নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
চলতি মরসুমে যেন শীতের পথে পথে পাথর ছড়ানো! দফায় দফায় ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ, উচ্চচাপ বলয় আর ঘূর্ণাবর্তের পরে শীতের পথে এ বার পাথর ছড়িয়ে দিল পশ্চিমী ঝঞ্ঝা।
দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা দিয়েছিল হাওয়া অফিস। কিন্তু রাজস্থান থেকে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সব গোলমাল করে দিল। রবিবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল। অঙ্কের হিসেবে এটাই মরসুমের ‘শীতলতম’। কিন্তু তাতে শীতলতা বড়ই কম! আবহবিদেরা এটাকে কড়া ঠান্ডা বলতে পারছেন না। কারণ, ১২.৪ ডিগ্রিটা স্বাভাবিকের থেকে মাত্রই এক ডিগ্রি কম। অর্থাৎ ভরা পৌষেও পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সঙ্গে কুস্তিতে শীত ফের নাস্তানাবুদ!
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমলে আবহবিজ্ঞান তাকে বলে শৈত্যপ্রবাহ। শুক্রবারেই দক্ষিণবঙ্গে দাপট বেড়েছিল শুকনো উত্তুরে হাওয়ার। পরিস্থিতি দেখেই গাঙ্গেয় বঙ্গের কয়েকটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ বার শুরু থেকেই বিভিন্ন বাধার মুখে পড়েছে শীত। হাওয়া অফিসের খবর, এ বারের বাধা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। তার দাপটে আজ, সোমবার কলকাতায় রাতের তাপমাত্রা ফের উঠে যেতে পারে ১৪ ডিগ্রির কাছাকাছি। শীতের স্বাভাবিক ঝকঝকে নীল আকাশের বদলে দেখা যেতে পারে মেঘও। |
|
যেখানে পারদ |
তারিখ |
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা |
১ জানুয়ারি |
১৪.১ (+১) |
২ জানুয়ারি |
১৩.৮ (+১) |
৩ জানুয়ারি |
১৫.৬ (+৩) |
৪ জানুয়ারি |
১২.৭ (০) |
৫ জানুয়ারি |
১২.৪ (-১) |
ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বন্ধনীতে স্বাভাবিকের কত বেশি বা কম। |
|
তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে বীরভূম, বাঁকুড়া-সহ রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতেও। পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সব জেলা তো বটেই, নদিয়া-মুর্শিদাবাদেও শনিবার শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছিল হাওয়া অফিস। কিন্তু এ দিন কোনও জেলাতেই শৈত্যপ্রবাহ হয়নি। বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমানের মতো পশ্চিমাঞ্চলের জেলায় রাতের তাপমাত্রা ৯-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে তাপমাত্রা এ দিনও স্বাভাবিকের উপরে রয়েছে। জলীয় বাষ্প বেশি থাকার জন্য রোজই দাপট দেখিয়ে চলেছে কুয়াশা।
শুধু বাংলায় নয়, শীতের দাপট কমেছে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশেও। কয়েক দিন আগেই সেখানে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছিল। হরিয়ানার হিসারে রাতের তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল শূন্য ডিগ্রির নীচে। এখন সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ফের তিন ডিগ্রির উপরে উঠে গিয়েছে।
উত্তর ভারতে বেশ কয়েক বার কনকনে শীত মিললেও বাংলার কপাল এ বার এখনও মন্দ। বড়দিনের দিন দুয়েক আগেই ঘূর্ণাবর্ত ও উচ্চচাপের জোড়া বাধায় থমকে গিয়েছিল শীত। ২৫ ডিসেম্বর থেকে ঠান্ডা পড়তে শুরু করলেও তার জোর তেমন বাড়েনি। নতুন বছরের শুরুতে শীতকে স্বমেজাজে পাওয়া যাবে বলে পূর্বাভাস ছিল আবহবিদদের। কিন্তু এখনও তার প্রমাণ মেলেনি।
কেন বারবার থমকে যাচ্ছে শীত?
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, উত্তর ভারত থেকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সরাসরি বয়ে আসছে বাংলার দিকে। তা কখনও উচ্চচাপ তৈরি করছে, কখনও বা বাড়িয়ে দিচ্ছে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। তার ফলে কুঁকড়ে আছে শীত। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সরাসরি বয়ে এলে শীত বাধা পায়। তা চলে যাওয়ার পরে উত্তুরে হাওয়ার দাপট বাড়ে।”
অর্থাৎ পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দুরন্তপনা কমলে শীতের সম্ভাবনা আছে। তাই হাল ছাড়ছেন না অনেকে। গত বছরের দৃষ্টান্তই তাঁদের আশা দিচ্ছে। এক আবহবিদ বলছেন, ২০১৩ সালে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শীত এ ভাবেই থমকে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎই পরিমণ্ডলের পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় ৯ জানুয়ারি কলকাতার শীত ছুঁয়ে ফেলেছিল লন্ডনকেও!
এ বারেও কলকাতায় তেমন হাওয়া-বদল হবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে। |