সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষে এক জন মহিলা। প্রধান বিরোধী দল হিসাবে তাদের প্রচারের বড় হাতিয়ারও রাজ্য জুড়ে ঘটে চলা একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা। এই রকম সময়ে দলের রাজ্য নেতৃত্বে আরও বেশি সক্রিয় মহিলা মুখ তুলে আনার জন্য ফের দাবি উঠতে শুরু করেছে সিপিএমের অন্দরে।
রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে সাম্প্রতিক কালে একমাত্র মহিলা মুখ ছিলেন শ্যামলী গুপ্ত। দলের মহিলা সংগঠন আলিমুদ্দিনের নেতৃত্বের কাছে বারংবার দাবি পেশ করার পরে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা পেয়েছিলেন শ্যামলীদেবী। তাঁর মৃত্যুর পরে আপাতত সেই জায়গা শূন্য। রাজ্য রাজনীতি এবং পরিস্থিতির বর্তমান চাহিদা বিচার করে প্রমীলা বাহিনীর গুরুত্ব বাড়ানো উচিত বলেই মনে করছে দলের একাংশ। যে হেতু রাজ্য কমিটিতেই এখন বেশ কয়েকটি জায়গা ফাঁকা রয়েছে, সার্বিক ভাবেই তাই মহিলা মুখ সামনে আনার সুযোগ ব্যবহার করার দাবি ফের উঠতে শুরু করেছে দলে। জেলা স্তরে যে নেত্রীরা ভাল কাজ করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে দ্রুত রাজ্য কমিটিতে নিয়ে আসার কথা ফের আলোচনায় আসছে।
গত রাজ্য সম্মেলনে সিপিএম রাজ্য কমিটিতে মহিলা সদস্য ছিলেন ৮ জন। সংখ্যালঘু মহিলা মুখ ছিল না একটিও! রাজ্য কমিটির মহিলা সদস্যদের এক জন সদ্যপ্রয়াত, এক জন অসুস্থ। এখন মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর দাবি যে ফের প্রাসঙ্গিক, তা বিলক্ষণ জানেন রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি আলিমুদ্দিন। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “শুধু মহিলা বা সংখ্যালঘু, এই ভাবে বিচার করে কমিউনিস্ট পার্টিতে তো কমিটি তৈরি হয় না! মাপকাঠি হয় নিজের নিজের ক্ষেত্রে কাজের রেকর্ডই। সেই নিরিখে প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
বস্তুত, শুধু মহিলাই নয়, বিরোধী আসনে থাকার চাহিদা বুঝে ‘সক্রিয়’ নেতাদেরই রাজ্য কমিটিতে নিয়ে আসার কথা এখন সিপিএমের অন্দরে চর্চা হচ্ছে। এবং তার সুযোগও এসেছে হঠাৎ করেই। অল্প দিনের মধ্যে প্রয়াত হয়েছেন কয়েক জন সিপিএম নেতা, যাঁদের মধ্যে তিন জন ছিলেন রাজ্য কমিটির সদস্য। শ্যামলীদেবী যেমন মহিলা সমিতির, তেমনই কালী ঘোষ এবং মৃণাল দাস রাজ্য কমিটিতে ছিলেন সিটু নেতা হিসাবে। তার মধ্যে মৃণালবাবুর আকস্মিক প্রয়াণ ঘটেছে শনিবার রাজ্য কমিটির বৈঠক শুরু হওয়ার সকালেই। যার জন্য বৈঠক স্থগিত হয়েছে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রয়াত নেতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে রবিবার। দলের একটি বড় অংশ চায়, ফেলে না রেখে লোকসভা ভোটের আগেই দ্রুত কিছু শূন্যস্থান ভরাট করে কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দেওয়া হোক। সম্মেলনের পরে ২০১২-র ডিসেম্বরে রাজ্য কমিটিতে আনা হয় ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস সিংহদের। গত মাসে রাজ্য কমিটিতে আসেন কোচবিহারের প্রদীপ রায়। এর পরেও কয়েকটি জায়গা ফাঁকা। দলেরই অন্য একটি অংশ অবশ্য মনে করে, লোকসভা ভোটের আগে তাড়াহুড়ো করে কাউকে রাজ্য কমিটিতে নিতে গিয়ে জেলা রাজনীতির সমীকরণ এ দিক-ও দিক হয়ে গেলে সঙ্কট বাড়বে! এমনিতেই চলতি বছরের শেষে স্থানীয় স্তরে সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরুর কথা। তার জন্য অপেক্ষা করাই ভাল।
সিটুর এক নেতার কথায়, “কালীদা বা মৃণালদা’র বিকল্প রাতারাতি পাওয়া যাবে না। কিন্তু কোনও জায়গাই চির কাল শূন্যও থাকবে না!” দল এখন বিরোধী আসনে। তাই কোনও ঘটনা ঘটলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে দৌড়তে পারবেন, আন্দোলনের স্বার্থে এমন মুখকেই গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা হচ্ছে সব গণসংগঠনেই। প্রশ্ন, সেই কাজ কি অবিলম্বে হবে? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলছেন, “ভোটের দিকে তাকিয়েই সব করতে হবে, এমন হবে না। আগামী সম্মেলনে সংগঠনের নানা স্তরেই রদবদল অনিবার্য।” |