১১ উড়ানই বাতিল, যাত্রীরা বিপাকে বাগডোগরায়
সারা দিনে ১২টি বিমান ওঠানামা করে। তার মধ্যে ১১টি উড়ানই বাতিল হলে কী পরিস্থিতি হয় মঙ্গলবার তার সাক্ষী রইল উত্তরবঙ্গের বাগডোগরা বিমানবন্দর। গাদাগাদি ভিড়, রেস্তোরাঁয় খাবার ফুরিয়ে যাওয়ার মতো হয়রানির সঙ্গে পরিকল্পনা ঘেঁটে যাওয়ার একরাশ বিরক্তি সঙ্গী হল যাত্রীদের। শিলিগুড়ি বা লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা বাড়ি ফিরে গেলেও বাইরের যাত্রীরা মূলত বিপাকে পড়েন।
এ দিন সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল বাগডোগরা। দৃশ্যমানতা নামতে নামতে ৩০০ মিটারে পৌঁছে যায়। বাতিল হতে শুরু করে একের পর এক উড়ান। তার মধ্যে কলকাতা থেকে বাগডোগরায় যাওয়ার কথা ছিল পাঁচটির। বাকিগুলি যাওয়ার কথা ছিল দিল্লি থেকে। বাগডোগরা বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘন কুয়াশার মাঝেই বিকল হয়ে যায় বিমানবন্দরের রেডার। ফলে, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) থেকে বিমানের গতিবিধি নজর করতেও সমস্যা দেখা দেয়। সারা দিনে বেশির ভাগ সময়েই দৃশ্যমানতা কমবেশি ১,০০০ মিটারের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করেছে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ঘন কুয়াশার মধ্যে কী করে দুপুরে ভূটানের বিমানসংস্থা ড্রুকের বিমান পারো থেকে নামল তা নিয়ে সকলেই ধন্দে। তবে বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কল্যাণকিশোর ভৌমিক বলেন, “দুপুরে খুব কম সময়ের জন্য একবার দৃশ্যমানতা ১,৫০০ মিটারে উঠেছিল। সেই সময়েই দিনের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানসংস্থার উড়ানটি যাত্রীদের নিয়ে নেমে আসে। ২টা ২০ মিনিটে নেমে বেলা ৪টে নাগাদ সেটি ব্যাঙ্ককে উড়ে যায়।”
বিমানবন্দরে এসেও ফিরে যান অনেকে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
বাকি সব উড়ানের যাত্রীরা আটকে পড়েন বিমানবন্দরে। জানা গিয়েছে, এক সময়ে ১,১৪১ জন যাত্রী বসেছিলেন ছোট টার্মিনাল বিল্ডিং-এ। একতলা ও দোতলা মিলে দু’টি শৌচাগার ব্যবহার করেছেন তাঁরা। লাউঞ্জ ছাড়াও যাত্রীরা বসেছিলেন রেস্তোরাঁয়। সকাল গড়িয়ে দুপুর হওয়ার আগেই রেস্তোরাঁর খাবার ফুরিয়ে যায়। সারা দিন অপেক্ষার পরে দুপুরে একে একে উড়ানগুলি বাতিল ঘোষণা করা হয়। কেউ টাকা ফেরত নিয়ে নেন। কিছু যাত্রীকে হোটেলে রাখা হয়। বাকি বহিরাগত যাত্রীরা শহরে রাত্রিবাসের অথবা রাতের ট্রেন বা বাসের ব্যবস্থা করতে গিয়ে চূড়ান্ত দূর্ভোগের মধ্যে পড়েন।
কালিম্পং বেড়াতে গিয়েছিলেন ঢাকুরিয়ার অমল ও সুনন্দা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কালিম্পঙে আচমকাই পড়ে গিয়ে পা ভেঙেছেন অমলবাবু। তাঁর কলকাতা ফেরাটা জরুরি ছিল। সোমবারেই ‘গো এয়ার’-এর টিকিট কেটে মঙ্গলবারে পৌঁছে যান বাগডোগরা। কিন্তু কলকাতা থেকে ‘গো এয়ার’-এর যে বিমানটি বাগডোগরার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল, সেটি বাগডোগরায় নামতে পারেনি। চলে যায় গুয়াহাটিতে। ফলে, দুপুর পর্যন্ত বাগডোগরা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করার পরে তাঁরা ট্রেনের টিকিটের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন।
বিপাকে পড়া যাত্রীদের মধ্যে প্রায় ২৫০ জনকে এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে শিলিগুড়ির বিভিন্ন হোটেলে রাতে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়। কিছু যাত্রী শিলিগুড়ি শহরে পরিচিতদের বাড়িতে চলে যান। তবে ট্রেনের টিকিট না মেলায় অনেকেই বিমানবন্দর এবং বাইরে থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করে কলকাতা, গুয়াহাটি রওনা হন।
সিকিমের গ্যাংটকের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষিকা শর্মিলা চক্রবর্তীর বাবা-মা’কে নিয়ে কলকাতায় গিয়ে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সুন্দরবন যাওয়ার কথা ছিল। বললেন, “পুরো সফরসূচি উল্টোপাল্টা হয়ে গেল। আপাতত শিলিগুড়িতে এক পরিচিতের বাড়িতে আছি।” ব্যবসার সূত্রে শিলিগুড়িতে যাতায়াত থাকার সুবাদে থাকার জায়গা জোটাতে কষ্ট হবে না বলে জানালেন জয়ন্ত বিশ্বাস নামের দিল্লির এক ব্যবসায়ী। তাঁর আফশোস, “দিল্লিতে আগে থেকে ঠিক করা ব্যবসার কাজ পন্ড হল।”
মুম্বই থেকে গুয়াহাটি হয়ে বাগডোগরা আসার কথা ছিল গুজরাতের রাজকোটের বাসিন্দা, পেশায় সরকারি কর্মী অঞ্জিল সিংহের। অঞ্জিলবাবু এবং তার নয় সঙ্গীর এ দিন বাগডোগরা নেমে সিকিম যাওয়ার কথা ছিল। গুয়াহাটি পৌঁছে তাঁরা জানতে পারেন, বাগডোগরার বিমান বাতিল। শেষে বিমান সংস্থার তরফেই তাঁদের ১০ জনকে বাসে শিলিগুড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। অঞ্জিলবাবুর আক্ষেপ, “সিকিম ঘোরা এক দিন কমে গেল!” মাল্লাগুড়ির হোটেলে এ দিনের মতো ঠাঁই নেওয়া কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে কলকাতায় দেখাতে যাওয়ার কথা। সব ঘেঁটে গেল!”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “বাগডোগরা বিমানবন্দরে এখন যা পরিকাঠামো রয়েছে তাতে ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) বসিয়ে কুয়াশা-আচ্ছন্ন দিনে বিমান ওঠানামার সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার বিমান মন্ত্রকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তার পরেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.