারীর আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সিবিআই তদন্তের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিপূরণের দাবিও জানিয়েছেন তাঁর মক্কেল। তবে উচ্চ আদালতে আবেদনে ক্ষতিপূরণের কোনও অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি। চলতি সপ্তাহে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে মামলাটির শুনানি হবে।”
এ দিন হাইকোর্ট থেকে দিল্লি যাওয়ার জন্য সোজা বিমানবন্দরে চলে যান ওই মৃতার আত্মীয়স্বজন। সেখানে কিশোরীর বাবা বলেন, “আমরা রাষ্ট্রপতির কাছেও সিবিআই তদন্ত এবং দোষীদের ফাঁসির দাবি জানাব।” আজ, মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁদের দেখা করার কথা।
মধ্যমগ্রামের ঘটনায় যাতে সিবিআই তদন্ত হয়, তার জন্য এ দিন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। সোমবার সন্ধ্যায় ফোনে প্রদীপবাবু রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানান, রাজ্যের পুলিশের একাংশ যে-আচরণ করছে, তাতে মানুষ আস্থা রাখতে পারছেন না। তাঁদের আস্থা ফেরাতেই সিবিআই তদন্ত দরকার। সিবিআই তদন্ত যাতে হয়, সেই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেন তিনি।
হাইকোর্টে সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলা হলেও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী মধ্যমগ্রাম গণধর্ষণ ও খুনের মামলার বিচার শুরু হচ্ছে ফাস্ট ট্রাক কোর্টেই। এ দিন বারাসত আদালতে তোলা হয় গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছোট্টু-সহ ধৃত ছ’জনকে। আদালত জানিয়ে দেয়, ১৫ জানুয়ারি ফাস্ট ট্রাক কোর্টে বিচার শুরু হবে। ধৃতদের মধ্যে অ্যান্টনি সাচ্চা নামে এক অভিযুক্তকে রাজসাক্ষী করেছে পুলিশ। মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৪২।
মৃতার বাবা এ দিন জানান, দিল্লি থেকে ফিরে তাঁরা বিহারের বাড়িতে যাবেন। তবে তাঁরা যে কলকাতায় থেকেই মেয়ের সুবিচার চেয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে চান, ফের তা জানিয়ে দেন তিনি। আর জি কর হাসপাতাল সূত্রের খবর, হাসপাতালে ওই কিশোরীর চিকিৎসা ও শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষার যাবতীয় নথি তদন্তের স্বার্থে চেয়ে পাঠিয়েছে টালা থানা ও এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ। পুলিশের হাতে সেই নথি তুলে দেওয়া হচ্ছে।
এ দিন বিকেলে ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে মধ্যমগ্রামে প্রতিবাদ সভা করে তৃণমূল কংগ্রেস। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অন্যান্য তৃণমূল নেতা। মধ্যমগ্রাম কাণ্ডে অপরাধীরা ধরা পড়ার পরেও বামেরা রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার রাজনীতি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মন্ত্রীরা।
|