বহরমপুরে তিন মহিলা খুনে এখনও ধোঁয়াশাই
কই পরিবারের তিন মহিলার মৃত্যুর তদন্তে ধোঁয়াশা কাটেনি। সোমবার বিকেলে বহরমপুরে একটি ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙে বৃদ্ধা প্রভা দাস, তাঁর ভাইঝি মধ্য চল্লিশের বিজয়া বসু ও বিজয়াদেবীর তরুণী কন্যা আত্রেয়ী বসুর দেহ উদ্ধার করা হয়। তবে তারপরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও কে বা কারা কেন এই তিন জনকে খুন করেছে, তা পুলিশের কাছে পরিষ্কার নয়। তিন জনকেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। মঙ্গলবার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে পুলিশ জানিয়েছে, শ্বাসরোধ করার আগে তিন জনকেই মাদক জাতীয় কিছু খাইয়ে আচ্ছন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া, বিজয়াদেবী ও প্রভাদেবীর বুকে ভারী কিছু দিয়ে আঘাতও করা হয়েছে। আত্রেয়ীয়ের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
কী খাইয়ে তাঁদের আচ্ছন্ন করে দেওয়া হয়, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে বিজয়াদেবীদের বাড়ি থেকে এ দিন বেশ কয়েকটি সন্দেশ ও চারটি রসগোল্লা পেয়েছে পুলিশ। রসগোল্লা বিজয়াদেবীই কিনেছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। কিন্তু সন্দেশ কে এনেছিলেন, তা জানা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সন্দেশগুলি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, তার মধ্যে মাদক মেলে কি না।
শেষ দেখা। ময়না-তদন্তের পর মৃতদেহ ঘিরে ভিড় আবাসিকদের।
বহরমপুরের আশাবরী আবাসনে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ওই তিন জনকেই প্রথমে কোনও মাদক খাওয়ানো হয়েছিল। তাতে তাঁরা আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। পরে শরীরে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। তার পরেও মৃত্যু নিশ্চিত করতে শ্বাসরোধ করা হয়েছে। তাই বাড়িতে ধস্তাধস্তির চিহ্ন মেলেনি।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজয়াদেবীর মুখে ও গলায় আঙুলের ছাপ মিলেছে। একটি আবাসনের এক তলার ওই ফ্ল্যাটের আরও বেশ কিছু জায়গা থেকে হাতের ছাপ পেয়েছে পুলিশ। সেই সূত্র ধরে তদন্ত এগোচ্ছে। কোন ধরনের মাদক খাওয়ানো হয়েছে, তা জানতে সাহায্য নেওয়া হচ্ছে ফরেন্সিক গবেষণাগারের। বিজয়াদেবীর দেহ পাওয়া যায় অর্ধনগ্ন অবস্থায়। আত্রেয়ীয়ের গায়ে কোনও পোশাকই ছিল না। তবে পুলিশ সুপার বলেন, “ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট মতো মনে হচ্ছে কারও উপরেই যৌন নির্যাতন করা হয়নি।” সেক্ষেত্রে কেন তাঁদের দেহ এ ভাবে ফেলে রেখে যাওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত বিজয়াদেবীর স্বামী। বছর দু’য়েক আগে তিনি বিজয়াদেবীর সংসার থেকে বেরিয়ে যান। তার পর থেকে তাঁকে বহরমপুরেই আর বিশেষ দেখা যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে, তিনি যদি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকেন, তা হলে আত্রেয়ীর দেহ ওই অবস্থায় পাওয়া সম্ভব কি না, তা নিয়েও। বহরমপুর থানার আইসি মোহায়মেনুল হক বলেন, “তদন্ত ভুল দিকে ঘুরিয়ে দিতেই মহিলাদের ওই অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ।” ইরাদেবীর দাবি, “বিজয়ার স্বামী হয়তো নিজে খুন করেনি। তবে আমাদের দৃঢ় ধারণা, সে-ই খুনের ষড়যন্ত্র করেছে।”
তবে পরিচিত কেউই খুন করেছে বলে মনে করছে পুলিশ ও বিজয়াদেবীদের প্রতিবেশীরাও। পরিচিত বলেই সেই রাতে ওই ব্যক্তিকে দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল। রান্নাঘর থেকে একটি ভাল কাপ-প্লেটও পেয়েছে পুলিশ। অনুমান করা হচ্ছে, সেই ব্যক্তিকে ওই কাপে চা দেওয়া হয়েছিল। তবে রান্নাঘর থেকে বারোটি পরোটা, খোসা ছাড়ানো আলুও পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের অনুমান, তিন মহিলার কেউই শনিবার রাতের খাবার খাননি। তবে তিনটি এঁটো প্লেট মেলে তাঁদের রান্নাঘর থেকে। তাতে তাঁরা সন্ধ্যাবেলার জলখাবার খেয়েছিলেন বলেই পুলিশের অনুমান। ওই বাড়ির বাথরুমে কয়েক ফোঁটা রক্ত পাওয়া গিয়েছে। তারও ব্যাখ্যা নেই পুলিশের কাছে ।
ওই ফ্ল্যাটে এ দিন দু’বার তদন্ত করতে গিয়েছিলেন পুলিশ সুপার। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, আত্রেয়ী শনিবার সাড়ে ছ’টা নাগাদ অঙ্কের শিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়েছিল। সঙ্গে ছিলেন বিজয়াদেবীও। ফেরার সময়ে আবাসনের সামনের একটি মিষ্টির দোকান থেকে তাঁরা চারটি রসগোল্লা কেনেন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, এই পরিবারের সকলেই খুব ভদ্র ও মিশুকে ছিলেন। আত্রেয়ীকে ভাল ছাত্রী বলেই সকলে চিনতেন।
ময়নাতদন্তের পরে এ দিন সন্ধ্যায় আবাসনে তিন জনের দেহ আনা হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রতিবেশীরা। রাতে তাঁদের অন্ত্যেষ্টি হয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.