কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির (আপ) আঁতাঁতের অভিযোগ প্রতিষ্ঠা করার জন্য এ বারে পরিসংখ্যানের আশ্রয় নিল বিজেপি। দলের দাবি, দিল্লি বিধানসভা ভোটে যত জন আপকে ভোট দিয়েছেন, তার নব্বই ভাগের বেশি কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়ার পক্ষে রায় দেননি অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। তা সত্ত্বেও শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদীকে দুর্বল করার জন্যই কংগ্রেসের কৌশল ধরে তাদের সমর্থনে দিল্লিতে সরকার গড়েছে আপ।
মোদীর সেনাপতিরা আজ পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, দিল্লিতে ২৩ লক্ষ ২২ হাজার ৪১৭ জন আপকে ভোট দিয়েছিলেন। ভোটের পর কংগ্রেসের সঙ্গে সরকার গড়া ঠিক হবে কি না, তা পরখ করার জন্য এসএমএস, ই-মেল, ছোট ছোট জনসভার মাধ্যমে মোট ২ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯৬৬ জনের মধ্যে গণভোট করে আপ। এই সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে খোদ আপের পক্ষ থেকেই। আপ জানিয়েছে, ৩ লক্ষ মানুষের মধ্যে ৭৪ শতাংশ সরকার গড়ার পক্ষে রায় দিয়েছে। বিজেপির মতে, সব মিলিয়ে যে চিত্রটি সামনে ফুটে আসছে, সেটি হল বিধানসভা ভোটে যত জন আপকে ভোট দিয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৮.৫ শতাংশ কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়ার পক্ষে রায় দিয়েছে। তার মানে বাকি ৯১.৫ শতাংশ এই রায়ের পরিপন্থী। নিজেদের ভোটারদের নব্বই শতাংশের বেশি মানুষের রায়কে উপেক্ষা করেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার গড়েছেন।
মোদী-ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষি লেখি বলেন, “কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি আজকাল সব বিষয়েই একই সুরে কথা বলছে। একই লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। তা হল নরেন্দ্র মোদীর উত্থানকে যে কোনও মূল্যে প্রতিহত করা।” লেখির মতে, “দিল্লিতে নিজেদের ভোটারদের নব্বই শতাংশের বেশি মানুষ যেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়ার বিপক্ষে ছিলেন, সেটি অগ্রাহ্য করেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লিতে সরকার গড়েছেন।” নরেন্দ্র মোদী এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে আপ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু যে ভাবে দিল্লিতে সরকার গড়ে রাতারাতি জনমুখী পদক্ষেপকে পুঁজি করে লোকসভায় ঝাঁপাতে চাইছে আপ, সেটি কপালে ভাঁজ ফেলেছে বিজেপি নেতাদের। তাই মোদী নিজে কিছু না বললেও নিত্যদিন আপ ও কংগ্রেসের আঁতাঁতকে নানা ভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন মোদীর সেনাপতিরা।
সপ্তাহের গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সাংবাদিক সম্মেলনে কাশ্মীর সমস্যার প্রায় সমাধান হওয়ার কথা বলায় অরুণ জেটলি পাল্টা আক্রমণে নেমেছিলেন। এ বারে আপের নেতা প্রশান্ত ভূষণ প্রায় একই সুরে কাশ্মীরের বিতর্ক উস্কে দেওয়ায় বিজেপি নেতারা উভয়ের মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন। বিজেপির প্রশ্ন, কংগ্রেস ও আপ প্রায় সব বিষয়েই একই মত পোষণ করছে। যখন কাশ্মীরে কোনও ঘটনা ঘটছে না, কোথাও কোনও গতিবিধি নেই, সেই সময় মনমোহন সিংহ থেকে প্রশান্ত ভূষণ কেন একই সুরে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছেন?
বিজেপি নেতৃত্ব নিশ্চিত, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন কমাতেই কংগ্রেস আপকে ঘিরে জনতার আবেগ কাজে লাগাতে চাইছে। আপ নিজেরা বেশি আসন নিয়ে আসতে না পারুক, অন্তত বিজেপির ভোটে থাবা বসাবে। কংগ্রেস চায়, তারা ফের কেন্দ্রে সরকার যদি গড়তে না পারুক, অন্তত মোদী যেন না পারেন।
|