হুমকি, পাল্টা হুমকির চক্করে জট বহাল বাসভাড়ার
ক পক্ষ বারবার বাস দখল ও জরিমানা করার হুমকি দিচ্ছে। অন্য পক্ষের হুমকি ধর্মঘটের। আর এই হুমকি এবং পাল্টা হুমকির মধ্যে আসল সমস্যাটাই ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। পরিবহণ শিল্পকে বাঁচাতে বাসভাড়া যে না-বাড়ালেই নয়, সেই সমাধানের পথে হাঁটছেই না রাজ্য সরকার।
ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে বাস-মালিকেরা বারবার ধর্মঘটের পথে যাচ্ছেন। তাতে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রাজ্য সরকার ভাড়া না-বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অটল থাকায় আরও একটা ধর্মঘটের হুমকি দিচ্ছেন বাস-মালিকেরা। দু’টি ধর্মঘটের মধ্যবর্তী পর্যায়ে বেড়ে যাচ্ছে জ্বালানি এবং নানান যন্ত্রাংশের দাম। ফলে রাস্তা থেকে উঠে যাচ্ছে বাস। ভোগান্তি বাড়ছে আমজনতারই।
৬ জানুয়ারির বাস ধর্মঘটের পরে ফের হুমকি এবং পাল্টা হুমকি শুরু হয়ে গিয়েছে। যে-সব বাস-মালিক ৬ জানুয়ারির ধর্মঘটে বাস বার করেননি, তাঁদের জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বৃহস্পতিবার জানান, আগামী সাত দিনের মধ্যে ওই সব বাস-মালিকের কাছ থেকে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হবে। ধর্মঘটে যোগ দেওয়া বাসের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানান।
জরিমানার সিদ্ধান্ত ছাড়াও অন্য ভাবে বাস-মালিকদের চাপ দিচ্ছে সরকার। ঠিক হয়েছে, জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন বা জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে বাস নিয়ে যাঁরা সরকারকে কিস্তির টাকা দিতে পারছেন না, তাঁদের বাস বাজেয়াপ্ত করা হবে। মন্ত্রী জানান, ইতিমধ্যেই বেলঘরিয়ায় এই ধরনের চারটি বাস আটক করা হয়েছে। বাস-মালিকেরা বলছেন, প্রতি বার ধর্মঘটের পরেই পরিবহণমন্ত্রী তাঁদের চাপে রাখতে এমন হুমকি দেন। কিন্তু মন্ত্রী নিজেও জানেন, এই দমনমূলক নীতি কার্যকর হলে রাস্তা থেকে সব বাস উঠে যাবে। তাই হুমকি আর কার্যকর হয় না।
বাস-মালিকেরা বলছেন, “৬ জানুয়ারির ধর্মঘটে রাজ্যের প্রায় ৫০ হাজার বাস যোগ দিয়েছিল। তাই মন্ত্রী যদি বলেন, প্রতিটি বাসের পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা হবে, তা হলে তো জরিমানা বাবদই আমাদের ২৫ থেকে ৫০ কোটি টাকা সরকারের ঘরে তুলে দিতে হয়!” বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতা দীপক সরকারের বক্তব্য, আইনের কোন ধারায় মন্ত্রী এই জরিমানা করবেন, সেটা বলেননি। বলতেও পারবেন না। তাঁর প্রশ্ন, “এ ভাবে টাকা আদায় করা কি আইনসম্মত?” মন্ত্রীর বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক এবং নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এর পরে আর কেউ নতুন বাসের পারমিট নিতে চাইবেন না। মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনে আইনের পথে যাব।”
দেড় বছরে কয়েক দফায় ডিজেলের দাম বেড়েছে লিটার-প্রতি আট টাকা। বেড়েছে অন্যান্য খরচও। তবু অর্থনীতির অঙ্ক মেনে বাসভাড়া বাড়াতে রাজি হয়নি সরকার। বাস-মালিক সংগঠনগুলি ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বারবার সরকারের কাছে দরবার করেছে। কোনও লাভ হয়নি। গত ৬ জানুয়ারি একসঙ্গে বাস ধর্মঘট ডাকে রাজ্যের পাঁচটি বাস-মালিক সংগঠন। ফলে ওই দিন সর্বাত্মক বাস ধর্মঘট হয় রাজ্য জুড়ে। নাকাল হতে হয় নিত্যযাত্রীদের। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, এর পরেও বাসভাড়া বাড়ানো নিয়ে সরকার আগের অবস্থানে অনড় রয়েছে। পরিবহণমন্ত্রীর কথায়, “সরকার এখনও মনে করে, ভাড়া বাড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই। বাড়ালে সাধারণ, অসহায় মানুষের উপরে বোঝা বাড়বে বলে মনে করছে সরকার।”
জরিমানা ছাড়াও নেহরু মিশনের বাস আটক করার সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন বাস-মালিকেরা। তপনবাবুর বক্তব্য, ওই বাস চালাতে খরচ আরও বেশি। তাই ঋণের কিস্তির টাকা দিতে গেলে বাসই বন্ধ করে দিতে হবে। তিনি বলেন, “সরকার এক দিকে বলছে, ভাড়া না-বাড়িয়ে বাস চালাতে হবে। আবার এই কারণেই কিস্তির টাকা দিতে না-পারলে বাস কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। তবে সরকার যদি আমাদের বাস কেড়ে নিয়ে লোকসানে চালাতে চায়, আমাদের কোনও আপত্তি নেই।”
বাস-মালিকেরা জানান,আজ, শুক্রবার তাঁদের পাঁচটি সংগঠন হাওড়ায় ফের বৈঠকে বসবে। সেখানে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে আরও তীব্র আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.