আশঙ্কা ছিল, বাস ধর্মঘটের সুযোগে দেদার বাড়বে অটোভাড়া। নিত্যযাত্রীদের থেকে শুরু করে ইউনিয়নের নেতারাও মেনে নিয়েছিলেন এ কথা। সত্যিও হল তা। যেখানে অটোভাড়া ১০ টাকা, সেখানে দিতে হল ২৫ টাকা। আবার কোথাও ১৫-২০ টাকার বদলে দিতে হল ৪০ টাকা। দিতে না পারলে অটোয় ওঠা চলবে না, সাফ জানিয়ে দিলেন চালকেরা। এ নিয়েই দিনভর নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ।
সোমবার বাসভাড়া বাড়ানোর দাবিতে অন্দোলনে নেমেছিল বাসমালিক সংগঠনগুলি। রাস্তায় সরকারি বাস থাকলেও দেখা মেলেনি বেসরকারি বাসের। উল্টোডাঙা স্টেশনেও ছিল একই অবস্থা। সকাল সাতটাতেও স্টেশন চত্বরে থিকথিক করছিল লোক। এক-একটি বাস আসতেই হামলে পড়েছেন যাত্রীরা। যদিও বাদুড়ঝোলা হয়েই ঢুকেছে বাসগুলি। তার মধ্যেই রীতিমতো ধস্তাধস্তি করে কয়েক জন উঠতে পারলেন। বেশির ভাগই অবশ্য পারলেন না। অগত্যা অটোই সম্বল। কিন্তু অটো তখন সুযোগের সদ্ব্যবহার করার অপেক্ষায়। মওকা বুঝে যে যেমন খুশি ভাড়া হাঁকলেন। আবার সুযোগ বুঝে কোনও কোনও চালক অটোয় তুলে নিলেন ছ’জন যাত্রী।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এ দিন সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে সবই তাদের নজরে রয়েছে। ভবিষ্যতে অটোচালকদের এই জুলুম চললে কঠোর ব্যবস্থা হবে।
উল্টোডাঙা থেকে সেক্টর ফাইভ যাওয়ার অটোয় তো আরও হ্যাপা। ব্যারাকপুরের চার যুবকের কাছে সরাসরি যাত্রী-প্রতি চল্লিশ টাকা ভাড়া চাইলেন চালক। তাঁরা খানিক প্রতিবাদ করলেও লাভ হল না। অটোচালক জানিয়ে দিলেন, চল্লিশ টাকাই লাগবে, না হলে নেমে যান। অথচ, ওই রুটে রোজ ভাড়া বড়জোর ১৫-২০ টাকা।
শুধু তা-ই নয়, সোমবার বাস ধর্মঘটের সুযোগে সল্টলেক, বাগুইআটি, কেষ্টপুর, লেকটাউনের বিভিন্ন রুটে বর্ধিত ভাড়া দিয়েই যেতে বাধ্য হন যাত্রীরা। উল্টোডাঙা থেকে বাগুইআটির ভাড়া শুনে চক্ষু চড়কগাছ বাগুইআটির বাসিন্দা রেখা হালদারের। রোজ যেখানে অটো ভাড়া ১০ টাকা, সেখানে এ দিন ভাড়া ছিল বেড়ে হয়েছিল ২৫ টাকা। তাতেও অবশ্য চাইলেই অটো মিলছে না। বসে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
একটি অটো এলেই সবাই ছুটছেন। একই অবস্থা উল্টোডাঙা থেকে লেকটাউন রুটেরও। সেখানেও দ্বিগুণ অটো ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করলেন নিত্যযাত্রীরা।
প্রায় একই চিত্র দমদম রোডেও। এয়ারপোর্ট এক নম্বর গেট থেকে অসুস্থ মাকে নিয়ে আর জি করে যেতে চাইছিলেন রবি চৌধুরী। বললেন, “বাস, ট্যাক্সি কিছু না পেয়ে বেশি টাকা দিয়ে অটোই ভাড়া করলাম।” সল্টলেকমুখী কাঁকুড়গাছি, ফুলবাগান, বাইপাস-বেলেঘাটা মোড়, চিংড়িঘাটা মোড়, করুণাময়ী মোড়, অন্য দিকে রাজারহাট থেকে সল্টলেকমুখী বিভিন্ন অটোরুটের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা। শুধু সকালেই নয়, অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথেও সমস্যার ছবিটা একই। বেশি ভাড়ায় নিয়ম ভেঙে অটোয় ছ’জন যাত্রী নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। অটোচালকদের একাংশের বক্তব্য, বাস না থাকায় এ দিন বেশি সংখ্যক যাত্রী নেওয়া হয়েছে।
অটোর বিরুদ্ধে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তবে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে বেশি যাত্রী নেওয়া নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “২০০টি বাস দিয়ে তো আর দু’হাজার বাসের ঘাটতি পূরণ করা যায় না। তাই কিছু ক্ষেত্রে অটো-ট্যাক্সির নিয়ম শিথিল করতেই হয়েছে।” বেশি ভাড়া নেওয়া নিয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য, “নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ট্যাক্সি ও রিকশার ক্ষেত্রেও এ দিন অভিযোগ একই। দুপুরের পর থেকে রাস্তায় কমে গিয়েছিল ট্যাক্সি। অভিযোগ, অধিকাংশই মিটারে যায়নি। নাগেরবাজার স্ট্যান্ড থেকে ট্যাক্সি ধরে অফিসে যাচ্ছিলেন অয়ন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কোনও ট্যাক্সিই মিটারে যেতে চাইছে না। মানিকতলা যেতেই ৩০০ টাকা চাইছে। কিছু করার নেই। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিতে হল।”
যদিও যাত্রীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে শাসক দলের নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, “অভিযোগ পেয়ে সকাল থেকে সল্টলেকের বিভিন্ন রুটে গিয়েছিলেন দলের নেতারা। আমাদের পরিচালনাধীন স্ট্যান্ডগুলিতে বেশি ভাড়া নেওয়া আটকানো হয়েছে। সর্বত্র অবশ্য আটকানো যায়নি। তবে বাস কম থাকায় সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্যই অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হয়েছে।” বাগুইআটি-উল্টোডাঙা রুটের তৃণমূল পরিচালিত অটো ইউনিয়নের সহ-সম্পাদক সুশান্ত মাইতি বলেন, “সকালে অভিযোগ এসেছিল ঠিকই। তাই বিকেল থেকেই উল্টোডাঙায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি। ধর্মঘটের জন্য এক-দু’টাকা বেশি চেয়েছেন চালকেরা। তবুও যাঁরা বেশি ভাড়া চেয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
|