বিস্ফোরণ-কাণ্ডে তদন্তের গতি নিয়ে অসন্তুষ্ট প্রশাসন
লপাইগুড়িতে প্রাণঘাতী বিস্ফোরণের প্রায় দু’সপ্তাহ হতে চলেছে। অথচ ঘটনায় সন্দেহের তির যে ফেরার জঙ্গিদের দিকে, তাদের কাউকেই পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি। পুলিশি তদন্ত নিয়ে তাই নানা মহলে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। সেই খবর পৌঁছেছে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরেও। সরকারি সূত্রের খবর, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতিতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। কেএলও-র ৭ জন লিঙ্কম্যানকে অবশ্য গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা ওইটুকু সাফল্যে সন্তুষ্ট নন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সোমবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার জেলাশাসক-পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ‘ভিডিও কনফারেন্স’-এর সময়ে সরকারি তরফে সেই উদ্বেগ স্পষ্ট করে দেওয়া হয়। যত দ্রুত সম্ভব ফেরার জঙ্গিদের গ্রেফতারের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
যদিও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বিশদে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এদিন স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, “এ দিন ভিডিও-র মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার জেলাশাসক-পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। মালদহ থেকে শুরু করে ডুয়ার্স, ছয় জেলার নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্য সরকার নিরাপত্তা আরও নিশ্ছিদ্র করতে বদ্ধপরিকর। সে জন্য সব রকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
গত ২৬ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ির বজরাপাড়ায় ওই বিস্ফোরণে ৬ জনের মৃত্যু হয়। তদন্তে কেএলও-র দিকেই সন্দেহের তির যায় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের। কেএলও অবশ্য বিবৃতি দিয়ে ঘটনার দায় অস্বীকার করে। তারা বরং পুলিশের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে কেএলও-র কয়েকজন ফেরার জঙ্গি এই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত বলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অনেকেরই সন্দেহ। সেই মতো ‘স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ’ তৈরি করে নানা এলাকায় তল্লাশি শুরু হয়েছে। সেই মতো ইতিমধ্যেই ৭ জন সন্দেহভাজনকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। তবে যে সব ফেরার জঙ্গিদের নাম তদন্তে উঠে এসেছে, তাঁদের কাউকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।
সেই সঙ্গে, বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারের হাতে সরকারি ক্ষতিপূরণও পৌঁছয়নি। বজরাপাড়ায় নিহতদের পরিবার পিছু একজন করে ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়ার দাবি উঠলেও তা নিয়ে স্পষ্ট ভাবে সরকারি তরফে কোনও ঘোষণা করা হয়নি। সব মিলিয়ে বিরোধীরা তো বটেই, শাসক দল তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের ভূমিকায় ক্ষোভ দানা বাঁধছে। দল ও প্রশাসন সূত্রে সে খবর পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও।
এই অবস্থায়, এদিন স্বরাষ্ট্রসচিবের ভিডিও কনফারেন্সে ওই ক্ষোভের প্রসঙ্গও উঠেছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি। প্রশাসনের সূত্র অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্রসচিব জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ২০ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফরে যাবেন। তার আগেই তদন্তে আরও অগ্রগতির জন্য সবরকম চেষ্টার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের অনেকেই। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগেই যাতে বজরাপাড়ায় নিহতদের পরিবার পিছু একজন করে ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপ করার জন্যও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ-প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে।
রাজ্য কড়া মনোভাব দেখে চাপ বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কেএলও। এদিন কেএলও-র সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ কোচ টেলিফোনে এক বিবৃতিতে আগামী ১২ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে বন্ধের হুমকি দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সম্প্রতি দলের উপ সেনাধ্যক্ষ তরুণ থাপার দিদি ও জামাইবাবুকে গ্রেফতার করেছে।” ধৃতদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে, ১২ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের প্রস্তাবিত কামতাপুর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা বন্ধ-এর হুমকি দিয়েছে কেএলও।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.