পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্ব নিয়েই রাজ্য জুড়ে জল সংরক্ষণ প্রকল্প শুরুর ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কর্মসূচির নাম দিয়েছিলেন ‘জল ধরো, জল ভরো।’ রাজ্য সরকারের দাবি, এই প্রকল্পে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। অথচ সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ এ বার অভিযোগ করলেন, জল সংরক্ষণ নিয়ে যে কেন্দ্রীয় প্রকল্প রয়েছে সে ব্যাপারে বিশেষ কাজই করেনি রাজ্য সরকার। অতীতে বাম জমানাতেও হয়নি, এখনও হচ্ছে না কাজ!
রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “জল ধরো, জল ভরো রাজ্যের কর্মসূচি। তাতে আমাদের সাফল্য তুলনাহীন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে জল সংরক্ষণের টাকা সময় মতো আসেনি। ফলে কাজের অগ্রগতি তেমন নয়। ভোটের জন্যও চার-পাঁচ মাস কাজ হয়নি।” পঞ্চায়েতমন্ত্রীর পাল্টা দাবি, শুধু জল সংরক্ষণ নয়, কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু প্রকল্পেই সময়ে টাকা দিচ্ছে না। আজ শুক্রবারই জয়রামের কাছে এ নিয়ে তিনি দরবার করতে যাচ্ছেন। রাজ্যের হাজার কোটি টাকা পাওনা যাতে দিল্লি এখনই মিটিয়ে দেয়, সে জন্য মন্ত্রীকে অনুরোধ জানাবেন।
কেন্দ্রে দ্বিতীয় ইউপিএ জমানার শুরুতে ২০০৯-১০ আর্থিক বছরে জল সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রকল্পটি শুরু করেছিল মনমোহন সরকার। লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ইস্তেহারের অন্যতম বিষয় ছিল এটি। জয়রামের বক্তব্য, প্রকল্পটির ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভাল করেই জানেন। কারণ, জল সংরক্ষণ প্রকল্পটি যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ছাড়পত্র দেয় তখন রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, তাতে লাভ হল কী?
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক জানাচ্ছে, ২০০৯-১০ থেকে শুরু এ যাবত পশ্চিমবঙ্গে জল সংরক্ষণের জন্য ৬৭০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। সে জন্য এখনও ৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। প্রশ্ন উঠতেই পারে প্রকল্প অনুমোদনের নিরিখে কেন্দ্রের বরাদ্দ নগণ্য। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে জয়রাম জানিয়েছেন, “কেন্দ্রের বরাদ্দ করা ৫৭ কোটি টাকার প্রায় গোটাটাই রাজ্যের হাতে পড়ে রয়েছে। কার্যত কিছুই খরচ করতে পারেনি রাজ্য। কেন্দ্রকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো রাজ্য সরকার যদি কাজ করত, তা হলে গত চার বছরে কিছু না হোক অন্তত আরও ২৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ পেতে পারত।”
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নে জল সংরক্ষণের প্রকল্প বরাবরই ছিল। কিন্তু এ রাজ্যের সাফল্য কোনও কালেই তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না। দ্বিতীয় ইউপিএ জমানায় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক নতুন করে এই প্রকল্পটির কিছু অদলবদল করে। তাতে ওয়াটারশেড ম্যানেজমেন্ট কর্মসূচিতে বর্ষার জল ধরে রাখা এবং ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয় বাড়ানোর দিকেই রাজ্যগুলিকে তৎপর হতে বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গে ‘জল ভরো, জল ধরো’ প্রকল্পের উদ্দেশ্যও কার্যত সে রকমই। এমনকী দ্বাদশ যোজনার খসড়াতেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছে। যার আওতায়, পুকুর, খাল ইত্যাদি কেটে যথাসম্ভব জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে সেচ ও মাছ চাষের সুযোগ তৈরি হয়। তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, জল সংরক্ষণ প্রকল্প যথাযথ রূপায়ণ না করার জন্য জয়রাম অন্য রাজ্যগুলিরও সমালোচনা করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “একমাত্র কর্নাটক ছাড়া আর কোনও রাজ্যই প্রত্যাশা মতো এই প্রকল্প রূপায়ণ করতে পারেনি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। তাই প্রকল্পটি যাতে ঠিক ভাবে রূপায়িত হয় সে জন্য আপনার হস্তক্ষেপ দাবি করছি।”
|