সাদা-কালো ফটোয় রজনীগন্ধার ফুল! যদিও ভীষণ ভাবে প্রতীকী। বহরমপুর লাগোয়া বানজেটিয়ার প্রভারানি পাবলিক স্কুলের অফিস কার্যালয়ের দেওয়ালে এ ভাবেই ‘স্মৃতি’ হয়ে রয়ে গেল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী আত্রেয়ী বসু।
সোমবার বিকেলে বৃদ্ধা প্রভা দাস, তাঁর ভাইঝি বিজয়া বসু ও বিজয়াদেবীর তরুণী মেয়ে আত্রেয়ীয়ের নিস্পন্দ দেহ কাদাই অঞ্চলের একটি আবাসনের ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙে উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরেই মঙ্গলবার ওই ছাত্রীর স্মরণে স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়। ‘ভাল ছাত্রী’ হিসেবে পরিচিত আত্রেয়ীর অনুপস্থিতিতে বানজেটিয়ার ওই স্কুল জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে একরাশ শূন্যতা। ওই ঘটনার চার দিন পরেও এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক হতে পারেননি শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে ছাত্রছাত্রী-সহপাঠী সকলেই। ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ করে দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের আত্রেয়ীর সহপাঠীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসও উধাও! |
যেমন আত্রেয়ীর ‘ঘনিষ্ঠ’ সহপাঠী তামান্না আহমেদ বা অলিভা সাহা এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তার মধ্যে বুধবার বহরমপুর থানার পুলিশ গোরাবাজারের বাড়িতে গিয়ে তামান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসেছে। তার পর থেকে দেখা করা তো দূর অস্ত্! তামান্নাকে ফোনেও ধরা যাচ্ছে না। মোবাইলে ফোন করলে ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, “মেয়ের সঙ্গে আত্রেয়ীর ঘনিষ্ঠতা ছিল। এক জন গৃহশিক্ষকের কাছে ওরা দু’জনে অঙ্ক করত। কিন্তু ওই ঘটনার পরে মেয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।” একই অবস্থা অলিভা সাহারও। পরীক্ষার আর দু’মাসও বাকি নেই। তার মধ্যে আত্রেয়ীয়ের ওই ঘটনা ঘটে যাওয়ায় পড়াশোনায় মনোসংযোগ করতে অসুবিধে হচ্ছে বলেও দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী অলিভা জানান স্কুল শিক্ষকদের।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি ওই ছাত্রীর শ্রদ্ধাবোধ ও সহপাঠীদের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথাও শোনা গিয়েছে এদিন স্কুলে। সেই সঙ্গে ভারতনাট্যম থেকে সৃজনশীল নাচেও বিশেষ পারদর্শী ছিলেন তিনি। স্কুলের শিক্ষক শক্তিপদ দত্ত বলেন, “স্কুলের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভীষণ শ্রদ্ধা করত, যা বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচরাচর দেখা যায় না। সেই সঙ্গে সহপাঠীদের সঙ্গেও তার খুব ভাল
সম্পর্ক ছিল।”
মহেন্দ্রবাবু অবশ্য বলেন, “শুক্রবার সকালে আমার কাছে পড়তে এসেছিল। ফের বুধবার পড়তে আসার কথা বলে যায়। কিন্তু ওই দিন তার আচরণে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখিনি।” একই কথা বলেন বাংলার শিক্ষিকা প্রকৃতি সাহাও। প্রকৃতিদেবী বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় সোয়া ৫টা নাগাদ আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় আত্রেয়ী। কিন্তু কোনও অস্বাভাবিক আচরণ চোখে পড়েনি। আসলে ভীষণ চাপা স্বভাবের মেয়ে ছিল।” |