নতুন ইনিংস শুরু করার আগে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সদলবল ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ করে এলেন সোমেন মিত্র। তৃণমূল ছেড়ে আর এক সপ্তাহের মধ্যে পুরনো দলে ফিরছেন সোমেনবাবু। ২১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর কংগ্রেসে ফের যোগ দেওয়ার কথা। তার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
সোমেনবাবু সাক্ষাৎকার নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। বৃহস্পতিবার তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “এটা একান্ত সৌজন্য সাক্ষাৎ।” তাঁর ৮ অনুগামীকে নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সোমেনবাবু। প্রায় ৪০ মিনিট ছিলেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁরা ছবিও তুলে এসেছেন। সোমেনবাবুর দীর্ঘ দিনের বিশ্বস্ত অনুগামী বাদল ভট্টাচার্য, সুবিমল মিত্র, অমিত ঘোষ, প্রদীপ মজুমদার প্রমুখ সঙ্গে ছিলেন। তাঁদেরই এক জনের কথায়, “সোমেনদার সঙ্গে আমরাও তো নয়া ইনিংস শুরু করতে চলেছি! তার আগে একদা যিনি আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক ছিলেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করে এলাম। এটা একান্তই সৌজন্য।”
পুরনো দলে তাঁর প্রত্যাবর্তনের পালায় বলতে গেলে একা সোমেনবাবুই কুশীলব। তৃণমূলের কোনও জনপ্রতিনিধি দূরে থাক, দলের কোনও শীর্ষ নেতাই তাঁর সঙ্গী হচ্ছেন না। এমনকী, তৃণমূলের সাসপেন্ডেড বিধায়ক, সোমেনবাবুর স্ত্রী শিখা মিত্রও নয়! সোমেনবাবুর সঙ্গে একমাত্র অমিতেরই আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার কথা। সোমেনবাবু স্পষ্টই বলছেন, “যে দিন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছিলাম, সে দিন কাউকে ডাকিনি। তেমনই তৃণমূল যে দিন ছাড়ছি, সে দিনও কাউকে ডাকছি না! যাঁর ইচ্ছে হবে আসবেন। শিখার ক্ষেত্রেও তা-ই বলছি!” তবে সোমেন-ঘনিষ্ঠেরা জানান, তাঁর বিধায়ক তহবিলের টাকায় এলাকা উন্নয়নে কিছু প্রকল্পের কাজ চলছে বলেই শিখাদেবী এখন দলত্যাগ করছেন না।
লাগাতার ভাঙনের মুখে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব সোমেনবাবুর ফেরা নিয়ে স্বভাবতই উৎসাহিত। অধীর চৌধুরীর কথায়, “আমাদের উল্কাপাত হয়েছে! সোমেনদার দলত্যাগে তো তৃণমূলের নক্ষত্রপাতের শুরু হচ্ছে!’’ মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির পাঁচ সদস্য ও মাড়গ্রামের পঞ্চায়েতের ৪ কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে এসেছেন। আসানসোলের আইনজীবী রমেশ তিওয়ারির নেতৃত্বে ১৭ জন তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে আসার জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের কাছে আবেদন জানান। তা উল্লেখ করেই প্রদীপবাবুর দাবি, “জানুয়ারি থেকেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া শুরু! সোমেন আসার সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলে ভাঙন প্রবল হবে!”
সোমেনবাবুর কংগ্রেসে আসাকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে বিধান ভবন। বিশাল বিশাল ফ্লেক্সের বরাত দেওয়া হয়েছে। ফ্লেক্সে লেখা থাকবে ‘আপসহীন নেতার ঘরে ফেরা, লড়াই শুরু ঘুরে দাঁড়ানোর’! যোগদানের দিন বিধান ভবনের সামনে বিরাট মঞ্চ করে সমাবেশের আয়োজন করছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সমাবেশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে শুরু করে দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রতিনিধিদেরও থাকার কথা। প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির ফেরা উদ্যাপনের জন্য বজবজে আতসবাজির অর্ডার দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা সন্তোষ পাঠক! প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভচক্রবর্তীর কথায়, “রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীদের কাছে আমরা বার্তা দিতে চাই, কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তাই সোমেনদা’র কংগ্রেসে ফিরে আসার অনুষ্ঠানটা আমরা সাড়ম্বরে করতে চাই।”
কিন্তু কংগ্রেসেরই একাংশের আশঙ্কা, সোমেনবাবু আসায় দলের বিশেষ লাভ হবে না। বরং এই নিয়ে বেশি উচ্ছ্বাসে হিতে-বিপরীত হতে পারে। তৃণমূল আরও আগ্রাসী হতে পারে কংগ্রেস ভাঙতে। প্রদীপবাবু বলেন, “ভাঙন মোকাবিলায় আমরাও প্রস্তুত! আমাদের ভাঙলে, ওদেরও ভাঙন হবে, প্রমানিত হচ্ছে তো!
তৃণমূল কংগ্রেসের সোমেন-কেন্দ্রিক উচ্ছ্বাসকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। তবে দলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, “সোমেনবাবু অনেক দিনই আমাদের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে উনি চলে গেলে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না।”
|