অ্যাসেজে ০-৫ বিপর্যয়ের পরেও ইংল্যান্ড কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার এবং অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক বলেছেন, সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছে নেই তাঁদের। এ বার সেই দলে নাম লেখালেন কেভিন পিটারসেন। বন্ডি বিচে স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে ছুটি কাটাতে কাটাতেই টিমের অন্যতম তারকা ব্যাটসম্যান টুইট করে জানিয়ে দিলেন, তাঁর ভাবনায় অবসর নয়, রয়েছে পরের বছর অ্যাসেজ পুনরুদ্ধারের প্রতিজ্ঞা। কিন্তু কেপি-র এই প্রতিজ্ঞা কোচ-ক্যাপ্টেনকে কতটা প্রভাবিত করতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহে ইংরেজ ক্রিকেটমহল।
সদ্যসমাপ্ত অ্যাসেজে ৩৩ বছরের কেপির পারফরম্যান্স এত শোচনীয় যে, তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে পড়ছে। পাঁচ টেস্টে সব মিলিয়ে তাঁর সংগ্রহ মাত্র ২৯৪ রান। গড় তিরিশের নীচে। তার উপর রয়েছে কেপির হাঁটুর চোট। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে পিটারসেনের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়াতে পারেন ইংরেজ কোচ স্বয়ং। ফ্লাওয়ার জানিয়ে দিয়েছেন, অ্যাসেজ বিপর্যয় থেকে টিমকে টেনে তোলার কাজটা তিনি নিজে করতে চান। তাঁর এবং কুকের প্রতি টিম ম্যানেজমেন্টের পরোক্ষ সমর্থনও আছে। ফ্লাওয়ার কিন্তু এটাও বলেছেন যে, টিমে বিশাল বদল না আনলে ক্রিকেটবিশ্বে ইংরেজ প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়। এবং মনে করা হচ্ছে, প্রত্যাবর্তনের স্বার্থে পুনর্গঠনের সবচেয়ে বড় বলি হতে পারেন কেপি। |
অশান্তির সময়: দূরত্ব বাড়ছে পিটারসেন-ফ্লাওয়ারের। |
ফ্লাওয়ার মনে করেন, ড্রেসিংরুমে পিটারসেনের উপস্থিতি ইংরেজ টিমের ভবিষ্যতের পক্ষে ক্ষতিকারক। শুধু তাই নয়, কেপিকে সরাতে ফ্লাওয়ার নাকি এতটাই বদ্ধপরিকর যে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, টিমে পিটারসেন থাকলে তিনি পদত্যাগ করার জন্যও তৈরি। যদিও সরকারি ভাবে ফ্লাওয়ার বলেছেন, “নির্দিষ্ট কাউকে নিয়ে কথা বলাটা আমার পক্ষে ভুল হবে। জাতীয় নির্বাচক বা কুকের সঙ্গে এখনও কথা হয়নি আমার। সবাইকে নিয়েই আমরা আলোচনা করব। সবার পারফরম্যান্স খতিয়ে দেখা হবে।”
পিটারসেন-ফ্লাওয়ার কাজিয়া এই প্রথম নয়। ইংরেজ ক্রিকেটমহলের ধারণা, ২০১২-র শুরুর দিকে যখন হঠাৎ করে কেপি নিজেকে ওয়ান ডে থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন, তখন থেকেই ফ্লাওয়ারের বিরাগভাজন হন। ওই সময়ই দক্ষিণ আফ্রিকানদের কিছু বিতর্কিত এসএমএস পাঠিয়ে গোটা টিমের রোষের মুখে পড়েন কেপি। তার পরপর ওয়ান ডে থেকে অবসর নিয়ে ফেলেন। ভারত সফরের আগে পর্যন্ত ইংল্যান্ডের টেস্ট দলেও নেওয়া হয়নি তাঁকে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করে, ফ্লাওয়ার-কেপি সম্পর্ক মোটেও উষ্ণ নয়। এবং এখন ফ্লাওয়ারের ধারণা, পিটারসেন থাকলে ইংল্যান্ডের পুনর্গঠন সম্ভব নয়। |
সুখের সময়: সিডনি অপেরা হাউসে সংবর্ধনা নিতে মিচেল জনসনরা। ছবি: এএফপি। |
কেপির ভবিষ্যতের সঙ্গে কেউ কেউ আবার আইপিএলের যোগাযোগ দেখতে পাচ্ছেন। হাঁটুর চোটের জন্য গত আইপিএলে খেলতে না পারলেও মনে করা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারির নিলামে তাঁর জন্য ঝাঁপাবে সব ফ্র্যাঞ্চাইজি। এ বারের চুক্তি যেহেতু তিন বছরের এবং টাকার অঙ্কটা ম্যাচ-ভিত্তিক, তাই এটা নিয়ে ইংল্যান্ড বোর্ডের সঙ্গে টক্কর লাগতে পারে পিটারসেনের। ফ্লাওয়ার কোচ হিসেবে থেকে গেলে তিনি চাইবেন জুন মাসে শ্রীলঙ্কা সফরের আগে তাঁর প্লেয়াররা যত বেশি সম্ভব কাউন্টি ম্যাচ খেলুক। আইপিএলের লোভনীয় চুক্তি ফিরিয়ে কাউন্টি ম্যাচ খেলতে পিটারসেন আগ্রহী হবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে যেখানে আগামী জুনে তিনি চৌত্রিশে পা দেবেন, এবং চোট-আঘাত ভর্তি কেরিয়ারের শেষ দিকে যত বেশি সম্ভব অর্থ উপার্জন করতে চাইবেন।
পরিস্থিতি সত্যিই সে রকম হলে ফ্লাওয়ারের পদত্যাগ নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পিটারসেনের অবসর নেওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। |