শহিদ মিনার দেখতে উপচে পড়া ভিড় নন্দীগ্রামের মাঠে
ই সময়টা কলাইয়ের চাষ করার। নন্দীগ্রামের শহিদ মিনার ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের আবেগ এমনই, উদ্বোধন হবে শুনে এ বার আর কলাইয়ের বীজ ছড়াননি উল্টো দিকের মাঠের বেশ কিছুটা জায়গায়।
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ার সেই মাঠে মঙ্গলবার উপচে পড়ছিল ভিড়। ১৩০ ফুট উঁচু শহিদ মিনার দেখতে আশপাশের এলাকা তো বটেই, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারে-হাজারে লোকজন বাস-ট্রেকারে এসে উপস্থিত। সোনাচূড়া বাজারে গাড়ি থেকে নেমে প্রায় দু’কিলোমিটার হেঁটে সকলে পৌঁছন তালপাটি খালের কাছে শহিদ মিনারের সামনে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সত্তর-আশি হাজার মানুষকে বসার জায়গা করে দিতে হিমশিম খান আয়োজক ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র নেতারা। শেষমেশ পাশের কলাইয়ের খেতের উপরেই লোকজনকে বসে পড়ার জন্য মাইকে অনুরোধ করেন তাঁরা। দেড়টা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরু হয়।
নন্দীগ্রামের ভাঙাবেড়ায় ১৩০ ফুট উঁচু শহিদ মিনারের উদ্বোধন হল মঙ্গলবার।
উপস্থিত ছিলেন সাংসদ শিশির অধিকারী ও শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামে
নিহত ১৯ জনের ছবি টাঙানো হয়েছে মিনারের দেওয়ালে।
মঞ্চে নিহতদের পরিবারের সদস্যেরা ছাড়াও ছিলেন জমিরক্ষা আন্দোলনের সময় নির্যাতিতা রাধারানি আড়ি, নিহত ইমদাদুল ইসলামের মা ফিরোজা বিবি। ছিলেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, শিশির অধিকারী, ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতারা। শুভেন্দু বলেন, “নন্দীগ্রামের শহিদেরা মাথা উঁচু করে মৃত্যু বরণ করেছেন। তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতে আমরা শহিদ মিনার বানিয়েছি। নন্দীগ্রামের কোনও নির্মাণ এই উচ্চতাকে ছুঁতে পারবে না।”
বস্তুত, ২০০৭ সালের জমিরক্ষা আন্দোলনের ছ’বছর পরেও শহিদ মিনারকে ঘিরে এ দিন যে আবেগ চোখে পড়ল, তার নাগাল পাওয়া কঠিন। প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের কেন্দেমারি থেকে এসেছিলেন বনলতা মাইতি। তিনি বলেন, “আন্দোলনের সময় এই এলাকা খুব তেতে ছিল। তখন অনেকবার ভেবেছি, জায়গাটা দেখে আসব। তা আর হয়নি। আজ পুরনো দিনের কথাগুলো মনে পড়ছে।” প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে দাউদপুর থেকে এসেছেন আমিনা বেগম। এত উঁচু মিনার দেখে কথা হারিয়ে ফেলেছিলেন প্রথমটা। তিনি বলেন, “শহিদদের যে এই ভাবেও মনে রাখা যায়, ভাবতে পারিনি। এই প্রথম এত বড় মিনার দেখলাম।”
বেলা ৩টে নাগাদ সভা শেষের পরে শহিদ মিনারের মূল ফটকের উদ্বোধন করেন রাধারানি আড়ি। পরে সংলগ্ন দাতব্য চিকিৎসালয়, অতিথিশালার উদ্বোধন করেন জমি আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা আরও কিছু মুখ। ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে শহিদ মিনারটিতে ওঠা যাচ্ছে। প্রবেশমূল্য নেই। একটি সংস্থা এর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে। পরে ট্রাস্টি তৈরি করা হবে। শুভেন্দু ঘোষণা করেন, শহিদ মিনারের সামনের রাস্তায় পথবাতি বসানো হবে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের টাকায়। এ ছাড়া পার্ক, লাইব্রেরি হবে। সোনাচূড়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান নিহত নিশিকান্ত মণ্ডলের ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মারক হাসপাতাল হবে বলে জানান তিনি।
নন্দীগ্রামের ভাঙাবেড়ায় ১৩০ ফুট উচ্চতার শহিদ মিনারের উদ্বোধন হল
মঙ্গলবার। ছিলেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী এবং বিধায়ক ফিরোজা বিবি।
এ দিন, ‘নেতাই দিবস’ উপলক্ষে পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতাইয়ে গিয়েও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শুভেন্দু। ২০১১-র ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে সিপিএমের সশস্ত্র শিবির থেকে গুলির ঘটনায় নিহত হন ৯ গ্রামবাসী। আহত হন ২৮ জন। প্রতি বছর দিনটি স্মরণ করে নেতাই স্মৃতিরক্ষা কমিটি। নির্ধারিত সূচিমতো মঙ্গলবার নেতাই চলে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। কোলাঘাটে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। এ দিকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমলাশোলে সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নেতাই ও নন্দীগ্রামের শহিদদের আমরা ভুলিনি। ভুলব না।”

ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.