এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কালনা শহরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি উঠছে। এ বছর পর্যটন উৎসব হওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু উৎসবের জন্য পরিকাঠামোর দিক দিয়ে শহর তৈরি কি না, সে প্রশ্নও রয়েই যাচ্ছে।
শহরের বাসিন্দাদের দাবি, পর্যটকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য উপকরণ নেই শহরে। কারণ, গত দশ বছরে শহরের লোকসংখ্যা লাফিয়ে বাড়লেও আয়তনে বাড়েনি শহর। ফলে অধিকাংশ এলাকা ঘিঞ্জি। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী কালনা শহরের জনসংখ্যা ৫৯ হাজার। ১৮টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ জায়গাতেই বিঘে খানেকের এক ফালি জমিও ফাঁকা নেই। এছাড়া রাস্তাঘাটও খুব একটা চওড়া নয়। তার উপর ফুটপাথ দখল করে দোকান হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন সকাল থেকেই কলেজ মোড়, পুরসভা চত্বর, চকবাজার-সহ নানা রাস্তায় যানজটও লেগেই থাকে। পরিচ্ছন্নতার দিক থেকেও কালনার খুব একটা সুনাম নেই বলে বাসিন্দাদের দাবি। তাঁদের অভিযোগ, শহরের নানা জায়গায় আবর্জনা পড়ে থাকে। নর্দমাগুলিও প্রতিদিন সাফাই হয় না।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হল বাইরে থেকে কেউ এসে রাস্তা চিনবেন কীভাবে? শহরের কোনও রাস্তারই নাম নেই। ফলে কোথা দিয়ে গেলে দর্শনীয় স্থান মিলবে তা বুঝতেই মুশকিলে পড়বেন পর্যটকেরা। পুরসভায় নতুন বোর্ড গঠনের পরে তেতুঁলতলা মোড়, ১০৮ শিব মন্দির চত্বর, মহাপ্রভু পাড়া-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ত্রিফলা বাতি লাগানো হয়। কিন্তু বাকি শহরের আঁধার ঘোচাতে ভরসা সেই টিমটিমে আলো।
পর্যটকদের থাকার জন্যও পর্যাপ্ত জায়গা নেই শহরে। পুরসভার অতিথিনিবাস রয়েছে বটে কিন্তু সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর হাতে গোনা। আর বাকি যে ৫-৬টি লজ রয়েছে সেগুলির থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও মধ্যম মানের। একসময় কালনার পান্তুয়া খাদ্যরসিকদের অন্যতম পছন্দ ছিল। কিন্তু বাইরের মানুষের কাছে এই মিষ্টি তুলে ধরারও কোনও উদ্যোগ করা হয়নি। এছাড়া কোথাও বেড়াতে গেলে স্মৃতি হিসেবে সেখানকার নাম লেখা কোনও জিনিসপত্রও কেনারও রেওয়াজ থাকে। কিন্তু কালনা শহর ঘুরেও এ ধরণের কোনও জিনিস পর্যটকেরা পাবেন কি না সন্দেহ। গাড়ি রাখার জন্যও নির্দিষ্ট কোনও স্থান নেই শহরে। সম্প্রতি কলকাতা থেকে বেড়াতে সপরিবারে এসেছিলেন রাজীব ঘোষ। তিনি বলেন, “শহরের মন্দিরগুলি ভাল লাগলেও ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য বিশেষ কিছু নেই। রাতে থাকার ব্যবস্থাও দুর্বল।” বহরমপুর থেকে বেড়াতে আসা বছর কুড়ির তরুণী শ্যামলী বাগচিও বলেন, “রাস্তাঘাট-সহ অনেক পরিকাঠামোই দুর্বল। আবার আসবো কি না ভাবব।”
সমস্যাগুলির কথা স্বীকার করেছে কালনা পুরসভাও। পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু জানান, শহরের ফুটপাথকে দখলমুক্ত করার ভাবনা রয়েছে। এছাড়া মহিষমর্দিনীতলার মাঠ সাজানোর কাজও শুরু হয়েছে। সম্প্রতি পুরসভা, পর্যটন দফতর ও পুরাতত্ব বিভাগের একটি চুক্তি হয়েছে। আশা করি, দ্রুত রাজবাড়ি কমপ্লেক্সে আলো-শব্দের ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, কালনা সম্পর্কে রাজ্য ও ভিন রাজ্যের পর্যটকদের কোনও ধারণা নেই। তা তুলে ধরতেই পর্যটন উৎসবের আয়োজন। বাকি সমস্যাগুলিও ধীরে ধীরে কাটানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
|