বামেদের তোপ মুকুলের, সিবিআই চান বিমানও
ধ্যমগ্রাম-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি ঘিরে আরও সরগরম হল রবিবাসরীয় রাজনীতি!
রাজ্য সরকার মধ্যমগ্রামে ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ করা সত্ত্বেও বামেরা বিষয়টি নিয়ে সরকারকে হেয় করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। এ প্রসঙ্গে বাম জমানার ঘটনা তুলে ধরে সিপিএমকে তোপ দেগেছেন তিনি। সরকারের বিরুদ্ধে ‘কুৎসা ও অপপ্রচারে’র জবাব দিতে রবিবার থেকেই এ নিয়ে একই সঙ্গে পথে নেমেছে তৃণমূল এবং এবং তাদের যুব সংগঠন যুবা। পক্ষান্তরে, নির্যাতিতার পরিবার গোটা ঘটনায় যে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে, তাকে এ দিন সমর্থন করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
মধ্যমগ্রাম-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসার প্রতিবাদে রবিবার পথে নামে তৃণমূল এবং ‘যুবা’।
মিছিলে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন। —নিজস্ব চিত্র।
মধ্যমগ্রাম ধর্ষণ-কাণ্ড নিয়ে ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছে প্রায় সব রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন আজ ‘আম আদমি পার্টি’র (আপ) ময়দানে নামা। কলকাতায় এ দিন যেমন তারা শ্যামবাজার মোড় থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করেছে, নিগৃহীতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধর্মতলা এবং অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে মোমবাতি জ্বালিয়েছে, তেমনই দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কে এই ঘটনার প্রতিবাদে এক সভায় সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাটের সঙ্গে সামিল হয়েছিলেন আপ নেতা তথা দিল্লির নতুন সরকারের মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ। যার জেরে প্রশ্ন উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যত্র কোণঠাসা সিপিএম কি এখন আপ-এর হাত ধরতে চাইছে? সিপিএম সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, একটি নিন্দনীয় ঘটনার বিচার চেয়ে অরাজনৈতিক প্রতিবাদে এক জায়গায় জড়ো হওয়া মানেই আপ-এর সঙ্গে সমঝোতা হয়ে যাওয়া নয়। কলকাতায় আপ-এর তরফে রঞ্জনা সিংহ বলেন, “প্রত্যেক নারী নিগ্রহের ঘটনায় আমরা দ্রুত বিচার এবং দোষীদের শাস্তি চাই।”
মধ্যমগ্রাম ধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদে ওয়েলিংটন স্ট্রিট থেকে শিয়ালদহে ট্যাক্সির মিছিল। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র।
মুকুলবাবু এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন, মধ্যমগ্রামের ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ার পরেও নির্যাতিতার পরিবারকে রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে গিয়ে রাজ্য সম্পর্কে কী বার্তা দিতে চাইছে সিপিএম? তাঁর কথায়, “রাজ্য সরকার মানবিক মুখ নিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু শান্ত বাংলাকে অশান্ত করার দানবিক চেষ্টা শুরু করেছে সিপিএম!” সিবিআই তদন্ত করে বাংলায় বিশেষ কোনও সমস্যার কিনারা হয়নি বলে দাবি করে মুকুলবাবু বলেন, “আমরা বানতলা, ধানতলা, ঘোকসাডাঙা, খেজুরি, বিরাটি থেকে সিঙ্গুর পর্যন্ত অনেক ঘটনাই দেখেছি। মধ্যমগ্রামে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার পরেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পুুলিশ চার্জশিট দিয়েছে। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে দ্রুত বিচারও চাওয়া হচ্ছে। ওই কিশোরী গায়ে আগুন দিয়েছে, না তাকে পোড়ানো হয়েছে, তা বিতর্কসাপেক্ষ। কিন্তু পুলিশ ইতিমধ্যেই খুনের মামলা দায়ের করেছে। এর পরেও সিপিএম রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে বা আরও নানা কায়দায় যা করতে চাইছে, সেটা রাজ্য সরকারকে হেয় করারই চেষ্টা!” এই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, “প্রত্যেক ব্লকে ব্লকে আমরা কড়া ভাবে অপপ্রচারের জবাব দেবো!”
