সংস্থাটি খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গেলেও দ্রত পরিস্থিতির উন্নতি হবে, ডিপিএলে পরিদর্শনে এসে এমনই আশ্বাস দিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে চাহিদা মতো। কী ভাবে দেওয়া হচ্ছে, সেটা ডিপিএলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা ঠিক, ডিপিএল এখন খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তবে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।”
গত বেশ কিছু দিন ধরে উৎপাদন প্রায় তলানিতে ঠেকেছে রাজ্য সরকারের এই সংস্থায়। সাতটি ইউনিটের মধ্যে বয়স ও কারিগরি কারণে প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট দু’টি বন্ধ। পরের তিনটি ইউনিটের উৎপাদন খরচ বেশি বলে চালিয়ে লাভ হয় না। ভরসা ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ষষ্ঠ ও ২০০৮ সালে চিনা প্রযুক্তিতে গড়ে ওঠা ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সপ্তম ইউনিট। নানা কারণে সে দু’টিও এখন বন্ধ। এক সপ্তাহ টানা উৎপাদনশূন্য থাকার পরে সোমবার গভীর রাত থেকে তৃতীয় ইউনিটটি চালু হয়। এমন পরিস্থিতিতে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ কিনে সরবরাহ করছে ডিপিএল। এরই মধ্যে সংস্থার কোকওভেন প্ল্যান্টে দু’টি কয়লার রেক এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঠিকা সংস্থার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় সেই কয়লা নামানোর কর্মী নেই। তার জেরে সংস্থাকে কয়েক লক্ষ টাকা জরিমানা গুণতে হবে রেলের কাছে। এ দিন বিদ্যুৎমন্ত্রী অবশ্য বলেন, “বিষয়টি আমায় কেউ বলেনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” |
মন্ত্রী এ দিন জানান, ডিপিএলে নির্মীয়মাণ অষ্টম ইউনিটটি আগামী জুলাইয়ে চালু হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আর একটি নতুন ইউনিটে কয়লার বদলে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে উৎপাদন হবে। তাঁর কথায়, “আগামী দু’আড়াই বছরের মধ্যে উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে সেই নতুন ইউনিটে। সে ভাবেই এগোনো হচ্ছে।” তিনি জানান, ডিপিএলের অব্যবহৃত জমিতে কর্মীদের জন্য বহুতল আবাসন হবে। বাকি জায়গায় আইটি পার্ক, শপিংমল ইত্যাদি গড়ে সংস্থার ঋণ শোধের পরিকল্পনা রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, “একটি সংস্থা ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে। পুরো রিপোর্ট পেলে ডিপিএল বোর্ড, মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হবে।”
লোকসানের মুখে ডিপিএল এর আগেও পড়েছে। তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ডিপিএল এবং কোকওভেন প্ল্যান্টের আধুনিকীকরণের জন্য প্রায় তিনশো কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। তার পরে উৎপাদন বাড়ে, সংস্থা ঘুরে দাঁড়ায়। ২০০৭-০৮ বর্ষে ডিপিএল প্রায় ৮০ কোটি টাকা লাভ করে। এখন সেই সংস্থার ঘাড়ে কয়েকশো কোটি টাকা লোকসানের খাঁড়া। বিদ্যুৎমন্ত্রী মনীশবাবু জানান, চিনা প্রযুক্তিতে গড়া তিনশো মেগাওয়াট ক্ষমতার ইউনিটটি প্রায়ই বিগড়ে যায়। মন্ত্রী বলেন, “এই ইউনিটটি নিয়মিত ভাবে কর্মক্ষম করতে ১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। সে জন্য কিছুদিন টানা বন্ধ থাকবে সেটি।” তিনি জানান, জুলাইয়ে আড়াইশো মেগাওয়াটের অষ্টম ইউনিটটি চালু হওয়ার কথা। এ ছাড়া, ডিপিএল থেকে আলাদা করার কথা না ভেবে কোকওভেন প্ল্যান্টের ব্যাটারির উন্নতি করা হবে। প্রয়োজনে নতুন ব্যাটারিও লাগানো হবে প্ল্যান্টে।
মন্ত্রী জানান, এসার অয়েলের থেকে কোল-বেড মিথেন (সিবিএম) গ্যাস নিয়ে ডিপিএলে তিনশো মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন একটি ইউনিট গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত ইউনিট চালু করা মাত্র উৎপাদন শুরু করে দেয়, অপেক্ষা করতে হয় না।” ডিপিএলের দূষণ নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কিন্তু গ্যাসচালিত ইউনিট চালু হলে পরিবেশ দূষণও হবে না বলে ডিপিএল সূত্রে খবর।
২০১০ সালে তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী নিরুপম সেন বর্তমানে নির্মীয়মাণ অষ্টম ইউনিটেই জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছিলেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। শহরবাসী তাই বলছেন, না আঁচালে বিশ্বাস নেই।
|