সেই গোয়া থেকে দু’জনের পেশাদারি লড়াই। দু’জনের কোচিং দর্শনও কোনওদিন এক বিন্দুতে মিলেছে বলে শোনা যায় না। যুবভারতীতে সেই দুই কোচ ফের মুখোমুখি শনিবার।
কিন্তু সেই দ্বৈরথের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রথম জনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দ্বিতীয় জন যে চোখ টাটাবেন তা কে জানত! বললেন, “গত কয়েক বছরে একই দল ধরে রাখার সুফল পেয়েছেন। ফুটবলাররাও দলটার সঙ্গে একাত্ম হয়েছে। তাই এই সাফল্য। তবে শনিবারের ডার্বিতে কিন্তু আমরা ছেড়ে দেব না। লড়াই হবে।”
প্রথম জন আর্মান্দো কোলাসো এই শহরে পা দিয়েছেন তিন মাস আগে। ইস্টবেঙ্গল কোচের জুতোয় পা গলিয়ে বুধবারই তিনি পেয়ে গিয়েছেন কলকাতা ময়দানে প্রথম ট্রফির স্বাদ। লিগ জয়ের একদিন পরেও তাঁর কানে বাজছে, “বার বার পঁয়ত্রিশ বার। ব্যাক টু ব্যাক চার বার।”
দ্বিতীয় জন করিম বেঞ্চারিফা। ১৪ মাসেও যিনি মোহনবাগানকে ট্রফি এনে দিতে পারেননি। এ বারেও ঘরোয়া লিগ গিয়ে উঠেছে সেই আর্মান্দোর লাল-হলুদ তাঁবুতেই। খেতাবের ফয়সালা হয়ে গিয়েছে। শনিবার কলকাতা লিগের ডার্বিতে আর্মান্দোর ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে সেই উত্সব ম্লান করতে পারবেন?
বৃহস্পতিবার সকালে যুবভারতীতে ওডাফাদের অনুশীলন শেষে এই প্রশ্নে ম্লান হাসি করিমের মুখে। বললেন, “ইস্টবেঙ্গল লিগ জিতে গেলেও ডার্বি ম্যাচের উত্তাপ, ঐতিহ্য জানে। জানে আমাদের ছেলেরাও। চাপ না থাকলেও সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতেই আমরা ম্যাচটা জিততে চাই।” |
ডার্বি-যুদ্ধের প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার মোহনবাগান মাঠে ওডাফা। ছবি: উত্পল সরকার। |
কিন্তু আর্মান্দো যে এই ম্যাচকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। মুহূর্তে মুখের ভূগোল বদলে যায় মরক্কান কোচের। বললেন, “সেটা ওঁর ব্যাপার।” আর আর্মান্দোর সেট টিম পেয়ে যাওয়ার সুবিধা? কর্তারা কি আপনাকে তা দিতে ব্যর্থ? মণীশ, নবি, জুয়েলরা দল ছাড়ার সময় আটকাতে পারলেন না কেন? উত্তর না দিয়ে হনহন করে যুবভারতীর এবি কাটআউটের দিকে হাঁটা দিলেন মোহন কোচ।
তাঁর হয়ে উত্তরটা দিলেন বাগানের অর্থ-সচিব দেবাশিস দত্ত। বলছেন, “কোচের আফশোস কিছুটা হলেও মানছি। তবে আমাদের বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগেই ইস্টবেঙ্গল টানা দশ ম্যাচ জিততে পারেনি (আটটা জয়, দু’টো ড্র)। ওরা কিন্তু সেই দলই ধরে রেখেছে।” কিন্তু সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ট্রফি না পেয়ে অধৈর্য সবুজ-মেরুন সমর্থকরা যে শনিবারের ম্যাচ নিয়ে বলতে শুরু করেছেন, “ট্রফির বদলা ডার্বি।”
ফেড কাপের আগে তাই বদলা নিতে মরিয়া সবুজ-মেরুন শিবির নিজেদের চনমনে রাখতে একটা মরণ কামড় দিতে চাইছে শনিবারের ডার্বিতে। এ দিন অনুশীলনেও আক্রমণের অনুশীলন হল জোরকদমে। আই লিগের প্রথম পর্বের ম্যাচে লালরিন্দিকার দুরপাল্লার শট হারিয়ে দিয়েছিল করিমের দলকে। তাই দুই সাইড ব্যাক প্রীতম কোটাল এবং সৌভিক ঘোষ-সহ গোটা দলকেই পইপই করে বলা হয়েছে ‘সেকেন্ড বল’-এ বিপক্ষ যেন আক্রমণ শানাতে না পারে। অনুশীলন দেখে বোঝা গেল, মহমেডান ম্যাচের মতোই ৪-১-৪-১ ছকই ডার্বি জয়ের অঙ্ক বাগান কোচের নোটবুকে। বাগান শিবিরের রণকৌশল, এই ছকে আক্রমণে যেমন পাঁচ জন যাবেন, তেমনই রক্ষণে পাঁচ জন নামবেন।
যদিও করিমের এই কৌশল ঘিরে প্রশ্নও রয়েছে। মহমেডান ম্যাচেই দেখা গিয়েছে, ডেনসন চার ব্যাকের আগে দাঁড়িয়েও দুই স্টপারের মাঝে ঢুকে পড়ছেন। ফলে মাঝমাঠে জায়গা পাচ্ছে বিপক্ষ। আর আক্রমণে ওডাফা একা হয়ে পড়ছেন বারবার। সাবিথরা আক্রমণকে সাপোর্ট দিতে পারছেন না। গোলের মধ্যে থাকা চিডি-মোগা এই সুযোগ কাজে লাগালে ফের সেই ব্যর্থতার আঁধার তাড়া করবে ফেড কাপের আগে।
তা হলে? বাগান কোচের মুখে আঙুল। কথা নেই ধীরে ধীরে ফিট হওয়া ওডাফার মুখেও। চোয়াল শক্ত করে ক্রিস্টোফারকে গাড়িতে বসিয়ে অনুশীলন শেষেই বেরিয়ে গেলেন। কলকাতা লিগে ক্রিস্টোফার নেই। আর মোগাদের সামলানোর জন্য বাগান কোচের পছন্দের তালিকায় ইচেই পয়লা নম্বরে। ফলে প্রথম দলে কাতসুমির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে অনেক ‘যদি’, ‘কিন্তু’ রয়েছে। পাশাপাশি, ফেড কাপের কথা ভেবে রাম মালিককে বাইরে রেখেই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন করিম বেঞ্চারিফা।
এই পরিস্থিতিতেও ডার্বি জিতে ইস্টবেঙ্গলের লিগ জয়ের উত্সব কিছুটা ফিকে করা যাবে কি? সন্দীপ নন্দীরা কিন্তু বলে গেলেন, “জেতার জন্যই শনিবার মাঠে নামব আমরা।” |