বিমানবাবু আবার স্থান-তারিখ ধরে ধরে পরিসংখ্যান দিয়েছেন ২০১৩ সাল জুড়ে রাজ্যে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনার। তাঁর মন্তব্য, “আমার বাংলা এখন মা-বোনেদের বধ্যভূমিতে রূপান্তরিত হতে চলেছে!” শাসক দলের অভিযোগের জবাবে তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূল নেতৃত্বের হাতে একটা বাংলা অভিধান দিলে ভাল হয়! দানবীয় কাকে বলে? মধ্যমগ্রামের ঘটনাটা দানবীয়? না সেই ঘটনার সত্য উদঘাটনের দাবি করাটা দানবীয়?” সিবিআই-এর প্রতি অনাস্থা থাকলে অতীতে অজস্র ঘটনায় কেন তৃণমূল সিবিআই তদন্ত চাইত, সেই প্রশ্নও তুলেছে সিপিএম। বিমানবাবু বলেছেন, “বানতলা, ধানতলা হয়নি, এমন তো আমরা কখনও বলিনি! বানতলার অভিযুক্তেরা জেলে পচছে! কিন্তু ধর্ষণ, হুমকির পরেও মধ্যমগ্রামের মেয়েটির মৃতদেহ নিয়ে যা করা হয়েছে, তা কি কখনও ঘটেছে?”
এই চাপানউতোরের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওই কিশোরীর বাবা। তিনি এ দিন বলেন, “আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে তিনটে আবেদন করব। প্রথমত, দোষীদের ফাঁসি চাই। দ্বিতীয়ত, আমরা সিবিআই তদন্ত দাবি করছি। আমাদের শহরে সুরক্ষার অভাব রয়েছে। সেই সুরক্ষা দেওয়ার জন্যও রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করব।” আর বিমানবাবু বলেছেন, “পরিবারের সিবিআই তদন্তের দাবিকে আমরা সমর্থন করি।” ওই কিশোরীর বাবা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুর দু’টো নাগাদ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা। তার আগেই তাঁরা হাইকোর্টে সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলা করতে চান। দিল্লি থেকে ফিরে তারা কয়েক দিনের জন্য বিহারের বাড়িতে যাবেন। সেখান থেকে কলকাতায় ফিরে নতুন বাড়িতে উঠবেন নির্যাতিতার বাবা-মা। এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বরের মতিলাল কলোনিতে আর তাঁরা ফিরবেন না।
এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বরের ওই কিশোরীর বাড়ির কাছ থেকেই এ দিন মধ্যমগ্রাম মোড় পর্যন্ত মিছিল করে তৃণমূল। মিছিলে ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি কামদুনির মতো মধ্যমগ্রামের পরিবারকেও রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাওয়াকে ‘গিমিক’ বলে মন্তব্য করেন। মধ্যমগ্রাম-কাণ্ডে কংগ্রেস, বিজেপি ও সিপিএমের ‘কুৎসা’র প্রতিবাদে এ দিন গোলপার্ক থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত মিছিল করে তৃণমূল যুবা। মিছিলের পরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তিন শিয়ালের (কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি) এক রা! কামদুনি, মধ্যমগ্রাম করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে রাজ্য সরকারকে হেয় করার চেষ্টা করছে!” ওই ঘটনা নিয়ে বিরোধীদের পরোক্ষে কটাক্ষ করে যুবার সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কামদুনির অভিযুক্তদের জেলে পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মধ্যমগ্রাম বা এ ধরনের যে কোনও ঘটনাই বেদনাদায়ক। তবে মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করা তৃণমূলের সংস্কৃতি নয়!”
দেগঙ্গায় আবার কংগ্রেসের কর্মিসভায় গিয়ে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, “নিজের হাতে ৭-৮টি দফতরের দায়িত্ব নিয়েও মধ্যমগ্রাম বা কামদুনির মতো ঘটনা আটকাতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.