ট্রেনে ভিড়, বিপুল ভাড়া অটোর
বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কালনা মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে বসে কাঁদছিলেন বছর পঁচিশের নাজমা বিবি। তাঁর পাঁচ বছরের মেয়ে তিন দিন ধরে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। সোমবার সকালে চিকিৎসকেরা তাকে ছেড়ে দিলেও বুলবুলিতলার বাড়িতে ফেরার গাড়ি পাননি তিনি। অবশেষে, তাঁকে কান্নাকাটি করতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে এসে একটি মোটরভ্যান ঠিক করে দেন।
এই চিত্র কোনও ব্যতিক্রম নয়, সোমবার দিনভরই বাসের জন্য হা-পিত্যেশ করে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন নিত্যযাত্রীরা। সরকারি বাসের আশা ছেড়ে দিয়ে কেউ আবার চড়া ভাড়া দিয়ে চড়ে বসলেন অটো কিংবা ট্যাক্সিতে। কেউ বা বাস পেয়ে ধরলেন বাড়ির পথ। সারা দিনে এই ছিল বর্ধমান জেলায় বাস ধর্মঘটের চিত্র।
এ দিন বর্ধমান শহরে সারা দিন কোনও বেসরকারি বাস চলাচল করেনি। শহরের মূল রাস্তা জিটি রোডে বাসের অপেক্ষায় অসংখ্য মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বাস না পেয়ে ট্রাক, মিনি ট্রাকে করেই অনেকে গন্তব্যে পৌঁছোন। নিত্যযাত্রীদের অনেককে বলতে শোনা যায়, ভাড়া বাড়াতে সরকার রাজি না হওয়ার কারণেই বেসরকারি বাসের মালিকেরা ধর্মঘটের পথ নিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে বাস ধর্মঘট নিয়ে এ দিন শহরে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

