জেমস মোগা, চিডিদের ছটফটানি দেখে মনে হচ্ছিল, এখনই পারলে মাঠে নেমে ভিকট্রি ল্যাপটা দিতে পারলে খুশি হন।
গোয়ার ক্লাবের কোচ হয়ে অসংখ্য ট্রফি জিতেছেন। আগাসাইনে তাঁর বাড়ির আলমারিতে সাজানো দেশের সব সেরা ট্রফি। সেই আর্মান্দো কোলাসোও উত্তেজিত কলকাতা মাঠে প্রথম লিগ জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে। “আমার বহু দিনের স্বপ্ন সফল হবে। আমি নিশ্চিত, আমার ছেলেরা কাল আমার স্বপ্ন সফল করবে,” বলে দিলেন কলকাতায় আসা প্রথম গোয়ান কোচ।
ক্লাবের পক্ষ থেকে ডার্বির পর সেলিব্রেশনের কথা বলা হলেও বিকেলের সাংবাদিক সম্মেলনে সচিব কল্যাণ মজুমদারের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে, “কালকের জন্য ছেলেরা টগবগ করে ফুটছে। নতুন বছরে আমরা আরও একটা সাফল্য ঘরে তোলার জন্য অপেক্ষা করছি।”
কিন্তু লিগ-জয় উৎসবের প্রধান প্রেরণা যাঁরা সেই লাল-হলুদের সমর্থকরা কোথায়? ফেসবুক, টুইটারে উপচে পড়ছে আবেগ! নানা টুকরো টুকরো মন্তব্য। নানা মজার ছবি। গঙ্গাপারের তাঁবুকে উদ্দেশ্য করে। তাতে কয়েকশো লাইক হয়ে যাচ্ছে মুহূর্তে। কিন্তু অনুশীলনে সুয়োকা, সৌমিকদের উৎসাহ দেওয়ার লোক কোথায়? এক দিন পরেই কালীঘাট এম এসের বিরুদ্ধে ম্যাচ। ড্র করলেই কেল্লাফতে! টানা চার বার কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন। সাতের দশকে টানা ছ’বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ডের দিকে আর এক কদম এগিয়ে যাওয়া। এ রকম অবস্থায় কয়েক বছর আগেও অনুশীলনে উপচে পড়ত ভিড়। কিন্তু এ দিন তো তার ছিটেফোঁটাও নেই। যা শুনে ইস্টবেঙ্গলের টানা ছয় বার লিগ জয়ের অন্যতম কারিগর সমরেশ চৌধুরী অবাক! বলছিলেন, “আমাদের সময় চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন দেখতে মাঠে সমর্থকদের ভিড় উপচে পড়ত। সে সময় কলেজের মেয়েরাও আসত প্র্যাকটিস দেখতে। কী উত্তেজনা থাকত। টেনশনও কম হত না।” |
নজরদারি। তিন বিদেশিকে নিয়ে কোলাসো। মঙ্গলবার। ছবি: উৎপল সরকার। |
কেন এখন এমন হচ্ছে? আবেগের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম কি বদলে যাচ্ছে এখন? লাল-হলুদ পতাকা, ইলিশ মাছ, আবির, রং-মশাল নিয়ে কি আজ শেষ পর্যন্ত উপচে পড়বে ইস্টবেঙ্গল মাঠের গ্যালারি? ডার্বির আগেই লিগ জয়ের উৎসব পালনের জন্য? বুধবারের বিকেলে সেটা বোঝা যাবে। কিন্তু কেউ আসুক না আসুক, এ বারের লিগের রং যে এ দিনই লাল-হলুদ হয়ে যাবে সে ব্যাপারে আশাবাদী কোলাসো ব্রিগেড। সকালে অনুশীলনের পর লাল-হলুদ কোচ বলেও দিলেন, “আমরা এ বছর কলকাতা লিগে একটা ম্যাচও হারিনি। অপরাজিত হয়েই কাল খেতাব জিতে নেওয়ার জন্য ছেলেরা মানসিক ভাবে তৈরি।”
ইস্টবেঙ্গল আজ চ্যাম্পিয়ন হলে এ বারের টিমের অনেক ফুটবলারই টানা চার বার লিগ জয়ের অংশীদার হয়ে যাবেন। সৌমিক দে, গুরবিন্দর সিংহ, নওবা সিংহরা মাঠে নামলেও মেহতাব হোসেন, হরমনজোত সিংহ খাবরাদের মাঠে নামা হচ্ছে না। চোট বা কার্ড সমস্যার জন্য। তাতে অবশ্য টিমের মানসিকতার কোনও পার্থক্য হচ্ছে না।
বিপক্ষও যে খুবই দুর্বল! কালীঘাট এম এসে যে একজনের বেশি বিদেশিই নেই। চোট-আঘাতে তীব্র সমস্যায় পুরো টিম। আঠারো জনের দল গড়তেই হিমশিম খাচ্ছেন কোচ অরুণ ঘোষ। লিগের শুরুতে এই ম্যাচ ভেস্তে গিয়েছিল আলোর অভাবে। তখনই ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে ছিল চার গোলে। তা সত্ত্বেও বিপক্ষ নিয়ে সতর্ক ইস্টবেঙ্গল কোচ। বললেন, “বিপক্ষকে কখনও ছোট করে দেখতে নেই।”
কোচ টিমে আত্মতুষ্টি ঢুকতে না দিলেও ফুটবলাররা অবশ্য ধরেই নিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাঁদের চোখ আরও দূরেশনিবারের ডার্বিতে। “আমরা কাল জিতেই লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। ড্র করে নয়। আর লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সেলিব্রেশনটা ডার্বি জিতে করতে চাই। মোহনবাগানকে হারাতে না পারলে মরসুমের প্রথম ট্রফি জয়ের স্বাদটাই তেতো হয়ে যাবে,” বলছিলেন সৌমিক। এডে চিডি আবার বলছিলেন, “মোহনবাগান জার্সি গায়ে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। লাল-হলুদ জার্সিতে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হতে চলেছি। কিন্তু সেলিব্রেশন ডার্বি জিতেই করব। লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেও ডার্বির গুরুত্ব এতটুকু কমবে না।”
