ইট-বৃষ্টির পরে যুবভারতীতে শুরু পুলিশি তৎপরতা। |
নাটক, পাল্টা নাটকের এত রসদ থাকা সত্ত্বেও ম্যাচ শেষে লাভের গুড় কিন্তু খেতে পেলেন না সবুজ-মেরুন কিংবা সাদা-কালো শিবির। বরং পরপর চার বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ‘স্টার্টার’ সোমবারই মুখে তুলে ফেললেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। বুধবার কালীঘাট এমএস-এর বিরুদ্ধে এক পয়েন্ট পেলেই লাল-হলুদ তাঁবুতে লিগ জয়ের পতাকা তুলে দেবেন ময়দানের প্রথম গোয়ান কোচ আর্মান্দো কোলাসো।
বেচারা করিম! চোদ্দো মাস ধরে কোচিং করিয়েও ১২৫ বছরের মুখে দাঁড়ানো গঙ্গাপারের তাঁবুতে ট্রফি আনতে পারলেন না এখনও। এ রকম একটি ম্যাচের পরে তিনিও যেন কেমন ম্রিয়মান। বলে গেলেন, “জর্জ টেলিগ্রাফ এবং পিয়ারলেস ম্যাচ ড্র করার পরেই কলকাতা লিগ কঠিন হয়ে গিয়েছিল। তবে ফেড কাপের আগে পরপর দুই বড় ম্যাচ নিজেদের ঘষেমেজে নিতে সাহায্য করবে।”
৪-৪-২ ছকে দাঁড়িয়েও এ দিন করিমের বাগান পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের ভেঙেচুরে নিচ্ছিল বারবার। আক্রমণের সময় ৪-৪-১-১। কিন্তু বিপক্ষ তাঁদের রক্ষণে হানা দেওয়ার সময় ৪-১-৪-১।
সঞ্জয় সেন ময়দানের সব গলিই চেনেন। ইস্টবেঙ্গলের থেকে পয়েন্ট কাড়ার পর এ দিন করিমের দলকেও জিততে দিলেন না। ‘বুড়ো’ অসীমের পিছনে পেনকে ‘ফ্রি-ম্যান’ করে দিয়েছিলেন। তাঁর ছক ছিল ৪-৪-১-১। রক্ষণে চাপ বাড়লে পেন নীচে নেমে এসে ৪-৫-১ করে দিচ্ছিলেন।
সঞ্জয়ের ‘ব্যাঙ্ক ব্যালান্স’ তাঁর দলে একাধিক মোহনবাগান ফেরত ফুটবলারের নিজেদের প্রমাণ করার জেদ। যেমন রহিম নবি। রবিবার সকালে কলকাতা ম্যারাথনে দৌড়তে গিয়ে বলেছিলেন, “লুসিয়ানো, জোসিমার নেই তো কী? আমি মোহনবাগানের জালে বল ঢোকাবোই।” এ দিন কথা রেখে বলেও গেলেন, “মহমেডানে যাওয়ার আগের মুহূর্তেও মোহনবাগানের ডাকের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। ওরা আইএমজি-আর থেকে ফুটবলার নিল না। তাই মহমেডানে এলাম। অনেক কথা শুনেছি। জবাব দেওয়ার জন্য এই গোলটা দরকার ছিল।” |
এ দিন নবির গোলের সময় তাঁকে মার্ক করতে ভুল করলেও তার পর কিন্তু চেনা ছন্দেই খেলল মোহনবাগান রক্ষণ। বিশেষ করে স্টপার কিংশুক এবং রাইট ব্যাক প্রীতম। ফর্মে ফেরার আভাস দিয়ে রাখলেন ওডাফাও। ধীরে ধীরে ফিট হচ্ছেন তিনি। কিন্তু করিমের দলের হয়ে এ দিন জ্বলে উঠতে পারলেন না দুই উইং হাফ রাম এবং পঙ্কজ। ফলে ওডাফার সাপ্লাই লাইন কেটে যাচ্ছিল। ডেনসনও দুই স্টপারের মাঝে ঢুকে পড়ছিলেন। ফলে বাগান রক্ষণ এবং মাঝমাঠের মধ্যে যে ১৫-২০ গজের একটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হচ্ছিল তা পুরোদমে কাজে লাগিয়ে গেল অ্যান্টনি, পেন, অসীমের ত্রিভূজ আক্রমণ। আর সাবিথ? নীলগিরি থানা থেকে এ বার তাঁর বাবা সত্যেন আরও একবার ‘এত্তেলা’ পাঠিয়ে বলতে পারেন, “বড় দলের জার্সি পরলে গোল করতে হয়। মিস করলে হারিয়ে যেতে হয়।”
ভুল সঞ্জয়ের দলেরও হল। এ দিন শুরু থেকেই ওডাফাকে একদম ‘স্যান্ডউইচ’ করে রাখছিলেন মহমেডানের দুই স্টপার সন্দীপ এবং মেহরাজ। কিন্তু ‘ডাবল কভারিং’-এর সময় প্রথম জন বেশ নড়বড়ে। আর সাবিথ বা ওডাফা নিজের গোলের দিকে মুখ করে বল নামিয়ে দিচ্ছিলেন বারবার। কাতসুমিরা সেই বল ধরার সময় চার্জে আসতে দেরি করছিলেন মণীশ, অ্যান্টনি। কখনও কখনও একই লাইনে এই দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার চলে আসছিলেন। নিজেদের মধ্যে দূরত্ব যেখানে চার-পাঁচ গজের মধ্যে থাকার কথা। তা বেড়ে হচ্ছিল সাত-আট গজ। এই সুযোগেই বাগানের সমতা ফেরানো।
মহমেডান শিবির অবশ্য পেনাল্টির দাবিতে সোচ্চার। কোচ থেকে ফুটবলার, কর্তা সকলেই। তবে উত্তম সরকারের রেফারিং উচ্চমানের মনে হয়নি কখনওই। বাগান শিবিরও বলছে চার মিনিট কম খেলিয়েছেন তিনি।
ফেড কাপের আগে করিম, সঞ্জয়ের এই যুদ্ধ থেকে ইস্টবেঙ্গল যেমন লিগ প্রায় দেখে ফেলল, তেমনই দু’দলের ফাঁক-ফোকড়ও দেখে গেলেন ইউনাইটেড কোচ সাতোরি এবং আর্মান্দোর সহকারী রঞ্জন চৌধুরী। বাগান এবং নবিদের বধ করার কিছু স্ট্র্যাটেজি কিন্তু তাঁদের নোটবুকেও উঠে গেল।
মোহনবাগান: শিল্টন, প্রীতম, কিংশুক, আইবর, সৌভিক, রাম (জাকির), ডেনসন, কাতসুমি, পঙ্কজ (শঙ্কর), সাবিথ, ওডাফা।
মহমেডান: লুইস, নির্মল, সন্দীপ, মেহরাজ, ধনরাজন, ইসফাক (জেরি), অ্যান্টনি, মণীশ মৈথানি, নবি, পেন, অসীম। |