বাস নেই, ফলে কাটোয়া-বলগোনা
ছোট রেলে ঠাসা ভিড়।

কুয়াশা মাখা দিনে কাটোয়া শহরে
ভরসা ছিল পিক-আপ ভ্যানই।

বর্ধমানের জিটি রোডেও দুর্ভোগ যাত্রীদের।

কালনা বাসস্ট্যান্ডে জমিয়ে চলল তাস খেলা।

বাস ধর্মঘটের কারণে এ দিন কাটোয়া-বলগোনা ন্যারোগেজ লাইনের ট্রেনে ভিড় উপচে পড়ে। এই লাইনের বলগোনা থেকে বর্ধমান পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার রেল লাইন বছর দু’য়েক আগে ব্রডগেজ হয়ে গিয়েছে। বাকি ২৮ কিলোমিটার রেল লাইন এখনও ন্যারোগেজই রয়ে গিয়েছে। ট্রেনের গতিপথ কমে যাওয়ার জন্য এই ন্যারোগেজ লাইনে সাধারণত যাত্রী বিশেষ হয় না। কিন্তু বাস ধর্মঘটের জন্যই সপ্তাহের প্রথম দিন ছোট লাইনের ট্রেনে দেখা গেল বাদুরঝোলা ভিড়। স্থানীয় বাসিন্দা বাসবরঞ্জন সাহা, সনাতন দাসেরা বলেন, যাত্রীবাহী ছোট গাড়িগুলো কম পক্ষে ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা ভাড়া চাইছে। তাই ছোট ট্রেনেই চেপেছেন বেশির ভাগ নিত্যযাত্রী।
মঙ্গলকোটের সিপিএম বিধায়ক শাহজাহান চৌধুরী বলেন, “বাস ধর্মঘটের জন্য কাটোয়া-বর্ধমান রুটের কয়েক হাজার যাত্রী সমস্যায় পড়েন। ব্রডগেজ লাইন থাকলে মানুষজনকে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হত না।” তিনি জানান, মাস খানেক আগে সিপিএমের এক প্রতিনিধি দল রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর কাছে ওই লাইন ব্রডগেজ করার জন্য স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। সোমবার এনটিপিসির কাটোয়া ফিল্ড অফিসের অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার শিবাশিস বসু ব্রডগেজ লাইনের জন্য রেলকে চুক্তি অনুযায়ী টাকা দেওয়ার অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। রেল সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে এই ন্যারোগেজ লাইনকে ব্রডগেজে রূপান্তর করার জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের (পিডিসিএল) সঙ্গে রেলের চুক্তি হয়েছিল। কাটোয়াতে সেই সময় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র করার জন্য এগিয়ে এসেছিল পিডিসিএল। এখন সেখানে সেই জায়গায় এসেছে এনটিপিসি। এই লাইন তৈরি হলে ঝাড়খন্ড বা আসানসোল শিল্পাঞ্চল থেকে প্রস্তাবিত তাপবিদ্যু কেন্দ্রের জন্য কয়লা পরিবহণ করা সহজ হবে বলে ওই দুই সংস্থা রেলের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। রেল জানিয়েছে, ওই লাইনের ৫০ শতাংশ রাস্তা রেল তৈরি করেছে। বাকি রেলপথ তৈরির জন্য রাজ্য সরকার বা এনটিপিসিকে চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিতে হবে। পূর্ব রেলের নিত্যযাত্রীদের সংগঠন বিবি লুপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পুরবধি মুখোপাধ্যায় বলেন, “চুক্তির ফাঁদে পড়ে যাত্রীদের অবস্থা যে কতটা কাহিল, আজকের বাস ধর্মঘট সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।”
এ দিন কাটোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনও বাস ছাড়েনি। ফলে বর্ধমান-সিউড়ি-মেমারি-বোলপুর-কৃষ্ণনগর-বহরমপুর রুটের যাত্রীরা চরম সমস্যায় পড়েন। যাত্রীদের একটা বড় অংশ মালবাহী গাড়ি করে বা ছোট গাড়ি করে গন্তব্যস্থলে গিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যাত্রীর তুলনায় গাড়ি কম থাকার জন্য বর্ধমানের যাত্রীরা এ দিন ব্যাপক হয়রানির শিকার হন। ছোট মালবাহী গাড়িগুলি বর্ধমান যাওয়ার জন্য জন পিছু ৪০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়া নিয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, এ দিন সরকারি বাসের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। এ দিন কাটোয়া বাসস্ট্যান্ডে সকাল থেকে কোনও বাস কর্মীকেই দেখা যায়নি। আইএনটিউসির বাস সংগঠনের নেতা নারায়ণচন্দ্র সেন বলেন, যাত্রীদের সুবিধার জন্য সন্ধ্যার পর বিভিন্ন রুটে শেষ বাস যাওয়ার সময় ধরে বাস পাঠানো হয়েছে।”
একই ছবি দেখা গিয়েছে কালনাতেও। সাধারণ দিনে কালনা বাসস্ট্যান্ড থেকে কালনা-গুড়াপ, কালনা-বর্ধমান, চুঁচুড়া-কালনা, কালনা-পাণ্ডুয়া এবং কালনা-মেমারি ভায়া বাঘনাপাড়া রোডে বেসরকারি বাস চললেও এ দিন সকালে কালনা-গুড়াপ রোডের দু’একটি বেসরকারি বাস ছাড়া কোনও বাস চলেনি। রাস্তায় প্রচুর মোটরচালিত ভ্যানের দেখা মেলে এ দিন। সাধারণ দিনের থেকে সেগুলির ভাড়া ছিল অনেকটাই বেশি। কৃষ্ণদেবপুরের বাসিন্দা অনিল দেবনাথ বলেন, “কালনা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে যেখানে পাঁচ টাকা ভাড়া হয় সেখানে ২৫ টাকা ভাড়া দিয়ে আমাদের বাড়ি ফিরতে হল।” বেলা ১১টার পর কালনা-গুড়াপ রোডের সমস্ত বাস চলাচলই বন্ধ হয়ে যায়। বাসকর্মীদের তাস খেলে সময় কাটাতে দেখা যায়। বাস কর্মীরা জানিয়েছেন, একমাত্র বর্ধমান-কালনা রোডেই এ দিন সরকারি বাস চলেছে। এ দিন কিছু রুটে অটো চললেও, তার ভাড়াও ছিল অনেকটাই বেশি।

ছবি তুলেছেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, উদিত সিংহ ও মধুমিতা মজুমদার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.