এক দিকে চব্বিশ ঘণ্টার বাস-মিনিবাস ধর্মঘটের ডাক বাস-মালিকদের।
অন্য দিকে এসএফআইয়ের ছাত্র ধর্মঘটের ডাক।
দুইয়ে মিলে স্কুল-কলেজের পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা পড়েছেন চরম বিভ্রান্তি ও দুর্ভাবনায়।
স্কুলগাড়ি, স্কুলবাস এবং অটোরিকশা ধর্মঘটের বাইরে। তবু আজ, সোমবার ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো উচিত হবে কি না, তা নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অনেক স্কুলও এখনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেনি যে, আজ ক্লাস চালু রাখা হবে কি না। কিছু কিছু স্কুল অবশ্য ইতিমধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছে, আজ যথারীতি ক্লাস হবে। যে সব স্কুলের নিজেদের বাস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু অন্যান্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আজ রাস্তায় বেরিয়ে পরিবহণের অভাবে নাকাল হবে, এটা ধরে নিয়েই অভিভাবকেরা চিন্তায় রয়েছেন।
আরও আতান্তরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সোমবার বিভিন্ন কলেজে বিএ-বিএসসি পার্ট থ্রি-র টেস্ট শুরু হচ্ছে। উপরন্তু কলকাতা, রবীন্দ্রভারতী ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা হওয়ার কথা। এসএফআইয়ের ছাত্র ধর্মঘটে পরীক্ষাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সোমবার রাস্তায় বেরিয়ে বাস-মিনিবাস না মিললে পরীক্ষা দিতে যাওয়া যাবে কী ভাবে, তা ভেবে পরীক্ষার্থীদের অনেকেই চিন্তায় পড়েছেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে সোমবারের পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রবিবার রাত পর্যন্ত পরীক্ষা পিছোনোর ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। মণীন্দ্রচন্দ্র, জয়পুরিয়ার মতো বেশ কিছু কলেজে আজ, তৃতীয় বর্ষের টেস্ট হওয়ার কথা। কোথাওই পরীক্ষাসূচি বদলানো হচ্ছে না বলে বিভিন্ন কলেজ-কর্তৃপক্ষের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও পিছোচ্ছে না। প্রেসিডেন্সিতে আজ স্নাতকোত্তরের বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের প্রথম-তৃতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষা হওয়ার কথা, সকাল এগারোটা ও দুপুর দু’টো থেকে দুই পর্বে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্য এখন কোনও পরীক্ষা নেই।
ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও পরীক্ষা-সূচি না-পাল্টালেও রবীন্দ্রভারতী কোনও ঝুঁকি নেয়নি। সাধারণ ও দূরশিক্ষা দু’টি ক্ষেত্রেই তারা সোমবারের নির্ধারিত পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে। রবীন্দ্রভারতীর নিজস্ব পরীক্ষাগুলো আগামী ১৭ জানুয়ারি এবং দূরশিক্ষার পরীক্ষাগুলো আগামী কাল, ৭ জানুয়ারি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। “ছাত্র ধর্মঘটের জন্য নয়। বাস ধর্মঘটে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতে অসুবিধা হবে ভেবেই আমরা পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছি।” এ দিন বলেন তিনি। ইদানীং যে কোনও বিষয় ঘিরেই কলেজে কলেজে যে-ভাবে গোলমাল ছড়াচ্ছে, তাতে এসএফআইয়ের ছাত্র ধর্মঘটের ডাকে কলেজ-পড়ুয়াদের অভিভাবকেরাও বেশ চিন্তিত। বাস ও ছাত্র ধর্মঘটের মোকাবিলায় কলকাতা পুলিশ কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই আশ্বাসে অভিভাবকদের সংশয় কাটছে না। |