কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৮ মাসেই। কিন্তু জমিজটকে কেন্দ্র করে বাসিন্দাদের একাংশের বারবার বাধায় ৫ বছরেও শেষ করা যায়নি সেই কাজ। মঙ্গলবার আরও এক বার বাধা পেয়ে ফের বন্ধ হল হাওড়া ডিভিশনের ব্রাহ্মণী নদীর উপরে রেলসেতু নির্মাণের কাজ। এর ফলে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতুর কাজ ঠিক কবে শেষ হবে, তা নিয়ে আরও একবার প্রশ্নচিহ্ন উঠে গেল। চিন্তায় পড়েছেন রেল কর্তৃপক্ষও।
রেল কর্তৃপক্ষ আগেই কাজে দেরির নেপথ্যে সরাসরি জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতাকে দায়ী করেছেন। অধিগৃহীত জমির মালিকদের একটি বড় অংশই জমি বাবদ চেক নিলেও এখনও একটি অংশের মানুষ ক্ষতিপূরণের মূল্য নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে তা নেননি। তাই মাঝে মধ্যে তাঁদের একটি বড় অংশই নলহাটির জগধারী গ্রাম সংলগ্ন ব্রাহ্মণী নদীর উপরে নির্মীয়মাণ ওই রেল সেতুর কাজে বাধা দেন।
রেল সূত্রে খবর, ২০০৬ সালের ১১ জুলাই বন্যায় প্রাচীন ওই রেলসেতুটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেরামতি করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হলেও বিপদের ঝুঁকি এড়াতে রেল কর্তৃপক্ষ নতুন সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ৩০০ মিটার লম্বা ওই সেতুর জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র ৫.৮৫৫ একর জমি। তার মধ্যে ৬২ জন চাষির কাছ থেকে ৪.৮৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে দেয় রাজ্য সরকার। প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ৩৭ জন চাষি ক্ষতিপূরণের চেক নিয়ে নিলেও ২৫ জন বেঁকে বসায় সমস্যা তৈরি হয়। দাবি আদায়ে ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’ তৈরি করে জগধারী, পানিটা ও করিমপুর মৌজার চাষিদের একাংশ মাঝে মধ্যে কাজে বাধা দেন। এ দিকে, বহু বৈঠকের পরে গত কয়েক মাস ধরে অনিচ্ছুক চাষিদের মধ্যে অনেকেই চেক নিয়েছেন। রেল ও প্রশাসন সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ৩ জন চেক নেননি। |
জগধারী গ্রামের কাছে অবস্থান-বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র। |
গত ২৮ মে মাটি ভরাটের কাজে বাধা দেওয়ার পরে এ দিন সকালে ফের জমি মালিকদের একাংশ মাটি ভরাটের কাজে বাধা দেন। এ দিন বাধা দেন চেক নিয়েছেন এমন কয়েক জনই। তাঁদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে রেলে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ বার তাঁদের সেই দাবিও পূর্ণ করতে হবে। তাই তাঁরা এ দিন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থাকে জোর করে কাজ করতে দেননি। আন্দোলনকারীদের পক্ষে প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌতম দত্তরা বলেন, “জমি দিলেও রেল তার প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। আমরা তাই কাজে বাধা দিতে বাধ্য হয়েছি।” যত দিন পর্যন্ত চাকরির দাবি মানা হবে, তত দিন তাঁরা ওই রেলসেতু নির্মাণের কাজে বাধা দেবেন বলে ‘হুমকি’ও দিয়েছেন। এ দিন বাধা পাওয়ার খবর পেয়ে রেলের এক আধিকারিক জমিদাতাদের সঙ্গে কথা বলতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু কোনও রফাসূত্র মেলেনি।
রেলের হাওড়া ডিভিশনের (নির্মাণ) ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার রামেশ্বর প্রসাদ বলেন, “েরলসেতুটি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে যাওয়াটা খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে জমিদাতাদের বোঝা উচিত, জাতীয় স্বার্থেই ওই কাজ হচ্ছে। তা নিয়ে বারবার দর কষাকষি করা ঠিক নয়।” তিনি জানিয়েছেন, প্রশাসনের মাধ্যমে জমিদাতাদের দাবির কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাঁর দাবি, “বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। ওঁরা যদি সময় না দেন, তা হলে তো মুশকিল।” রেলের দাবি, ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ফের বাধায় গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু নির্মাণ আরও পিছিয়ে পড়বে। রামেশ্বরবাবু বলছেন, “কাজে বাধা না পেলে আগামী ছ’ মাসের মধ্যেই নতুন সেতু দিয়ে রেল চলাচল করবে।” তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আরও কয়েক দিন সময় নিতে চাইছেন। এর মধ্যে রেল নিজেদের মতো করে ওই জমিদাতাদের বোঝাবে। তাতে কাজ না হলে জেলা প্রশাসনের সাহায্য চাওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এ দিকে, রেলের কাজে বাধা দেওয়ার খবর জানেন না বলেই দাবি করেছেন মহকুমাশাসক (রামপুরহাট) রত্নেশ্বর রায়। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “রেলের তরফে এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে আমরা প্রশাসনিক স্তরে অবশ্যই সাহায্য করব।”
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “বাধা দিলে কাজ হবে না। যেখানে চাকরির সুযোগ আছে (যেমন নন্দীগ্রাম, ফুরফুরা শরিফ) রেলকে জমি দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। নলহাটিতে সমস্যার ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের চক্রান্ত রয়েছে।”
|