উত্তরবঙ্গ ও মালেগাঁওয়ে একই গোত্রের আইইডি
হারাষ্ট্রের মালেগাঁওয়ে বিস্ফোরণ হয়েছিল ২০০৬-এর ৮ সেপ্টেম্বর। তার সাত বছর পরে, গত ২৬ ডিসেম্বর বিস্ফোরণ হয় জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর-বজরাপাড়ায়। সময় আর স্থানের দীর্ঘ ব্যবধান সত্ত্বেও দু’টি বিস্ফোরণে মিল পাচ্ছে সিআইডি।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বিস্ফোরণ ঘটাতে জলপাইগুড়িতে যে-ধরনের আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ব্যবহার করা হয়েছে, হুবহু সেই জাতীয় আইইডি-ই ব্যবহৃত হয়েছিল মালেগাঁওয়ে। সেখানে বিস্ফোরকের পরিমাণ বেশি থাকায় ৪০ জন নিহত হন। জলপাইগুড়িতে নিহত হন ছ’জন। তবে দু’টি জায়গায় পৃথক জঙ্গি সংগঠন নাশকতার সঙ্গে যুক্ত বলে গোয়েন্দারা জানান।
মিলের সূত্রে তদন্তকারীরা মনে করছেন, মালেগাঁওয়ের মতো জলপাইগুড়িতেও আইইডি তৈরির পিছনে কোনও অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীর মাথা থাকতে পারে। কারণ, ওই ধরনের আইইডি তৈরির সময় সামান্য ভুলচুক হলে তখনই বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা। সাধারণত শুধু ফৌজেই এই ধরনের বিস্ফোরক নাড়াচাড়া করার ব্যাপারে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জলপাইগুড়িতে সাইকেলে ঝোলানো ব্যাগে রাখা পিচবোর্ডের বাক্সে স্টিলের ক্যানে দেড় থেকে দুই কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ঠেসে আইইডি তৈরি করা হয়েছিল এবং তা খুলতে গিয়েই বিস্ফোরণ ঘটে। মালেগাঁওয়ে একই ভাবে আইইডি তৈরি করে সাইকেলে ঝোলানো ব্যাগে রাখা হয়েছিল।
গোয়েন্দারা জলপাইগুড়ির ওই বিস্ফোরণে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও)-এর হাত দেখছেন। তাঁদের দাবি, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অব বড়োল্যান্ড (এনডিএফবি)-এর জঙ্গিরা কেএলও-কে আইইডি তৈরি ও ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এনডিএফবি-তে অসম রাইফেলসের কয়েক জন অবসরপ্রাপ্ত জওয়ান রয়েছেন এবং তাঁরা জলপাইগুড়ির ওই আইইডি তৈরির পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন বলে সিআইডি মনে করছে। শনিবারেই জলপাইগুড়ি বিস্ফোরণের তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি।
কী ধরনের আইইডি-র বিস্ফোরণ হয়েছে জলপাইগুড়িতে?
সিআইডি-র বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এটি হল ‘ফুল সুইচ প্রেশার রিলিজ অ্যান্টি হ্যান্ডলিং মেকানিজম’-এর আইইডি। এর মধ্যে বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে জিলেটিন স্টিক। সাধারণত খনি বা খাদানে বিস্ফোরণের জন্য জিলেটিন স্টিক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু নাশকতার জন্যও যে এই ধরনের বিস্ফোরক চোরাপথে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে, গোয়েন্দারা বহু দিন ধরেই সেই ব্যাপারে সতর্ক করে আসছেন। ২০০৯ সালের এপ্রিলে আলিপুরদুয়ার চৌপথিতে আইইডি বিস্ফোরণে তিন জন নিহত হন। সেখানেও কেএলও এবং বড়ো জঙ্গিরা জড়িত ছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। সিআইডি-র বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞেরা জেনেছেন, আলিপুরদুয়ারের ওই বিস্ফোরণেও একই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল।
জলপাইগুড়ি বিস্ফোরণে আইইডি তৈরিতে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ব্যবহার (রাজ্যে এই প্রথম) করা হয়েছে বলে সিআইডি-র বিশেষজ্ঞদের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, এর আগে উত্তরবঙ্গ কিংবা জঙ্গলমহলে যে-সব আইইডি-র বিস্ফোরণ ঘটেছে, তাতে বরাবর ন’ভোল্টের চিনা ব্যাটারিই ব্যবহার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের পরে সিআইডি-র বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থল থেকে ওই ব্যাটারির খোলও উদ্ধার করেছেন।
সিআইডি-র এক তদন্তকারী বলেন, “এত দিন কেএলও মূলত বাংলা-অসম সীমানা সংলগ্ন এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটাত। খবর মিলেছে, ওরা উত্তরবঙ্গের বড় শহর ও জনপদে বিস্ফোরণ ঘটানোর ছক কষছে। গত ডিসেম্বরে জলপাইগুড়ি, অগস্টে আলিপুরদুয়ারের বিস্ফোরণ তারই ইঙ্গিত।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.