একদিকে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ধুঁকছে রাস্তা, অন্যদিকে লেগেই রয়েছে একের পর এক দুর্ঘটনা। সঙ্গে বেহাল এসটিকেকে রোডও। ফলে বেশিরভাগ ছোট, কিংবা ভারি গাড়িই সময় বাঁচাতে বেছে নেয় কৈচর-করুই রাস্তা।
কিন্তু তাতেও রেহাই নেই। সে রাস্তাতেও দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। এমনকী মঙ্গলবারও কৈচর-কাটোয়া রাস্তায় কারুলিয়া ও ইট্যা গ্রামের মধ্যে পরপর দু’টি লরি বিকল হয়ে যায়। ফলে দিনভর ওই রাস্তায় কার্যত বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাধারণ যাত্রী থেকে বাস মালিক সকলেরই দাবি, বারবার নানা মহলে রাস্তা সংস্কারের আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি। আজ, বুধবার থেকে তাই কৈচর-করুই রাস্তায় কোনও বাস চলবে না বলে জানিয়েছেন মালিকেরা। কাটোয়া পূর্ত দফতর (সড়ক) অবশ্য সাফ জানিয়েছে দিয়েছে, পাকা রাস্তায় ইটের ঝামা ফেলে গর্ত বোজানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। |
কাটোয়া শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া এসটিকেকে রোড কার্যত চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে যাওয়ায় আপাত ব্যস্ততাহীন এই রাস্তাটি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছর খানেক ধরে বর্ধমান বা বীরভূমের বালি ও পাথর বোঝাই ভারী গাড়িগুলিও ওই রাস্তা দিয়ে সিঙ্গী হয়ে পূর্বস্থলীর ছাতনির মোড়ে গিয়ে এসটিকেকে রোডে উঠছে। মঙ্গলবারও গুসকরার কাছে ভেদিয়া থেকে বালি নিয়ে কৃষ্ণনগর যাচ্ছিল দু’টি মালবাহী গাড়ি। মঙ্গলকোটের ইট্যা গ্রামের মোড় পার হওয়ার পরেই একটি বাঁকের কাছে একটি গাড়ি বসে যায়। তার কিছুক্ষণ পরে আরও একটি বালির গাড়ি ওই গাড়িটিকে পাশ কাটাতে গেলে তারও একই দশা হয়। ফলে দিনভর প্রায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় ওই রাস্তায়। দুর্ভোগের শিকার হন অসংখ্য যাত্রী।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা বলে প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। একাধিক জায়গায় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। কিছুদিন আগে গর্ত বোজাতে ফেলা ঝামা ইট উঠে যাওয়ায় অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর হয়েছে। এছাড়া রাস্তা জুড়ে পিচের আবরণ প্রায় নেই। এক ঝলক দেখলে মাটির রাস্তা বলেই মনে হয়। দুর্ঘটনার পরে মালবাহী গাড়ির পাশেই এক মুখ চিন্তা নিয়ে বসেছিলেন চালকেরা। ওই দুই চালক বজলুর শেখ ও মজিদ শেখরা বলেন, “ভেদিয়া থেকে বালি নিয়ে আসছি, যাব কৃষ্ণনগর। এসটিকেকে বেহাল বলে এই রাস্তা ধরলাম। কিন্তু পানা পুকুরেই আমাদের ডুবতে হল।”
এ দিন সকালের দিকে কয়েকটা বাস চলাচল করলেও বেলা গড়াতেই প্রায় স্তব্ধ বয়ে গিয়েছে যাতায়াত। কৈথন গ্রামের বাসিন্দা, বাসযাত্রী মোশারফ মল্লিক (চাঁদ) বলেন, “প্রাণ হাতে করে বাসে রাস্তা পার হয়েছি। চালকরা চরম ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা থেকে বাস নামিয়ে নয়নজুলি দিয়ে বাস চালিয়েছে।” ওই রাস্তা দিয়ে নিত্য যাতায়াতকারী কারুলিয়া গ্রামের সমীর যশ, স্থানীয় করুই গ্রামের শিক্ষক নব হাজরাদের অভিযোগ, সংস্কারের নামে ইটের ঝামা ফেলা হয়েছে আর প্যাচ ওয়ার্ক করে ফেলে রাখা হয়েছে।
কাটোয়া-কাটোয়া, কাটোয়া-কৈচর, কাটোয়া-বনকাপাশি, কাটোয়া-বর্ধমান (ভায়া করুই) রুটের বাস মালিকদেরও অভিযোগ, ওই রাস্তায় কোনও না কোনও বাসের যন্ত্রাংশ খারাপ হওয়া নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তার উপর যানজট লেগে থাকায় লোকসানের বহর বেড়েই চলেছে। ওই রুটের বাস চালক সফিক মল্লিক বলেন, “বাস চালানো সম্ভব নয়। কিছু ঘটে গেলে তার দায় কে নেবে! সে জন্য বাসকর্মীরা সবাই মিলে ঠিক করেছি বাস চালাব না, অন্য গাড়িকেও ওই রাস্তায় চলতে দেব না।” আইএনটিউসি পরিচালিত বাস মালিক সমিতির নেতা নারায়ণচন্দ্র সেন বলেন, “ওই রাস্তায় বাস চালানো সম্ভব নয়। প্রাণের মায়া তো আছে।” কাটোয়া পূর্ত দফতরের (সড়ক) সহকারি বাস্তুকার কৃষ্ণেন্দু দাসগুপ্ত বলেন, “ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য সাত কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত পুরো রাস্তা সংস্কার করা যাবে না। তবে আগামী সপ্তাহে রাস্তা চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে।” |