ডার্বি না ফেড কাপ? পরের লক্ষ্য কী? তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল শিবিরে।
এক মেরুতে আর্মান্দো কোলাসো, অন্য মেরুতে ফুটবলাররা।
বুধবার কলকাতা লিগ জয়ের পর আর্মান্দো বলে দিয়েছেন, “চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়ার পর আর ডার্বি ম্যাচের কোনও গুরুত্ব নেই। মোহনবাগানও নিশ্চয়ই সেটাই ভাববে। বরং আমি ফেড কাপের কথাই এখন ভাবতে চাই। ফেড কাপের পর আই লিগ। ইস্টবেঙ্গল তো বহু বছর আই লিগ ছুঁতে পারেনি।”
কিন্তু কোচের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না মেহতাব-চিডি-সুয়োকারা। তাঁদের কাছে ডার্বির আবেগই আলাদা। টিম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও যা জেতার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন ওঁরা। কোচের পাশে বসেই তাই অধিনায়ক মেহতাব হোসেন বলে দিলেন, “ডার্বি জিততে না পারলে তো লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়াই মাটি হয়ে যাবে। সমর্থকরাও হতাশ হবেন। মোহনবাগানকে হারিয়েই অপরাজিত অবস্থায় লিগ শেষ করতে চাই।”
কলকাতা লিগ জেতার পর ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর বাইরে অকাল হোলির পরিবেশ। লাল-হলুদ আবির মেখে জয়ের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছিলেন সমর্থকরা। আবিরের সঙ্গে মশাল-ফ্ল্যাগ নিয়ে সমর্থকদের হুল্লোড়। তারকা ফুটবলারদের নামে জয়ধ্বনি। কিন্তু বাইরের সঙ্গে আর্মান্দোর টিমের ড্রেসিংরুমের যেন কোনও সম্পর্কই নেই। শান্ত। নির্লিপ্ত।
উচ্ছ্বাসের ছিটেফোঁটাও নেই সেখানে। উল্টে ডার্বির আগে যাতে আত্মতুষ্টি না আসে, সে জন্যই যেন বাড়তি সতর্ক লাল-হলুদ ব্রিগেড। চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে গোল করার পরও চিডি বলছিলেন, “যে-সমর্থকরা আজ আমাদের নিয়ে এত নাচানাচি করছেন, ডার্বি জিততে না পারলে এঁরাই আমাদের কিন্তু ঢিল ছুড়বেন। ডার্বিটা আমাদের কাছে সম্মানের লড়াই। ওই ম্যাচ জিতেই সেলিব্রেট করব।” চিডির কথার রেশ ধরে বহু দিন ডার্বি খেলা সৌমিক দে-ও বললেন, “মোহনবাগানকে হারাতে না পারলে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদই নষ্ট হয়ে যাবে।” |
ইস্টবেঙ্গলের বিতর্কিত ফুটবলার জেমস মোগাও বুঝে গেছেন ডার্বির গুরুত্ব। বলেও দিলেন, “গত তিন মাস ধরে ‘গো-ব্যাক মোগা’ শুনতে শুনতে পাগল হয়ে গিয়েছি। লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর যাঁরা আমাকে আদর করেছেন, ডার্বিতে গোল না করতে পারলে তাঁরাই আবার গালিগালাজ করবেন।” সুয়োকা চাইছেন, ডার্বিতে গোল করে কালীঘাট এমএসের বিরুদ্ধে পেনাল্টি মিসের আক্ষেপ ভুলতে। বললেন, “ডার্বিতে গোল করে আফসোসটা মেটাতে চাই।”
লিগ জেতার পরও ডার্বির চিন্তায় যখন ডুবে ফুটবলাররা, তখন কোচের চিন্তা একেবারে বিপরীতমুখী। যা নতুন বিতর্ক জন্ম দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। ডার্বির কৌশল ঠিক করার বদলে আর্মান্দো এখন থেকেই খাতা-কলম নিয়ে ফেডারেশন কাপের অঙ্ক কষা শুরু করে দিয়েছেন। মাথায় রেখেছেন আই লিগ।
আসলে গোয়ায় চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াই শেষ হয়ে গেলে গোয়ান ডার্বির আলাদা করে কোনও গুরুত্ব থাকে না। কলকাতার মতো ওখানে সমর্থকরাও না কি এত আবেগপ্রবণ নন। গোয়া থেকে এ বারই ইস্টবেঙ্গলে খেলতে আসা জোয়াকিম আব্রাঞ্চেসের কথাতেই তা পরিষ্কার। বলছিলেন, “কলকাতার মতো ফুটবল নিয়ে এত আবেগ গোয়ায় নেই। বড় দলগুলোর মধ্যে ম্যাচে স্টেডিয়ামে ভিড় হয়। কিন্তু হেরে যাওয়ার জন্য কাউকে কখনও কাঁদতে দেখিনি। যা কলকাতায় দেখেছি।” সে জন্যই কি ডার্বির আবেগটা এখনও বুঝে উঠতে পারেননি কলকাতায় আসা প্রথম গোয়ান কোচ? নাকি চূড়ান্ত পেশাদার বলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অন্য কোনও ম্যাচকে পাত্তা দিতে নারাজ কোলাসো। তা সে ম্যাচ ঘিরে যতই আবেগের বিস্ফোরণ ঘটুক।
ইস্টবেঙ্গলকে লিগ চ্যাম্পিয়ন করার পর আজ বৃহস্পতিবার সকালেই পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গোয়ায় উড়ে যাচ্ছেন আর্মান্দো। ডার্বি ম্যাচের জন্য অবশ্য শনিবার দুপুরেই ফিরে আসছেন। রিজার্ভ বেঞ্চেও বসবেন। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরই আবার তাঁর ফিরে যাওয়ার কথা। গোয়া থেকে সরাসরি ফেড কাপের আসরে মানজেরিতে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন লাল-হলুদ কোচ।
আর্মান্দো গুরুত্ব না দিলেও ডার্বি নিয়ে সদস্য-সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের পারদ এ দিন থেকেই কিন্তু চড়তে শুরু করেছে। লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে আর্মান্দো বাহিনীকে শুনতে হয়েছে, “মোহনবাগানকে হারাতে হবে কিন্তু।” |