বিখ্যাত হতেই অপহরণের গল্প টুটুমণির

৯ জানুয়ারি
সম ও অরুণাচলে দিনভর চারজন মুখোশধারী অপহরণকারীর সন্ধান করছিল পুলিশ। রাতে বাড়ি ফিরে আসা ‘অপহৃত’ ছাত্রী তদন্তকারীদের কাছে কবুল করল অপহরণের কোনও ঘটনাই ঘটেনি !
‘বিখ্যাত’ হওয়ার লোভে অপহরণের গল্প ফেঁদেছিল সে নিজেই। গতকাল লখিমপুরে এমনই ঘটনা ঘটেছে। ওই ছাত্রী জানিয়েছে, একদিকে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না -পারার গ্লানি, অন্যদিকে তারই বয়সি গুঞ্জন শর্মার রোমাঞ্চকর কাহিনী শুনে তারও বিখ্যাত হওয়ার ইচ্ছা হয়েছিল। তা - ওই কাজ করে সে।
পুলিশ সূত্রের খবর, লখিমপুরের বিহপুরিয়া থানার রাজবাড়ি বিমলাপ্রসাদ চলিহা উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী টুটুমণি গোয়ালা। গতকাল অসম -অরুণাচল সীমানার কাঁটিকটায় একা ঘুরতে দেখে, এক ব্যক্তি তাকে থানায় নিয়ে যান। পুলিশকে প্রথমে টুটুমণি জানিয়েছিল, স্কুলে যাওয়ার পথে মুখ ঢাকা চার দুষ্কৃতী তাকে একটি সাদা মারুতি গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়িতে আরও একটি মুখ বাঁধা মেয়ে ছিল। অরুণাচলে পৌঁছনোর পর, অপহরণকারীদের গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। অপহরণকারীরা যখন গাড়ি সারাতে ব্যস্ত, তখনই টুটুমণি গাড়ি থেকে নেমে পালায়। ছাত্রীর কথা শুনে, অসম অরুণাচল পুলিশ ‘অপহৃত’ অন্য মেয়েটি এবং অপহরণকারীদের সন্ধানে দুই রাজ্যে তল্লাশি শুরু করে।
রাত পর্যন্ত টুটুমণির বর্ণনা মতো কোনও গাড়ির হদিশ মেলেনি। কোনও মেয়ে নিখোঁজ হওয়ারও খবরও পাওয়া যায়নি। এরপরই, এসপি প্রশান্ত ভুঁইঞা নিজে টুটুমণিকে জেরা করতে শুরু করেন। পুলিশকর্তা বুঝতে পারেন, ওই ছাত্রীর কথায় অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। সত্যি কথা বললে উপহার দেওয়ার লোভ দেখানোয়, সব কথা জানায় সে। টুটুমণি বলে, পুরো ঘটনাই তার কল্পিত। অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না -পারায় সহপাঠীরা তাকে নিয়ে মজা করত। অভিভাবকদের কাছে অন্য স্কুলে ভর্তি করানোর আর্জি জানালেও, তাতে লাভ হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, দু’দিন স্কুলে না -যাওয়ার পর, গতকাল মায়ের কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে সে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর, অটোরিকশায় বিহপুরিয়ায় যায়। সেখান থেকে চলে যায় কাঁচিকটা। তারপরই টুটুমণির মাথায় অপহরণের গল্পের ছক আসে। পুলিশের মতে, সম্প্রতি শিবসাগরে তার বয়সি স্কুলছাত্রী গুঞ্জন শর্মার বিখ্যাত হওয়ার খবর টুটুমণির মনে ছিল। তদন্তকারীদের তা - একই রকম গল্প জানিয়েছিল সে।
ডিসেম্বর শিমুলগুড়ি মোড়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী গুঞ্জন -সহ ১১ জন পড়ুয়াকে পণবন্দি করেছিল এক দুষ্কৃতী। পরে, গুঞ্জন অন্য ছাত্রছাত্রীদের ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে স্বেচ্ছায় তার সঙ্গে যেতে রাজি হয়। পরদিন মুক্তি পেয়ে সে বাড়ি ফেরে। সংবাদমাধ্যমের দৌলতে তখন থেকেই সে বিখ্যাত। রাজ্য সরকার গুঞ্জনের নামে সাহসিকতা পুরস্কারও চালু করেছে।
টুটুমণি জানায়, সে চেয়েছিল তার নামও গুঞ্জনের মতো সংবাদ শিরোনামে আসুক। টিভিতে দেখানো হোক তার ‘ইন্টারভিউ’। তাহলেই, স্কুলে তাকে ব্যঙ্গ সহ্য করতে হবে না। তাকে অন্য চোখে দেখবে সবাই।
মনোবিদ অতসী গুপ্তের মতে, এই বয়সে কোনও কোনও কিশোর -কিশোরীর মধ্যে হঠাৎ করে বিখ্যাত হওয়ার ইচ্ছা হয়। টুটুমণির মনে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না -পারার লজ্জা সহপাঠীদের অসম্মানও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। সত্যিটা প্রকাশ পাওয়ার পর, মেয়েটির উপরে মানসিক চাপ আরও বাড়তে চলেছে। এই অবস্থায় পরিবার, বন্ধু শিক্ষকদের সহমর্মিতার অত্যন্ত প্রয়োজন। মেয়েটির সঙ্গে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ব্যবহার করা উচিত। সম্ভব হলে তার স্কুল বদলে দেওয়াই ভাল। মেয়েটিকে যাতে স্কুলে ব্যঙ্গ করা না -হয় সে দিকেও স্কুল কর্তৃপক্ষ সহপাঠীদের অভিভাবকদের লক্ষ্য রাখা জরুরি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.