পর্যটক টানতে পর্যটন উৎসবের আসর বসতে চলেছে কালনায়। বিধায়ক তথা পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর উদ্যোগে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজবাড়ি মাঠে ওই উৎসবের আসর বসবে। চলবে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
ভাগীরথীর পাড়ের প্রাচীন কালনা শহরে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের অভাব নেই। শহরের মধ্যেই রয়েছে ১০৮ শিবমন্দির, টেরাকোটার কারুকার্যে ভরা প্রতাপেশ্বর মন্দির, রাজবাড়ি কমপ্লেক্স, কৃষ্ণচন্দ্র জিউ মন্দির, লালজি মন্দির, গোপাল মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। দাঁতনকাঠিতলার পাঁচশো বছরেরও বেশি পুরনো মসজিদ-ই-মজলিসও কম আকর্ষণীয় নয়। এ ছাড়াও রয়েছে সাধক কবি ভবা পাগলার ভবানী মন্দির, কমলাকান্তের ভিটে-সহ নানা দর্শনীয় স্থান। আবার শহর থেকে দু’পা এগোলেই চোখে পড়বে স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক বাসভূমি দত্তদরিয়াটন গ্রাম। বৈদ্যপুর গ্রামেও রয়েছে প্রাচীন দেউল, রাসমঞ্চ-সহ বেশ কিছু মন্দির। বাঘনাপাড়াতেও রয়েছে বেশ কিছু পুরনো মন্দির। কিন্তু এত কিছু থাকা সত্ত্বেও কালনা শহরে পর্যটকদের ভিড় সেভাবে হয় না। বিধায়ক বিশ্বজিৎবাবুর মতে, পর্যটকদের ঢল না নামার বড় একটি কারণ প্রচার। আর তাই পর্যটন উৎসবের মধ্যে দিয়ে কালনার ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। উৎসব উপলক্ষে একটি কমিটি গড়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। |
কী থাকবে এই উৎসবে? উৎসব কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজবাড়ি মাঠে একটি মঞ্চ তৈরি করা হবে। সেখানেই তিন দিন পালা করে চলবে নানা অনুষ্ঠান। মঞ্চের আশপাশে বহু স্টল থাকবে। মিষ্টির জন্য থাকবে একটি বিশেষ স্টল। সেখানে পর্যটকদের উদ্দেশ্যে রাখা হবে কালনার ময়রাদের তৈরি নোড়া পান্তুয়া, মাখা সন্দেশ-সহ নানা ধরনের মিষ্টি। থাকবে বর্ধমান সদরের সীতাভোগ-মিহিদানা, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া, বনগাঁর নলেনগুড়ও।
উৎসবে তুলে ধরা হবে কালনার তাঁতের শাড়িও। আবার কোথাও স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা কুলো, ঝুড়ি, সাজি তৈরি করে তাঁদের শিল্পভাবনা তুলে ধরবেন দর্শকদের কাছে। পর্যটকদের শহর ঘোরার জন্যও থাকবে দেদার ব্যবস্থা। ছোট ছোট মিনিবাসে নানা দলে ভাগ করে ঘোরানো হবে দ্রষ্টব্য স্থানগুলি। পর্যটকেরা চাইলে পাবেন ঠাকুরবাড়ির ভোগও। এর জন্য দু’টি ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে কথাও হয়ে গিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। পর্যটকদের নৌকাবিহারের জন্যও ভাগীরথীতে বেশ কয়েকটি নৌকা সাজানো হবে। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “উৎসবের আগে গোটা বিষয়টি ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে সারা পৃথিবীর মানুষকে। সেখানে উৎসবের পাশাপাশি কালনা শহরে কী ভাবে আসা যাবে, কোথায় থাকা হবে তার বিবরণ জানিয়ে দেওয়া হবে। উৎসবের আগে স্কুল পড়ুয়াদেরও প্রচারে নামানো হবে। এছাড়া বাস, লরি, রিকশা-সহ নানা যানবাহনেও উৎসবের বার্তা দেওয়া ফ্লেক্স লাগানো হবে।” তাঁর দাবি, মহকুমাশাসককে উৎসবের কথা জানানো হয়েছে। উৎসব উপলক্ষে সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে একটি বৈঠকের জন্যও বলা হয়েছে তাঁকে। কিন্তু তিন দিন ধরে উৎসবের খরচ আসবে কোথা থেকে? বিশ্বজিৎবাবুর বক্তব্য, “উৎসবের জন্য একটি বিশেষ বই প্রকাশ করা হবে। ওই বইটিতে বেশ কিছু বিজ্ঞাপন থাকবে। সেখান থেকে খরচের একাংশ উঠে আসবে। বাকি খরচের ব্যাপারে কিছু ব্যবসায়ী সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।” |