শুধুমাত্র মৃত বা আহতদের পরিবারের পাশে নয়, সার্বিক উন্নয়নে নেতাইয়ের পাশে রয়েছে তৃণমূল। মঙ্গলবার নেতাই শহিদ বেদির সামনে ‘নেতাই স্মৃতিরক্ষা কমিটি’ আয়োজিত স্মৃতি তর্পণের মঞ্চ থেকে এমনটাই জানালেন সাংসদ তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ও রাজ্য যুব তৃণমূল সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে সিপিএমের সশস্ত্র শিবির থেকে গুলির ঘটনায় ৪ মহিলা-সহ নিহত হয়েছিলেন ৯ গ্রামবাসী। আহত হন ২৮ জন। নেতাই-কাণ্ডকে হাতিয়ার করে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে ক্ষমতার রাশ ধরে তৃণমূল। তারপর গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও অপ্রত্যাশিত সাফল্য মিলেছে। |
রাজ্যে পালাবদলের পর নতুন এই সরকারের কাছে নেতাই কী পেলএ দিনের সভায় তারই একটা লম্বা ফিরিস্তি দেন শুভেন্দু। তিনি জানান, গীতালি আদকের মেয়ে জনতাকে তমলুক-ঘাটাল সমবায় ব্যাঙ্কে চাকরি দেওয়া হয়েছে। বাকিদের পরিবারের এক জন করে চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। সাহসিকতার পুরস্কার হিসাবে বিবেক সম্মান দেওয়া হয়েছে, যার অর্থমূল্য ৫ লক্ষ টাকা। রাস্তার কাজও প্রায় সম্পূর্ণ। এই গ্রাম থেকেই পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী করা হয়েছিল কৃষ্ণগোপাল রায়কে। তাঁকেই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও করা হয়েছে।
কিন্তু দোষীদের শাস্তি? শুভেন্দুর অভিযোগ, “অভিযুক্তেরা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। ডালিম পাণ্ডে, অনুজ পাণ্ডেরা গ্রেফতার হয়নি। কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার। ওদের হাতেই সিবিআই। তাই ওদের মতো গুন্ডাদের গ্রেফতার করেনি। আমরা আবারও এখান থেকে দাবি তুলছি, সকলের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।” আর মুকুল রায়ের কথায়, “প্রতিবাদ কিভাবে করতে হয়, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়, তা নেতাইয়ের পুরুষ-মহিলারা দেখিয়ে দিয়েছেন। আমরা অঙ্গীকার করছি, নেতাইয়ের সামাজিক সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করবে রাজ্য সরকার।”
নেতাইয়ের মানুষের অবশ্য এ ছাড়াও অনেক দাবিই রয়েছে। দাবি রয়েছে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। দাবি রয়েছে বার্ধক্য ভাতার, বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার। ষাটোর্ধ্ব বিশাখা বিশুইয়ের কথায়, “আর কাজ করতে পারি না বাবা, পায়ে বাত হয়েছে। তবু পেটের জন্যে কাজ করতে হয়। যদি বার্ধক্য ভাতা পেতাম ভাল হত। বাড়ির অবস্থাও ভাল নয়। বাড়িও পাচ্ছি না।” |
এ ব্যাপারে কী ভাবছে রাজ্য সরকার? শুভেন্দুর কথায়, “অনেক কাজ হয়েছে। আরও করতে হবে। গ্রামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা তার দায়িত্বে রয়েছেন।” এদিনের অনুষ্ঠানে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও গ্রামের গরিব মানুষদের শীতবস্ত্র প্রদান করা হয়। সভায় বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো, মেদিনীপুর পুরসভার পুরপ্রধান প্রণব বসু, মেদিনীপুর শহর কংগ্রেসের সভাপতি আশিস চক্রবর্তী-সহ জেলার একাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
তবে, সব থেকে বড় চমক অবশ্যই ছিল দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায়ের উপস্থিতি। কারণ, অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে পর্যন্তও তাঁর উপস্থিতি সম্বন্ধে টের পাননি মানুষ। এমনকী প্রচারে বা তোরণেকোথাও তাঁর নাম পর্যন্ত ছিল না। উল্টে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের জন্য সোমবারই তাঁর ঝাড়গ্রামে পৌঁছে যাওয়ার কথা। তা না করে এদিন কোলাঘাট থেকে শুভেন্দুর সঙ্গে সোজা নেতাই চলে আসেন মুকুল। বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, “আমি ও মুকুলবাবু যৌথ ভাবে আপনাদের সঙ্গে ছিলাম ও থাকব।” মঞ্চ থেকে দুই নেতার মিলনের বার্তা শুনে দলের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই নেতাই থেকে মুকুল আমলাশোলের উদ্দেশে রওনা দেন। শুভেন্দু নন্দীগ্রামে। |