আতঙ্ক কাটেনি, পর্যটকদের ভিড় উধাও উত্তরাখণ্ডে
পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরে পড়ছে সে। রামধনুর রঙে আরও এক ধাপ বেড়ে গিয়েছে তার জৌলুস। বিগত কয়েক বছরে এই দৃশ্যের সাক্ষী হতে দেশ -বিদেশের প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন পর্যটকেরা।
কিন্তু আজ সে বড় একা ! সামনে বসার জায়গাটিও খাঁখাঁ করছে। মুন্সিয়ারি যাওয়ার পথে পড়ে এই পাহাড়ি ঝরনা, বিরথি। যেখানে পর্যটকদের ভিড় প্রতি বছর উপচে পড়ত, উত্তরাখণ্ডের সেই সব জায়গা এখন প্রায় পর্যটকহীন।
গত জুনে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির জেরে অলকানন্দা এবং মন্দাকিনীর জল আছড়ে পড়েছিল চামোলি, উত্তরকাশী, রুদ্রপ্রয়াগে। কুমায়ন হিমালয়ের অংশটি অক্ষত থাকলেও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল গড়বাল (রুদ্রপ্রয়াগ, কেদারনাথ, উত্তরকাশী ) বার গড়বালে পর্যটক তো নেইই, খালি পড়ে আছে কুমায়ুনও। উত্তরাখণ্ডের জনসংযোগ অফিসার মালেশ্বর কালকুরি বলেন, “বিপর্যয়ের প্রভাব শুধুমাত্র গড়বালেই সীমাবদ্ধ ছিল। কুমায়ুন সুরক্ষিত। তা সত্ত্বেও শীতের চলতি মরসুমে এই অংশে পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই কম।”
পর্যটক আসছেন না কেন কুমায়নে? প্রশ্নটা উত্তরাখণ্ডের অফিসারদের মনেও ঘুরপাক খাচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, পর্যটকদের মনে ভয় ঢুকেছে। রাজ্য সরকার সব রকম চেষ্টা করছে ভয় তাড়াতে। উত্তরাখণ্ড পর্যটন বিকাশ নিগমের ডিরেক্টর (অতিরিক্ত ) অনিলকান্ত দ্বিবেদীর বক্তব্য, পর্যটকেরা গড়বাল বা কুমায়ুনের মধ্যে তফাৎ করতে পারেন না। যেমন গড়বালের কেদারনাথ -বদ্রীনাথের সঙ্গে তাঁরা হয়তো কুমায়ুনের নৈনিতাল, করবেট ন্যাশনাল পার্ক ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করেন। ফলে গড়বালের বিপর্যয়ও পরোক্ষ প্রভাব ফেলেছে কুমায়ুনের উপরে। তবে উপায়? অনিলকান্তবাবু জানিয়েছেন, বিপর্যয়ের ফলে রাজ্যের ১০ % অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চামোলি, উত্তরকাশী এবং রুদ্রপ্রয়াগ। বাকি অংশ ঠিক রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ১০ % অংশটিতেও মেরামতির কাজ চলছে। খুব তাড়াতাড়ি সেখানেও পর্যটকেরা যেতে পারবেন বলে তাঁর আশা।
গড়বালের আতঙ্কের জের কুমায়ুনেও। ফাঁকাই পড়ে নৈনিতাল। দেবস্মিতা চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
কুমায়ুন হিমালয়ের মাত্র দু’টি জেলা (পিথোরাগড়, বাগেশ্বর ) আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু আলমোড়া, নৈনিতাল, চম্পাবত -সহ বাকি জেলাগুলি অক্ষত রয়েছে বলে পর্যটন বিকাশ নিগমের দাবি। অক্ষত থাকা জায়গার মধ্যেই রয়েছে নৈনিতাল থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে প্যানগট। সেখানে ২০০ - বেশি পাখির প্রজাতির দেখা মেলে। প্রতি বছর সেখানে পাখিপ্রেমীদের ঢল নামলেও বারে কয়েক জন বিদেশি পর্যটক ছাড়া কেউ যাননি। কুমায়ুন মণ্ডল বিকাশ নিগমের (কেএমভিএন ) অফিসার সতেন্দ্রপ্রসাদ জুয়েল জানান, গত মরসুমে শুধুমাত্র কলকাতা থেকেই মুন্সিয়ারি, রানিখেত, কৌশানি, চৌকরি, বিনসরে এক কোটি ১৫ লক্ষ টাকার বুকিং হয়েছিল। চলতি বছরে সেই অঙ্কটা মাত্র ৬০ লক্ষে ঠেকেছে।
কী বলছেন কলকাতায় কুমায়ুন পর্যটনের বুকিং এজেন্টরা? এজেন্ট দেবাংশু ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কাশ্মীরে পর্যটকদের যাওয়ার বাধানিষেধ কেটে যাওয়ার ফলে ২০১০ সাল থেকেই কুমায়নে পর্যটক সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। যার জন্য অন্যান্য বছরের তুলনায় বছরে ১৫ জুন পর্যন্ত মাত্র ৬০ % বুকিং হয়েছিল। বিপর্যয়ের পরে যা প্রায় শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে। তিনি বলেন, “অন্যান্য বছর রানিখেত, নৈনিতাল, কৌশানির হোটেলগুলিতে জায়গা পাওয়া যেত না। সেখানে বছরে শুধুমাত্র করবেট ন্যাশনাল পার্কেই তাও ৭৮ % বুকিং হয়েছে। বাকি সব খালি।”
পর্যটক টানতে তাঁরা নতুন কোনও কৌশল নিচ্ছেন কি? এজেন্ট শৈবাল পাল কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলেন, কুমায়ন বলতে পর্যটকেরা আগে নৈনিতাল, আলমোড়া, কৌশানি এবং রানিখেতই বুঝত। পরে কেএমভিএনের হাত ধরেই পর্যটকেরা চৌকরি, মুন্সিয়ারি, শীতলাখেত, বিনসর, পাতাল ভুবনেশ্বরকে চেনেন। কিন্তু শৈবালের অভিযোগ, “দীর্ঘদিন ধরে এখানকার কেএমভিএনের নিজস্ব উদ্যোগ না থাকায় বাঙালি পর্যটকরা সেই সুযোগ ততটা পাননি।” তবে বিপর্যয়ের পর কেএমভিএন এখানেও কিছুটা নড়ে বসেছে। পর্যটক টানতে এখন কুমায়ুনের যে কোনও দ্রব্যের ক্রয়মূল্যের উপর কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলে কেএমভিএনের অফিসার বিশ্বজিৎ রায় জানিয়েছেন।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.