ফুটবলারদের সঙ্গে অবশ্য কোচের ভাবনার অমিল আছে। কোলাসো এ দিন বলে দিয়েছেন, “আমার কাছে ট্রফি জয়টাই গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট কোনও ম্যাচ নয়। এটা ক্লাবকে বুঝতে হবে। আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলে ডার্বির কোনও গুরুত্ব থাকবে না আমার কাছে। ওটা ফেড কাপের প্রস্তুতি হিসাবে দেখব।” ক্লাবের কাছে ডার্বির সময় ছুটি চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা অর্ধেক মঞ্জুর হয়েছে। কোলাসো পারিবারিক অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার গোয়া গেলেও ডার্বির দিন দুপুরে ফিরে এসে রিজার্ভ বেঞ্চে বসবেন, জানাচ্ছেন নিজেই।
ডার্বি নিয়ে কোচ ও ফুটবলারদের মানসিকতা উল্টোমুখী হওয়ার পাশাপাশি লিগ জেতার আবহাওয়ার মধ্যে আরও একটা কাঁটা খচখচ করে উঠল ক্লাব জুড়ে। এবং সেটা উগা ওপারার সঙ্গে কোচের মত পার্থক্য ঘিরে। অনুশীলনের পর হঠাৎ-ই ক্লাব তাঁবুর বাইরে এসে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে নাইজিরিয়ান স্টপার বলে দিলেন, “আমার চোট। ফেড কাপে যাব না। সুস্থ হতে মে মাস হয়ে যাবে।” আর তার একটু পরেই আর্মান্দো বলে দিলেন, “উগার অবস্থা কী সেটা ও নিজেই জানে। এখনও খোঁড়াচ্ছে। আমাকে একজন নিয়ে নয়, তিরিশ জনকে নিয়ে ভাবতে হয়।” যাতে ইঙ্গিত ছিল ফেড কাপের দলে ঠাঁই হচ্ছে না উগার। বিকেলে অবশ্য আর্মান্দো অন্য কথা বলেন। “উগা খেলবে না বলে মজা করেছে। ওকে ফেড কাপে নিয়ে যাচ্ছি। মেহতাবও যাচ্ছে। সুস্থ হলে দলে নেব।” ফলে মোগার পর এ বার উগাকে নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়েছে ইস্টবেঙ্গলে। ক্লাব সূত্রের খবর, আজ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ম্যাচে প্রথম একাদশে নাকি খেলতে চেয়েছিলেন উগা। আর্মান্দো রাজি হননি। তা নিয়েই সমস্যা। ইস্টবেঙ্গল কোচ সুয়োকা আর মোগার উপরই আপাতত আস্থা রাখছেন।
উগাকে নিয়ে ঝামেলার ব্যাপারটি অবশ্য কিছুটা পিছনে পড়ে গিয়েছে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আবহে। লাল-হলুদের সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডার সুধীর কর্মকার যেমন বললেন, “আমরা টানা ছ’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। চাইব এই টিমটা আমাদের রেকর্ড ভাঙুক। তাতে আরও খুশি হব।”
|
নতুন স্পনসর ইস্টবেঙ্গলে
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
শুধু মাঠের ভেতর নয়, মাঠের বাইরেও অন্য ক্লাবগুলিকে টেক্কা দিচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। কলকাতা লিগ জেতার আগেই আরও একটা সাফল্য এল লাল-হলুদে। নতুন স্পনসর জোগাড় করে ফেললেন কর্তারা। মোহনবাগান এখনও কো-স্পনসর জোগাড় করতে পারেনি। ইউনাইটেডে তো কোনও স্পনসরই নেই। এই অবস্থায় চার বছরের চুক্তিতে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হল একটি পরিচিত স্টিল তৈরির কোম্পানি এসআরএমবি। কপিল দেব যে কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর। মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে সাংবাদিক সম্মেলনে কোচ, ফুটবলার, কর্তাদের উপস্থিতিতে ওই কোম্পানির কর্তারা নতুন সংযুক্তির কথা ঘোষণা করলেন। এ বার থেকে চিডি-মোগা-মেহতাব-খাবরাদের জার্সির পিছনে থাকবে ওই কোম্পানির নাম। উচ্ছ্বসিত সচিব কল্যাণ মজুমদার বললেন, “নতুন বছর সবে শুরু হল। আরও কিছু স্পনসর আসবে ধীরে ধীরে।” মঞ্চে উপস্থিত লাল-হলুদ কোচ আর্মান্দো কোলাসো বললেন, “নতুন স্পনসররা জুনিয়র টিমকেও সাহায্য করবে জেনে ভাল লাগছে। মরসুম শেষ হলে জুনিয়র টিম নিয়ে আমারও কাজ করার ইচ্ছে আছে। ওখান থেকেই তো সিনিয়র টিমের ফুটবলার আসবে।” |
বুধবারে কলকাতা লিগ
ইস্টবেঙ্গল: কালীঘাট এম এস (ইস্টবেঙ্গল ২-০০) |