বাসভাড়া বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে বাসমালিক সংগঠনগুলি। কিন্তু অটো সে সবের তোয়াক্কা করে না। গ্যাসের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেরাই বেশ কয়েকটি রুটে ভাড়া ইচ্ছেমতো বাড়ানো হয়েছে। অটোচালকেরা বলছেন, আজ, সোমবার ধর্মঘটের দিনে নিত্যযাত্রীদের বাসের বদলি হিসেবে অটো হয়তো মিলবে। কিন্তু আশঙ্কা, গুণাগার দিতে হবে অন্য দিনের চেয়ে ঢের বেশি।
জ্বালানির দাম বাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাত্রীভাড়া বাড়েনি। তাই আজ, সোমবার রাজ্য জুড়ে ধর্মঘটে সামিল হচ্ছে বেসরকারি বাস-মিনিবাসের পাঁচটি সংগঠন। কিন্তু তার পরেও ভাড়া বাড়বে কি না, তা নিয়ে তারা নিশ্চিত নয়। কারণ, সেটা পুরোটাই নির্ভর করে সরকারের উপরে। সাধারণ বাসের ভাড়া না-বাড়ানোর পিছনে সরকারের যুক্তি, বাসভাড়া বাড়লে সাধারণ মানুষের উপরে খরচের বোঝা বাড়বে। |
অটোর ক্ষেত্রে তা নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার অটোর ভাড়া নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। গত বছরের পুজোর আগে-পরে গ্যাসের দাম বাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কলকাতার বেশির ভাগ রুটেই অটোর ভাড়া বেড়েছে। গত সপ্তাহে ফের এক ধাক্কায় অটোর গ্যাসের দাম বেড়েছে ১১ টাকারও বেশি। এখন অটোর এলপিজি গ্যাসের দাম কেজি প্রতি ৬৫ টাকা ৫০ পয়সা। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি রুটে চালকেরা নিজেরাই ভাড়া বাড়িয়েছেন। অন্তত এমনটাই দাবি শাসক ও বিরোধী, উভয়পক্ষের অটো ইউনিয়নের নেতাদের।
সরকারি ভাবে অটোভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি বা বিরোধী সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু কেউই মুখ খুলতে চাইছে না। কিন্তু দু’টি শ্রমিক সংগঠন সূত্রের খবর, কলকাতার বেশ কিছু রুটে ইতিমধ্যেই বেসরকারি ভাবে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। সিটু-র এক নেতার কথায়, “আমরা এখনই ভাড়া বাড়ানোর কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। আমরা বরং চাই, সরকার ভাড়া ঠিক করে দিক। কিন্তু সরকার ভাড়া ঠিক করে না দিলে কোনও উপায় থাকবে না। ক’দিন পরে আমাদের ভাড়া বাড়াতেই হবে।” শ্রমিক নেতারা জানাচ্ছেন, যে ভাবে কোনও রকম আগাম নোটিস ছাড়া এক ধাক্কায় গ্যাসের দাম কেজি-পিছু ১১ টাকারও বেশি বেড়েছে, তা এক কথায় নজিরবিহীন। এর আগে সবচেয়ে বেশি গ্যাসের দাম বাড়ার পরিমাণ ছিল ৩ টাকা ১৬ পয়সা। সিটু নেতার কথায়, “এখন অটোচালকদের দৈনিক ৬০-৭০ টাকা খরচ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু মালিককে একই টাকা দিতে হচ্ছে। ফলে রোজগার কমছে। তাই ভাড়া বাড়াতেই হবে।”
একই বক্তব্য আইএনটিটিইউসি নেতাদের। তবে সংগঠনের নেতারা বলছেন, “পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করে আমরা ভাড়া বাড়াব না। সোমবার দুপুর ১২টায় মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হওয়ার কথা। তার পরেই এ ব্যাপারে আমরা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেব।” তবে আইএনটিটিইউসি নেত্রী দোলা সেনের বক্তব্য, “সরকার চায় না, ভাড়া বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হোক। আমরা তার পক্ষে। যাঁরা আমাদের নাম ব্যবহার করে অটোর ভাড়া বাড়াচ্ছেন, আমরা তাঁদের সমর্থন করি না। সিলমোহরও দিই না। তবে আমাদের সরকারের উপরে আস্থা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অটোর যে সমস্যা রয়েছে, এই সরকার ঠিকই তার সমাধান করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আমাদের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন চলবে। ভাড়া প্রত্যাহৃত না হলে আরও বড় আন্দোলনে নামব।”
তবে আজ, সোমবার বাস না-থাকার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন রুটে অটোচালকেরা যে বাড়তি লাভের কড়ি গুণতে চাইবেন, তা মেনে নিচ্ছেন ইউনিয়ন নেতারা। তাঁদের কথায়, “অতীতে এমনটা হয়নি। বাস না থাকলে আমরা বেশি করে পরিষেবা দিয়ে নিত্যযাত্রীদের সাহায্য করেছি। কিন্তু এ বারের পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই সোমবার অনেকেই মওকা বুঝে বেশি ভাড়া হাঁকাতেই পারেন।” যাত্রীদের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য রকম। সাধারণ ভাবে বাস বা ট্রেন পরিষেবা না থাকলেই ট্যাক্সি এবং অটো চালকেরা বাড়তি লাভ গুনতে রাস্তায় নেমে পড়েন। আজ, সোমবার অটোর দিক থেকে সেই সম্ভাবনা অন্য বারের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
সিটু নেতারা জানাচ্ছেন, বাস ধর্মঘট থাকায় যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে সোমবার তাঁরা কোনও বিক্ষোভ কর্মসূচি রাখেননি। কিন্তু মঙ্গলবার বেলেঘাটা-সহ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ফের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পথে নামবে সিটু-র অটো ইউনিয়নগুলি। |